3:26 pm , September 14, 2020
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে নেয়া হয় না কোন ব্যবস্থা
হেলাল উদ্দিন ॥ সারাদেশের সাথে বরিশাল বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেনীর ভর্তি কার্যক্রম। সেই সাথে যথারীতি উঠেছে কলেজগুলোর বিরুদ্ধে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ। প্রতি বছরই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ উঠে। শুধু মৌখিক ভাবে নয় প্রমানসহ তোলা হয় এ অভিযোগ। কিন্তু অভিযুক্ত কলেজগুলোর বিরুদ্ধে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে নেয়া হয় না কোন ব্যবস্থা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এমন কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের কার্যক্রম। আর শিক্ষার্থী বা অভিভাবকরাও অযথা ঝামেলায় না গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করে কলেজের বেধে দেয়া টাকা দিয়েই ভর্তি করে সন্তানদের। যে কারনে বোর্ড আর এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয় না। যে কারনে প্রতিবছরই
নিজেদের ইচ্ছামত ভর্তিতে বাড়তি ফি আদায় করছে বেশীর ভাগ সরকারী বেসরকারী কলেজ। তথ্য মতে, গত রবিবার থেকে বরিশাল বোর্ডের অধীনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম। এবার ভর্তিতে সব বিভাগের ক্ষেত্রে (বিজ্ঞান, বানিজ্য এবং মানবিক) সিটি করপোরেশন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার টাকা, জেলা পর্যায়ের কলেজের ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ের ক্ষেত্রে ১ হাজার করে নির্ধারন করেছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু কলেজগুলো বোর্ড নির্ধারিত ফি তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। নগরীর অমৃত লাল দে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সরকার কিংবা বোর্ড নির্ধারিত ৩ হাজার টাকার স্থলে আলাদা দুটি ভাউচারের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। শুধু অমৃতলাল দে কলেজই নয় নগরীর সকল সরকারী বেসরকারী কলেজে নেয়া হচ্ছে বাড়তি অর্থ। বোর্ড নির্ধারিত অর্থে ভর্তি নেয়া হচ্ছে এরকম নজির কোন কলেজ থেকেই পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অমৃত লাল দে কলেজ ভর্তি হওয়া একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা জানিয়েছেন, আমরা যতদূর জানি সরকার কিংবা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ভর্তির জন্য সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এই কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে আলাদা দুটি ভাউচারের মাধ্যমে সাত হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। তবে কোন কোন খাতে এই পরিমাণ নেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। ভাউচার দুটির একটিতে লেখা হয়েছে কলেজের পাওনা দুই হাজার টাকা। আর একটি লেখা রয়েছে ভর্তি ফি ও সেশনচার্জ বাবদ ৫ হাজার টাকা। অভিভাকরা বলেন, যে ছাত্র এখন কলেজে ভর্তি হলো তার কাছে দুই হাজার টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের পাওনা হয় কিভাবে আবার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র পাল বলেন, নিয়মের মধ্যে থেকেই বাড়তি ২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত নিয়মে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি ৩ হাজার টাকা রাখা হচ্ছে। এর বাইরে বেসরকারি কলেজের জন্য প্রদত্ত নিয়মানুযায়ী উন্নয়ন ফান্ডে নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার টাকা এবং চলতি শিক্ষাবর্ষের জুলাই ও আগস্ট মাসের বেতন ও ফরম বাবদ ১ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হচ্ছে, তা সিট প্রাপ্তির মাধ্যমে পরবর্তীতে ঠিক করে দেওয়া হবে। এতে সমস্যা হবে না, এছাড়া অনেক গরিব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আমরা কম টাকাও নিচ্ছি। এ বিষয়ে আলাপ কালে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বেশী অর্থ নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আমি এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তারপরও গতকাল অমৃতলাল দে কলেজের গেটে দাড়িয়েছিলাম এবং পরিচয় গোপন করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তারা অনেকেই বাড়তি অর্থ আদায়ের কথা বলেছে। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে রাজি নন। এ ক্ষেত্রে বোর্ডের কি করনীয় আছে। কারন এ বিষয়ে মামলা পর্যন্ত হবে। সুনিদিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ব্যবস্থা গ্রহন করা অসম্ভব। তিনি অপরাধীদের ধরার জন্য নিরব না থেকে অভিযোগ করার জন্য শিক্ষার্থী অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানান। উল্লেখ্য এ বছর বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ৭৮ হাজার ৫৬২ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। সেখান থেকে ৬৫ হাজার ৩৩৮ জনে শিক্ষার্থী ভর্তির নিশ্চিয়ন পেয়েছে। ২০২০ সালে এ বোর্ড থেকে ৮৯ হাজার ৬৩৪ জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়। এবার বোর্ডে এসএসসিতে মোট আসন সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি।