2:02 pm , September 4, 2020
ভোলা, চরফ্যাশন, লালমোহন, তজুমদ্দিন প্রতিবেদক ॥ পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তার কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈষিক আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে। একেক বছরে একেক ধরণের আবহওায়া দেখছি। কোন বছরে বন্যা, কোন বছরে ঘূর্ণিঝড় বেশি হচ্ছে। তিনি বলেন, পুরো ভোলাই দ্বীপের ভেতরে, চারদিকে নদী ও সমুদ্র বেষ্টিত। ভোলার উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ভোলায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রকল্প রয়েছে। ভোলা শহরকে রক্ষার জন্য ইলিশা এলাকার ৩৪০ কোটি টাকার ব্লক বাঁধের কাজ চলছে। এছাড়া শিবপুর এলাকায় আরও একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভোলা সদরকে সুরক্ষিত করতে পারবো। আজ আমরা যে জায়গা পরিদর্শন করেছি সেখানে কিছু ভুলত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে। যেগুলো সংশোধন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রকৌশলীদের। শুক্রবার ভোলা সদেরর ইলিশাসহ দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাসন উপজেলায় চলমান বাঁধনির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন ও নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গত আম্ফানে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে ৮৯৬ কোটি, ১ হাজার ৫২ কোটি ও ১ হাজার ২৩২ কোটি তিনটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যা ইতিমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর পোল্ডার-৫ এ ৩ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকাতে ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকার বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্প রয়েছে, যেটা চলছে। এখানে ১৩৯ টি পোল্ডার রয়েছে, যারমধ্যে ১৭ টি পোল্ডারে হাত দেয়ার পরিকল্পনা আমরা করেছিলাম। কিন্তু জমি অধিগ্রহনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আপতত ১০ টি পোল্ডারের কাজ আমরা করছি। এরবাহিরে ওয়াল্ডব্যাংকের আর একটি সাহায্য নিয়ে বাদ দেয়া ৭ টিসহ আরো ২২ টি নিয়ে মোট ২৯ টি প্লোডারের জন্য আর একটি প্রকল্পের সমীক্ষা করা হচ্ছে। বাকীগুলোর কাজ পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে করা হবে। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রকল্পগুলো সময়সাপেক্ষের ব্যাপার। আজ নদীর তীর রক্ষায় বাধ নির্মানের কথা বললাম, কাল কাজ শুরু করে দিলাম তাহলে তা টিকবে না। কারণ এক এক নদীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট একেক রকম। যা আমাদের টেকনিক্যাল টিম এসে পর্যবেক্ষন করেন। আবার পরীক্ষাকালে একবার দেখে গেলেও হবে না। কারণ বর্ষা মৌসুমে নদীর চরিত্র একরকম, শুকনো মৌসুমে আবার আরেক রকম। একটা সমীক্ষা করে প্রকল্প করতে এক থেকে দেড়বছর সময় লাগে। কিন্তু আমরা তরিঘরি করে সংসদ সদস্যদের চাহিদার ওপর টিকতে না পেরে ৬ মাসে করি। পরে দেখা যায় ভূল হয় আর আপনারা বলেন পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় চুরি করেছে। কিন্তু পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের সক্ষমতা, কার্যক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে, তারা রাত-দিন কাজ করছে। আমরাও রাত-দিন কাজ করছি। কোথায় ভাঙ্গলে পরে সে খবর তাৎক্ষনিক আমরা অনলাইনে (হোয়াটস আপ গ্রুপ) পাচ্ছি। সেখানে কাজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ছবি ও তথ্য আমরা পাচ্ছি। এসময় তিনি মিডিয়ার সহযোগীতা কামনা করে বলেন, দয়াকরে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন না করে, জনগনকে ভয় না দেখিয়ে, ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করবেন। এতে আমাদের জন্য কাজ করতে সুবিধা হবে এবং যারা রাত দিন কাজ করেন তারা উৎসাহিত হবেন, এ দায়িত্ব আপনাদের। আমাদের প্রকৌশলীরা পরিবার-পরিজন রেখে করোনার মধ্যেও রাত-দিন দাড়িয়ে থেকে কাজ করেছেন। আপনারা উৎসাহ না দিলে তারা কাজ করবে কিভাবে। এ দেশটা আমাদের বঙ্গব্ন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার যে লক্ষ্যে পৌছাতে হলে আমাদের যেরকম দরকার, আপনাদেরও সেরকম দরকার। আপনারা যতো ভালো সংবাদ পরিবেশন করবেন, ততোই প্রকৌশলীরা উৎসাহিত হবে। আমাদের সহযোগীতা করুন, সঠিক তথ্য দিন। ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের দেশে বাধের ওপরও মানুষ বসবাস করে। সেখানে ঘরবাড়ি করে, রান্না-বান্না করে। সেখানে ইঁদুরের বাসা হয়, নীচ থেকে ইঁদুর গর্ত করে। তখন বাধ দেখে ওপর থেকে মনে হয় ঠিক আছে, কিন্তু নীচ থেকে ইঁদুরের করা গর্তের কারণে বাধটি হঠাৎ করে ধ্বসে গেছে। তাই বাধের ওপর বসবাস করাটাতে নিরুৎসাহিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্লান অনুযায়ী আমরা ৬৪ জেলায় খাল খনন করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বড় নদীগুলোকে ছোট করে নিয়ে আসবো, অর্থাৎ প্রস্থে ৯-১২ কিলোমিটারের নদী গুলোকে ৫ থেকে ৭ কিলোমিটারে নিয়ে আসবো। ড্রেজিং করে মাটিটাকে রিক্লেইম করে যে এলাকা বাড়াবো সেটাকে ফসলের জন্য রাখবো বসতির জন্য নয়। ফ্লাটপ্লেইনের বাইরে আমরা বাধ দিবো এবং বনায়ন করবো। আম্ফানে দেখেছি, যেখানে নদীর তীর গাছ ছিলো সেখানে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে, যেখানে গাছ ছিলোনা সেখানে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করেছি দেখেই আজ আমরা সাবলম্বীর পথে যাচ্ছি বলেই, বড় বড় প্রকল্প হাতে নিতে পারছি। অতীতে কোন সরকার এতো বড় বড় প্রকল্প করতে পারেনি। সকলে মিলে কাজ করলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো। বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোর প্রসঙ্গে বলেন, উপকূলীয় এলাকাতে আগের বাধগুলো ৬০-৮০ এর দশকের নিয়মে তৈরি। তখন ৪ মিটার বা ১২ ফিট উচ্চতা ছিলো। এরপর আইলা, ফনি, বুলবুল, আম্পানের সময় আমরা দেখেছি জলোচ্ছাস হয়েছে তখন বাধের ওপর দিয়ে পানি যেতে দেখেছি। এখন প্রকল্পগুলো রিভাইজ করা হচ্ছে। বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোর জন্য সমীক্ষা চলছে, যা শেষ হলে উচ্চতা বাড়িয়ে ৬ মিটার অর্থাৎ ১৮ ফুট করা হবে। নতুন যেগুলো করা হচ্ছে সেগুলোর উচ্চতা বাড়ানো হচ্ছে, আগেরগুলো নিয়েও পরিকল্পনা রয়েছে। শুক্রবার সকালে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে শুরু করে দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন তজুমদ্দিন ও চরফ্যাসন উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় চলমান বাঁধ নির্মাণ কাজ এবং নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন স্পটে পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এসময় ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুর রহমানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।