3:27 pm , September 7, 2020
শহিদুল ইসলাম জামাল, চরফ্যাসন ॥ চরফ্যাসন উপজেলা সদরে ১শ’ শয্যার সরকারি হাসপাতালের জরুরী বিভাগসহ রোগীদের শয্যাগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শতাধিক দালাল যুবক-যুবতী। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা রোগীকে উন্নত চিকিৎসা আর কমমূল্যে নির্ভুল পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর ক্লিনিকগুলোতে বাগিয়ে নিতে তৎপর থাকেন তারা। সরকারি হাসপাতালে ওৎপেতে থাকা এসব দালাল রোগী বাগানোর পাশাপাশি রোগীদের ঔষধ, মোবাইল, টাকাসহ নানান জিনিসপত্র চুরি করছে। সম্প্রতি দুই দালাল রোগীর স্বজন শিশুকে সরকারি হাসপাতালের নির্জনকক্ষে নিয়ে ধর্ষণ চেষ্টা করেছে। মূলত সরকারি হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে ওঠা বৈধ-অবৈধ ৩৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো রোগী পাওয়ার জন্য কমিশনের বিনিময়ে এসব দালাল পুষছেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর ক্লিনিকগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠায় সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব দালালদের সামনে অসহায় হয়ে পড়েছেন। ফলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আছেন নিত্যদূর্ভোগ আর বিড়ম্বনার মধ্যে। অনুসন্ধানে জানাগেছে, চরফ্যাসনে ২৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ৬টি প্রাইভেট ক্লিনিক আছে। যেগুলোর মধ্যে ৯টি অনুমোদনহীন। বাকী ২০টি ডায়গনিস্টিক সেন্টারের এর মধ্যে কোনটিই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছেনা। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোর মধ্যে ৬টি প্রত্যন্ত হাটবাজারে এবং ২৯টি উপজেলা সদরের হাসপাতাল সড়কে গড়ে উঠেছে। ১শ’ শয্যার উপজেলা সরকারী হাসপাতালের ২শ’ গজের মধ্যে এবং হাসপাতাল সড়কের দু’পাশ জুড়ে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় সরকারি হাসপাতালগামী রোগীরা প্রায়ই গন্তব্য পর্যন্ত পৌছার আগেই দালালদের বহুমুখী টানাটানির মধ্যে পড়ে। টানাটানি শেষে কোন রোগী সরকারি হাসপাতাল পর্যন্ত পৌছলেও সেখানে ওৎপেতে থাকেন ঝাঁকে ঝাঁকে দালাল। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের বিভ্রান্ত করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এরপর গ্রামের সহজ সরল রোগিদের প্যাথলজি পরীক্ষা ও আধুনিক চিকিৎসার নামে সঠিক ভাবে প্যাথলজি পরিক্ষা না করেই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার আভিযোগ রয়েছে। প্রত্যেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অনেক চিকিৎসকও দালালরা এসব প্যাথলজি থেকে কমিশন পেয়ে থাকেন বলে জানাগেছে।সরকারী হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠা এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোর বেশির ভাগই নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম নীতি।নেই দক্ষ লোকবল ও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি। আবেদন করেই আধাপাকা ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার । বসানো হয়েছে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনসহ কিছু যন্ত্রপাতি। অদক্ষ কিছু টেকনেশিয়ান দিয়ে কারানো হয় পরীক্ষা নিরীক্ষা। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ভুল ও ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। সম্প্রতি সময়ে একজন শিশু রোগিকে ভুল এবং ভুয়া রির্পোট দিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে হাসপাতাল রোডে গড়ে উঠা জনসেবা ডায়াগনিস্টিক সেন্টার মালিকের ৫০ হাজার টাকা জড়িমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। কতিপয় প্রভাবশালী চিকিৎসকের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ঔষাধের দোকানে নিয়োজিত দালাল চক্রের সদস্যরা ১শ’ শয্যার সরকারী হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কাজে সক্রিয় থাকে। প্রত্যন্তঞ্চলের সাধারন রোগিরা প্রথমেই ১শ’ শয্যার সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাই এসব দালাল চক্র সরকারী হাসপাতালকে ঘিরে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেন। এসব দালালের সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকারাও জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ৬টি প্রাইভেট ক্লিনিকের মধ্যে মাত্র দুই একটি ক্লিনিক ১০ শয্যার অনুমোতি লোকবল নিয়ে সঠিক ভাবে পরিচালিত হলেও অপর প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে তুলেছেন ২০/ ৩০ শয্যার প্রাইভেট ক্লিনিক। সচেতন মহল জানান, এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুয়ায়ী অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি নেই। তারপরও তারা ক্লিনিক ও প্যথলজি ল্যাব চালিয়ে যাচ্ছে। পৌর কাউন্সেলর আকবর হাওলাদার জানান, ডায়াগনিস্টিক সেন্টার ও ঔষাধের দোকনে নিয়োজিত এসব দালাল চক্রের সদস্যরা রোগীদের নানা কৌশলে উন্নত চিকিৎসার লোভ দেখিয়ে হাসপাতাল চত্বর থেকে বাইরে এনে প্রাইভেট প্যাথলজি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। অথচ হাসপাতালে এর চেয়ে ভালো প্যাথলজি পরীক্ষা হয়ে থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও চিকিৎসকদের ঘটনাটি জানলেও কোনো কথা বলেন না। কারণ পরে এসব চিকিৎসকই প্রাইভেট ক্লিনিকে তাদের চিকিৎসা দিয়ে উচ্চহারে ফিস ও পরীক্ষার কমিশন হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। ঘটনাটি বারবার স্বাস্থ্য প্রশাসনকে জানালেও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফাস্ট কেয়ার মেডিকেল সভির্সেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিল্লাত এলাহী জানান, আমার জানামতে ডায়াগনিস্টিক সেন্টার কোন কর্মচারী দালালির সাথে জড়িত নয়। কিছু ভাষমান লোক ডায়াগনিস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের নামে দালালি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নামধারী দালালদের প্রতিহত করার জন্য মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। চরফ্যাসন হাসপাতালে টিএইচও ডাঃ শোভন বসাক দালাল চক্রের দৌরাতেœ্যর কথা স্বীকার করেন। তার দাবি, হাসপাতাল চত্তরে দালালদের উৎপাত ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন ও চরফ্যাসন থানা পুলিশকে চিঠি দিয়ে অগত করা হয়েছে। হাসপাতাল চত্তর থেকে দালাল নিমূলের চেষ্টা চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন জানান, ইতিপূর্বে একাধিক দালালকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডিত করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে হাসপাতাল চত্তর থেকে দালাল নিমূল কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।