3:56 pm , September 13, 2020
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর বাসিন্দাদের অন্যতম পছন্দের ভ্রমনের স্থান ত্রিশ গোডাউন নদীর পাড় দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। নানা ধরনের খাবারের অস্থায়ী দোকান বসিয়ে প্রতিদিনই এই প্রতিযোগিতায় আটকে যাচ্ছে ত্রিশ গোডাউন নদী পাড়ের একটি বিশাল অংশ। শহর রক্ষা বাধ নির্মানের পর নদী পাড়ে কিছু সংখ্যক ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান থাকলেও এখন সে সংখ্যা ছাড়িয়েছে অর্ধশত। কেউ বিসিসির কর্মকর্তাদের আত্মীয় আবার কেউবা প্রভাবশালীদের সজ্জন পরিচয়ে প্রতিদিন নদীর পাড়ে নানা ধরনের অস্থায়ী খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেন। স্থানীয়দের অভিযোগ রাতের আধারে দলবল নিয়ে এসে এখানে দোকান স্থাপন করে নিচ্ছেন যে যার মতন করে। তাদের বাধা দেয়া হলে ছাত্রলীগ নেতা সহ বিভিন্ন প্রভাবশালীদের ফোনে ধরিয়ে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে যেখানে ইচ্ছে তারা তাদের দোকান বসিয়ে যাচ্ছে। ১/২ বছর পূর্বেও হাতে গোনা বিসিসির মৌখিক অনুমতি প্রাপ্ত কিছু অস্থায়ী দোকান ছিল নদীর পাড়ে। তবে বিগত কয়েক মাসে এই দোকানের পরিমান বেড়েছে। গত মাসেই ৩/৪ টি নতুন দোকান নদী পাড় এর ঠিক প্রবেশ পথ আটকে সহ বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে। অনেকেই দোকান বসিয়ে যাচ্ছে শুধু যায়গা দখলের উদ্দেশ্যে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অভিযোগকারীরা। কারন এ সকল দোকান বসানো হলেও তা বন্ধই পড়ে থাকছে। কোন ধরনের খাবার বা মালামাল বিক্রি হচ্ছে না সে দোকনগুলোতে। কেউ কেউ বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিক দোকান বসিয়ে তা ভাড়া দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দোকানের পরিমান প্রয়োজনের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় নদী পাড়ে ভ্রমনে আসা বাসিন্দারা এখন সুবিধা কম অসুবিধায় পড়ছেন বলে জানিয়েছেন। অতিরিক্ত দোকানের কারনে নদী পাড়ে ময়লা আবর্জনার পরিমান বাড়ছে, চলাচলের প্রতিবন্ধকতা হওয়াসহ হচ্ছে নানান ধরনের সমস্যা বলেও অভিযোগ তাদের। তবে এমন পরিস্থিতি যেনে শুনেও অনেকটাই চুপচাপ বিসিসির এসংক্রান্ত কর্তব্যরতরা। তাদের ভাষায় লিখিত নয় মৌখিক ভাবে অনুমিত স্থানীয় বাসিন্দাদের কিছু দোকান রয়েছে যা ট্রেড লাইসেন্সকৃত। এর বাইরে কিছু দোকান রয়েছে যা অভিযোগ আমলে নিয়ে অপসারনের ব্যবস্থা করা হবে।
সূত্র মতে, নগরীর অন্যতম পছন্দের ভ্রমনের স্থান কীর্তনখোলা নদী পাড়ের ত্রিশ গোডাউন এলাকাটি। নগরীর স্থানীয় বাসিন্দারা সর্বদাই এই স্থানে যাতায়াত এবং অবসর সময় যাপন করে। পূর্বে এখানে আসা বাসিন্দাদের জন্য দুটি দোকান ছিল। এর মধ্যে একটি স্থানীয় লোকমান নামের এক যুবকের। অপরটি পরিচালিত হতো আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এর দেয়া লিজের একটি স্টলের মাধ্যমে। এর পর ২০১৬ সালে ৩০ কোটি টাকার বরাদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয় শহর রক্ষা বাধ নির্মানের কাজ। কিছু জটিলতায় কাজ পরিপূর্নতা না পেলেও পাল্টে যায় পূর্বের সেই ত্রিশ গোডাউনের চেহারা। নদীর পাড় ধরে দীর্ঘ এই বাধ ও সড়ক এখানে ভ্রমনে আসা বাসিন্দাদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রতিদিন বাড়তে শুরু করে আসা মানুষের সংখ্যা। নগরীর বাসিন্দাদের পছন্দের এই স্থানের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। বিভিন্ন উৎসব ও ছুটি দিনে নদীর পাড়ে ভীর জমতে শুরু করে হাজারো দর্শনার্থীর। এর পর থেকেই শুরু হয় নদীর পাড়ে নানা ধরনের অস্থায়ী খাবারের দোকান বসানো। শুরুর দিকে কয়েকটি দোকান বসিয়ে স্থানীয়রাই নানা ধরনের খাবার বিক্রি শুরু করে। এর পর লাভের আশায় একের পর এক দোকান বাড়তে থাকে। প্রত্যেকটি দোকান তাদের পাশের অনেকটা করে যায়গা ক্রেতা বসানোর জন্য আটকানো শুরু করে প্লাস্টিকের চেয়ার বসিয়ে। এক সময়ে এই দোকানের সংখ্যা প্রায় ৩০ টির মত হলে বিসিসি থেকে একটি মৌখিক অনুমতি দেয়া হয় বলে জানায় স্থানীয় এক দোকানি। সে জানায়, বিসিটির হাট বাজার শাখার এক কর্মকর্তা তাদের মোট ৩০ টি দোকান নদীর পাড়ে সর্বোচ্চ বসানোর কথা বলে যায়। এই ৩০ টির প্রত্যেকটি ট্রেড লাইসেন্স করা। এমন নিয়ম মেনেই বিগত সময়ে তারা তাদের দোকান গুলো পরিচালনা করে আসছিলেন বলে ওই দোকানিরা জানায়। তাদের দোকান পরিচালনা করতে কোন প্রতিবন্ধকতা হতো না। অল্প সংখ্যার দোকান থেকে নদীর পাড়ে আবর্জনা যেমন কম হতো তেমনি কোন দর্শনার্থীর চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়নি। ক্রেতারাও উপভোগ করতেন এমন পরিবেশ। কিন্তু বিশেষ করে বিগত কয়েক মাসে পূর্বের পরিস্থিতি পুরো পাল্টে গেছে। মৌখিক অনুমতির সংখ্যার বাইরেও এক এক করে কমপক্ষে ১৫/২০ টি দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকান গুলোর অধিকাংশই বসানো হয়েছে শুধুমাত্র নদীর পাড় দখলের জন্য। সরেজমিনে দেখা গেছে অতিরিক্ত সংখ্যার এই দোকানগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু খোলা রয়েছে, তারা চেয়ার বসিয়ে দখল করে আছে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত স্থান। ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা হচ্ছে না নিয়মিত। দোকানের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় এখন তাদের খাবারে মানেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দর্শনার্থীরা। তারা জানিয়েছে, কিছু দোকান অবশ্যই এমন একটি স্থানে থাকাটা স্বাভাবিক, তবে এখন যে পরিমানে অস্থায়ী দোকান রয়েছে তা আর ভালো লাগার পর্যায়ে নেই। অতিরিক্ত এই দোকানগুলো নদী পাড়ের পরিবেশ নস্ট করছে এবং দর্শনার্থীদের অসুবিধার কারনে পরিনত হয়েছে। পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা আসমা আক্তার নামের নারী এমন বিষয় জানিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার আহবান করেছেন বিসিসির প্রতি।
এ বিষয়ে বিসিসির হাট বাজার শাখার একটি সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ ৩০ টি দোকান পরিচালনার মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছিল নদীর পাড়ে। তবে অবশ্যই তা বিসিসির ট্রেড লাইসেন্সকৃত হতে হবে। এছাড়া তাদের মানতে হবে সকল ধরনের স্বাথ্যবিধি সহ পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক নিয়মাবলি। এমন ভাবেই চলছিল। তবে বর্তমানে দোকান বসিয়ে দখলের বিষইটি তাদের জানা নেই। বিষয়টি পরিদর্শন করে ব্যাবস্থা নেয়া কথা জানানো হয়।