2:56 pm , September 1, 2020
কুয়াকাটা প্রতিবেদক ॥ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্যের জন্য পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা ‘সাগর কন্যা নামে খ্যাতি লাভ করেছে দেশে বিদেশে। সময়ের ব্যবধানে, সাগর কন্যা’ কুয়াকাটা সৈকত আজ বালু ক্ষয়ের কবলে বিলুপ্তির পথে। অপার সৌর্ন্দযের লীলাভুমির ১৮কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত জুড়েই ছিল নৈসর্গিক সবুজের ছোয়া। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যভূমি ছিল আকর্ষনীয়। সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যভূমির সবুজ বন হারিয়ে গিয়ে ভূতুরে কুয়াকাটার সৃষ্টি হয়েছে। সৈকতের পুর্ব পশ্চিম জুড়ে দুই দিকেই ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। কুয়াকাটাকে রক্ষায় স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচী গ্রহন করলেও সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ মেয়াদি কোন উদ্যোগ নেই। পাউবো কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় স্বল্প মেয়াদী উদ্যোগ নিলেও তা যথেষ্ট নয় কুয়াকাটা সৈকতের জন্য। প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই প্রকল্প গ্রহন যে প্রকল্প কুয়াকাটা সৈকতের বালুক্ষয় বা ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী হবে। স্থানীয়দের সুত্রে জানা গেছে, গত ২০ বছরের ব্যবধানে প্রায় দেড় কিলোমিটার সৈকতের ভূ-ভাগ ও বিভিন্ন স্থাপনা বিলিন হয়ে গেছে সাগর গর্ভে। এর মধ্যে অন্যতম রেভিনিউ বোর্ডের ঐতিহ্যবাহী এস এ ডাকবাংলো, ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান, তালবাগান, শাল বাগান, ২ টি লেক, প্রাচীরঘেরা এলজিইডির বায়ো গ্যাস প্লান্ট কাম রেষ্ট হাউজ, জাতীয় উদ্যান, ঝাউবন, গঙ্গামতির লেক, লেম্বুরবনের একাংশ, ঝাউ বাগান সংলগ্ন বন বিভাগের স্থাপনা, ইকো পার্ক, শুঁটকি পল্লীর বৃহত্তম অংশ সহ অসংখ্য বাড়িঘর। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিম দিকের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সহ সবুজ বনাঞ্চল ঢেউয়ের তোড়ে বিলিন হয়ে গেছে। প্রতি বছরই দুর্যোগ ও অমাবস্যা ও পুর্নিমার জো-য়ের প্রভাবে সমুদ্রের খরস্রোত ও ঢেউয়ের ঝাপটায় ভূ-ভাগ ক্রমেই বিলীন হচ্ছে। জলবায়ূর বিরুপ প্রভাবে চলতি বর্ষা মৌসুমের গত অমাবশ্যার প্রভাবে স্থানীয়দের ভাষায় মনি অমাবশ্যার প্রভাবে তছনছ হয়ে গেছে সমুদ্র সৈকত এলাকা। সবুজ বনভূমি, আবাসিক হোটেলসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে। স্থানীয়দের মতে প্রায় ১ থেকে দেড়’শ ফুট ভূ-ভাগ ও সৈকতে থাকা শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বেড়ে ঢেউয়ের তীব্রতার কারনে বালু ক্ষয় হয়ে সৈকতে ব্যাপক ভাঙ্গনের শুরু হয়। প্রচন্ড ঢেউয়ের তোড়ে এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে কুয়াকাটা সৈকতের পাশে গড়ে ওঠা মসজিদ, মন্দির, সদ্য নির্মিত ট্যুরিজম পার্ক ও আবাসিক হোটেল মোটেল এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অচিরেই সৈকত এলাকার সরকারী বেসরকারী কাঁচা-পাকা স্থাপনা সহ কুয়াকাটার প্রধান বেড়িবাঁধ এবং দর্শনীয় স্থান গুলো থাকবে হুমকির মুখে। অস্বাভাবিক জোয়ারে সৈকতে থাকা বনবিভাগের কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছের গোড়া থেকে বালু সরে গিয়ে উপড়ে পড়ছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বনবিভাগের। কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন হোটেল সানরাইজের মালিক কেএম শাহজালাল মিয়া বলেন, ভাঙ্গনের তীব্রতা এতো বেশি ছিল যে বালুর নিচে থাকা সাবমেরিন ক্যাবলের অপটিক্যাল লাইন বের হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পাবলিক টয়লেট। শুধু সৈকত নয়। ঢেউয়ের ঝাপটায় বন্যানিয়ন্ত্রন বেড়িবাঁধও চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি বলেন, গত অমাবশ্যার জো-য়ের প্রভাবে সৈকতের কোল ঘেষে অবস্থিত তার মালিকানাধীণ সানরাইজ মার্কেট ভেঙ্গে যায়। এখন তিনি নিজ উদ্যোগে জিও ব্যাগ ফেলে বাকি অংশ টুকু রক্ষার চেষ্টা করছেন। ২৭ শে আগষ্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ’র নেতৃত্বে পাউবোর একটি প্রতিনিধি দল সৈকত ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় পাউবো কালাপাড়া সার্কেল এর নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, সৈকতের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের ২৭০ মিটার সৈকত প্রটেকশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভাঙন রোধে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে আপাতত ৩২’শ জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এ সপ্তাহেই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে। পরিদর্শনকালে প্রধান প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় একটি স্থায়ী প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে গোটা সৈকত রক্ষায় কাজ শুরু হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। ২৯ শে আগষ্ট (শনিবার) বিকালে কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক এমপি। পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙ্গন রোধে নদী ও সমুদ্র রক্ষায় নেদারল্যান্ডের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ইতিমধ্যে পাউবো’র সচিব ও মহাপরিচালকসহ একটি প্রতিনিধি দল নেদারল্যান্ড ভ্রমন করেছেন। একইভাবে ওই দেশের প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেঁকসই বেড়িবাঁধসহ সৈকত ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প গ্রহন হবে। তবে কবে নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে তা তিনি বলেননি। স্থানীয়দের দাবী বালু ক্ষয় বা ভাঙ্গন রুখতে না পারলে কুয়াকাটা সৈকতের অবশিষ্ঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে। প্রতিমন্ত্রীর সামনেই ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন সংগঠন সৈকত রক্ষায় মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে তারা প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। স্থানীয়দের দাবী শুধু পরিকল্পণা নয় দ্রুত বাস্তবায়ন চায় তারা। অন্যথায় সূর্যোদয় সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটা থেকে মূখ ফিরিয়ে নেবে পর্যটকরা।