দলিল লেখক রিয়াজ হত্যা নিয়ে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা দলিল লেখক রিয়াজ হত্যা নিয়ে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা - ajkerparibartan.com
দলিল লেখক রিয়াজ হত্যা নিয়ে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা

3:15 pm , September 3, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর গ্রামে নিজ বসতঘরে খুন হয় দলিল লেখক রিয়াজ। কিন্তু গত দেড় বছরেও আসল খুনিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এই মামলাটি নিয়ে বর্তমানে চলছে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা। বেশ কয়েক বার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হলেও মামলার আসল রহস্য রয়ে গেছে অধরা। অভিযোগ উঠেছে পুলিশ আর্থিক সুবিধা নিয়ে মূল আসামীদের বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। যদিও পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান এই হত্যা মামলার আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করার কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি পুলিশ তিন ছিচকে চোর ধরে স্বীকারোক্তি নেয়ায় মামলাটি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। বাদী পক্ষের দাবী পুলিশ মূল আসামী নিহত রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আকতার লিজার পরকীয়া প্রেমিক মাসুমকে ইচ্ছে করেই আটক করছেনা। উল্টো মাসুম ও লিজাকে এই মামলার অভিযোগ থেকে বাঁচাতে একেক সময় একেক নাটক মঞ্চস্থ করছে। হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর পরই পুলিশ প্রথমে নিহতের স্ত্রী লিজাকে গ্রেপ্তার করে। মামলা দায়েরের পর প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন কোতোয়ালী মডেল থানার উপ পরিদর্শক মো. বশির। ওই বছরের ২০ এপ্রিল মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আনিসুজ্জামানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন লিজা। ওই সময়ে লিজার জবানবন্দী অনুযায়ী, রিয়াজের সহকর্মী মাসুমের সঙ্গে পরকিয়া প্রেম ছিল লিজার। ঘটনার দিন রাতে মাসুম তার এক সহযোগী নিয়ে লিজার সহযোগীতায় রিয়াজের ঘরে ঢুকে মাচায় পালিয়ে থাকে। রিয়াজ ঘুমিয়ে পড়লে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে রিয়াজকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় লিজা স্বীকার করে তাদের পরিকল্পনায়ই খুন করা হয় রিয়াজকে। কারণ রিয়াজের নগদ অনেক অর্থ রয়েছে। অর্থ আত্মসাৎ করতেই রিয়াজকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা বশির মামলাটি নিয়ে গড়িমসি করলে পরবর্তীতে মামলাটি একই থানার উপ পরিদর্শক ফিরোজ আল মামুনের উপর ন্যাস্ত করা হয়। কিন্তু তিনিও বেশিদূর এগুতে পারেননি। মামলার তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ছগীর হোসেন গত ১৪ আগষ্ট বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে একটি চুরি মামলায় ওই এলাকার জলিল সিকদার (২৮) নামক এক যুবককে গ্রেফতার করেন। তার স্বীকারোক্তী অনুযায়ী ঢাকা থেকে রায়হান চৌকিদার (২০) এবং শাকিল হাওলাদার (২০) নামক আরও দুই যুককে গ্রেফতার করেন। এর পরই মামলাটি নিয়ে চোর-পুলিশ খেলার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের ভাষ্য ‘গত ২৮ আগষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে রিয়াজকে হত্যার কথা স্বীকার করে ওই তিন চোর জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা ছগির। প্রশ্ন উঠেছে এখানেই। কারণ হত্যার ঘটনায় শুরুতেই দায় স্বীকার করে রিয়াজের স্ত্রী জবানবন্দী দিয়েছেন। লিজা বলেছে তার (লিজা) পরিকল্পনায় পরকীয়া প্রেমিক মাসুমের যোগসাজশে রিয়াজকে হত্যা করা হয়। সেখানে হঠাৎ করে তিন চোর কিভাবে স্বীকারোক্তি দিলো তারা রিয়াজকে হত্যা করেছে? একটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় একাধিক তদন্ত কর্মকর্তার পৃথক তদন্ত ও গ্রেফতারের পর আদালতে পরস্পর বিরোধী জবানবন্দী দেয়ায় পুলিশের তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক ছগীর হোসেন বলেন, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে অধিকতর তদন্তের জন্য এ বছরের ২৩ ফেব্রয়ারী তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরিদর্শক ছগীর বলেন, তিনি বিগত তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর অনেক অসঙ্গতি দেখে ওই দুর্বল জায়গায়গুলোতে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেন। মামালার বাদী রিয়াজের ভাই রিপন বলেন, স্ত্রীর জবানবন্দীর পর এই ৩ জনের জবানবন্দী ও মূল আসামী গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়টি পুলিশের তদন্ত ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বলেন, স্ত্রীর জবানবন্দীতে খুনের সাথে এই ৩ জনের নাম তথা সংশ্লিষ্টার কথা বলেনি। তার প্রশ্ন এক ব্যক্তি দুই পক্ষের দ্বারা দুই বার খুন হয় কিভাবে। তিনি বলেন, প্রকৃত খুনীদের বাঁচাতে এটা স্পষ্ট নীল নকশা। বাদীর অভিযোগ মূল পরিকল্পনাকারী লিজা এখন জামিনে রয়েছে। এখন আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। আমার ভাইতো গেছে এখন আমার জীবন নিয়েও আমি শংকায়। এব্যপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, যেহেতু মামলাটির তদন্তে দুই ধরনের স্বীকারোক্তি উঠে এসেছে তাই সত্য উদঘাটনের জন্য একজন দক্ষ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে পাওয়া এ পর্যন্ত সকল তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে কোন কর্মকর্তা তদন্তে গাফেলতি বা অনিয়ম করেছেন কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT