3:12 pm , September 15, 2020
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ একের পর এক প্রাকৃতিক দূর্যোগের পরে করোনা সংকটের মধ্যেও কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখতে নিরলশ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষিযোদ্ধারা। বিগত রবি মৌসুমে বোরো, গম, তরমুজ ও শাক-সবজি উৎপাদনে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকগন। গত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর পরে মে মাসে আরো ভয়াল ঝড় ‘আম্পান’ দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে দিলেও দমে থাকেনি এ অঞ্চলের কৃষকগন। উপরন্তু এবার ভরা বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে কাঙ্খিত বৃষ্টিও হয়নি। অথচ বুলবুল ও আম্পানে ভর করে অসময়ের অতিবর্ষণ কৃষি ব্যবস্থাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। এমনকি ভাদ্রের বড় অমবশ্যায় ভর করে গত মাসে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারের সাথে উজানের ঢলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে উঠতি আউশ ও রোপা আমন সহ বীজতলার পুরোটাই প্লাবিত হয়। এমনকি গত মার্চের শেষ ভাগ থেকে করোনা সংকট কৃষি ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ বিরূপ প্রভাব ফেললেও দমে থাকেননি দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকগন।
গত রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় সোয়া লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের মধ্যেই আউশ আবাদে মাঠে নামেন কৃষকগন। সারাদেশে ১৩ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টরের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলেই প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ করেছেন এ অঞ্চলের কৃষকগন। উৎপাদন লক্ষ ছিল ৬ লাখ ৬ হাজার টন চাল। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ জমির আউশ ধান কর্তন শেষ হয়েছে। শুধুমাত্র বরগুনা জেলার কিছু আউশ এখনো মাঠে । যা আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কৃষকের ঘরে উঠবে। তবে গত মাসের ভয়াবহ প্লাবনের কারনে আউশের উৎপাদন কিছুটা ব্যহত হবার আশংকা করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
এরইমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদের মৌশুমও শুরু হয়ে গেছে। চলতি মৌশুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ৫ লাখ ১৫ হাজার ৫২২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন কৃষকগন। গত মাসের ভয়াল প্লাবনে দক্ষিণাঞ্চলে রোপনকৃত প্রায় সোয়া লাখ হেক্টরের রোপা আমন প্লাবিত হয়েছিল। কিন্তু পানি সরে যাবার পরে বৃষ্টির কারনে নিমজ্জিত ধান আবার সজিব হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৩ ভাগ জমিতে আমনের রোপন সম্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌছতে এখন প্রতিদিন সকালÑসন্ধা কাজ করছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকগন।
চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্য অর্জিত হলে দক্ষিণাঞ্চলে এক বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে বলে আশাবাদী কৃষিবীদগন। বিগত বছরগুলোতে দক্ষিণাঞ্চল খাদ্য উৎপাদনে ৭ লক্ষাধীক টন উদ্বৃত্ব এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে কৃষি মন্ত্রনালয়ে। দুটি ঘূর্ণিঝড়ের পরে গত মাসের প্লাবন ও চলমান করোনা সংকটে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে কোন বিরূপ প্রভাব ফেলবে না বলেই আশাবাদী কৃষিবীদগন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কৃষিই দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হিসেব কাজ করে আসছে। যে কোন রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক সংকটে কৃষি অর্থনীতিই দক্ষিণাঞ্চলের অর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
এবারের একাধীক প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও করোনা সংকটেও মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের অপার দান কৃষি লালন করছে গোটা দক্ষিনের সমাজকে। মন্তব্য কৃষি অর্থনীতিবীদদের। তবে যেসব কৃষিযোদ্ধাগন কৃষিকে লালন করছেন, উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা সহ তাদের জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদানে যথাযথ সহায়তা প্রদানে সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন মহলটি। গত মাসের প্লাবনের পরে কৃষিক্ষেত্রে কিছু প্রনোদনা প্রদানের বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।