3:07 pm , September 7, 2020
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দলিল লেখক রিয়াজ হত্যা মামলার প্রকৃত আসামীদের রক্ষার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ এনে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেছে মামলার বাদীপক্ষ। বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ করেন বাদী নিহতের বড় ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন। লিখিত অভিযোগে তিনি হত্যার শিকার দলিল লেখকের সহকারী ও তার স্ত্রীর পরকিয়া প্রেমিক মাসুম হোসেন দফাদারকে গ্রেপ্তার করে সঠিকভাবে মামলার তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবী করেছেন।
লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে বাদী মনিরুল ইসলাম রিপন বলেন, রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে হত্যাকারী তার পরকিয়া প্রেমিক মাসুম হোসেন দফাদারকে এখন পর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অন্যদিকে বর্তমান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সগির হোসেন কয়েকদিন পূর্বে ঘটনার দেড় বছর পর তিন ছিচকে মোবাইল চোর আটক করে। পরে ওই তিনজনকে আদালতে হাজির করে রিয়াজ হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি নেয়। আদালতে তিন চোরের দেয়া জবানবন্দি তিন রকমের। কারো সাথে কারো কথার কোন মিল নেই। এতে পুরো ঘটনাটি সাজানো ও রহস্যজনক হিসেবে ফুটে উঠেছে। সেই সাথে হত্যা মামলাটি ভিন্নখাতে নেয়ার পায়তারা চলছে বলে ধারনা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে বাদী বলেন, ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মামা মোঃ আব্দুল হাই মন্টু ও ভাগিনা মোঃ আসিফ হাওলাদারকে ডিবি অফিসে ডেকে নেয়। পরে সে আমিনা আক্তার লিজার মাল-পত্র বুঝিয়ে দেয়া সহ প্রিজন সেলে থাকাকালীন জন্ম দেয়া কণ্যা সন্তানের ভরন পোষন দিতে বলেন।
এ বিষয়ে বাদী বলেন, ভাই রেজাউল করিম রিয়াজ প্রথম স্ত্রীর সাথে ১০ বছর সংসার করেছেন। কিন্তু তাদের কোন সন্তান ছিল না। এমনকি দ্বিতীয় স্ত্রী লিজার সাথে ৪ বছর সংসার করলেও কোন সন্তান ছিল নেই। তাই আমরা মনে করি জন্ম নেয়া এ সন্তান রিয়াজের ঔরসজাত নয়। এই সন্তানের দায় গ্রহন করবেন না জানিয়ে সন্তানের জন্ম পরিচয় নিশ্চিতের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার দাবী করেছেন।
বাদী মনিরুল ইসলাম রিপন আরো বলেন, আমিনা আক্তার লিজা জন্ম নেয়া সন্তানের দোহাই দিয়ে ৮ মাস পূর্বে আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। কিন্তু কখনও সে দাবি করেনি পুলিশ নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি নিয়েছে। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা তিন ছিচকে মোবাইল চোরের কাছ থেকে জবানবন্দি নেয়ার পর থেকে লিজা দাবী করছে পুলিশ তাকে নির্যাতন করে জবানবন্দি আদায় করে নিয়েছিল। এতেই বিষয়টি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ পাচ্ছে বলেন বাদী।
অপরদিকে লিজা জামিনে এসে আমাকে (বাদী) ও পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও নগরীর বাজার রোডের হক মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে তার ভাগিনা আসিফকে লিজার ভাই ইমন মারধর করেছে বলে জানিয়েছেন বাদী। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অচিরেই মাসুমকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী করেছেন বাদী। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাদী মনিরুল ইসলামের ছোট ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম রুবেল, খালাতো ভাই শাখাওয়াত সিকদার, সিদ্দিক, ভাগিনা আসিফ হাওলাদার ও বাদীর স্ত্রী রেবেকো সুলতানা।
উল্লেখ্য ২০১৯ সালে ১৮ এপ্রিল মধ্য রাতে দলিল লেখক রেজাইল করিম রিয়াজকে নিজ শয়ন কক্ষে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই কক্ষে তার স্ত্রী লিজা ছিল। কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরের দিন ১৯ এপ্রিল রিয়াজের মরদেহ উদ্ধার করা সহ স্ত্রী লিজাকে গ্রেফতার করে।