3:36 pm , August 31, 2020
হেলাল উদ্দিন ॥ পুলিশের দুই গা না খেয়ে চোরেও সহজে স্বীকার করে না চুরির কথা। ঠিক এর বিপরীত ঘটনা মঞ্চস্থ হয়েছে একটি হত্যা মামলা কে ঘিরে। মামলার আসামীসহ সন্দেহভাজন যাকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে তার মুখ থেকেই বের হচ্ছে খুন করার সহজ স্বীকারোক্তি। বিষয়টি এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে খুনের দায় স্বীকার করলে হয়ত বিশেষ কোন পুরস্কার গাচ্ছিত রাখা আছে আসামীদের জন্য। বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই এলাকার বাসিন্দা দলিল লেখক রিয়াজ হত্যা মামলার কার্যক্রম নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এমন অবিশ^াস্য ও অগ্রহনযোগ্য ঘটনার। মামলায় মূল আসামী ৩ জন থাকলেও পুলিশের হাতে ধৃত এখন পর্যন্ত ৪ জন আসামী স্বীকার করেছেন খুন তথা খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা। সর্ব শেষ গত সপ্তাহে সন্দেহ ভাজন তালিকায় থাকা গ্রেফতার হওয়া ৩ জন স্বীকার করেছেন তারাই খুন করেছেন রিয়াজ কে। যদিও পুলিশের ভাষায় এই ৩ জন সামান্য ছিচকে চোর এবং মাদক সেবী। অথচ হত্যার পর পুলিশের হাতে আটক হওয়া রিয়াজের স্ত্রী আমেনা আক্তার লিজা আদালতে জবানবন্দী দিয়েছিলেন তার সহযোগীতায় পরকীয়া প্রেমিক তথা রিয়াজের সহকারী মাসুম খুন করে রিয়াজকে। স্ত্রীর ওই জবানবন্দীমূলক স্বীকারোক্তির এক বছরেরও বেশী সময় পার হলেও প্রধান আসামী গ্রেফতার না হওয়া এবং ৩ জন ছিচকে চোর ও মাদক সেবীকে খুনের দায়ে গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিয়ে মামলার সঠিক তদন্ত ও অগ্রগতি নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৯ সালে সংগঠিত ওই হত্যার ঘটনা বরিশালে চাঞ্চলের সৃষ্টি করলেও মামলার তদন্ত ও সার্বিক চিত্র নতুন চাঞ্চল্যতা তৈরী করেছে। মামালার বাদী রিয়াজের ভাই রিপন বলেন স্ত্রীর জবানবন্দীর পর এই ৩ জনের জবানবন্দী ও মূল আসামী গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়টি পুলিশের তদন্ত ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বলেন, স্ত্রীর জবানবন্দীতে খুনের সাথে এই ৩ জনের নাম তথা সংশ্লিষ্টতার কথা বলেনি। তার প্রশ্ন এক ব্যক্তি দুই পক্ষের দ্বারা দুই বার খুন হয় কিভাবে। তিনি বলেন, প্রকৃত খুনীদের বাঁচাতে এটা স্পষ্ট নীল নকশা। তিনি প্রত্যাশা করে বলেন আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত খুনীরা সনাক্ত হবেই। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী সায়েমুল আলম রিপন বলেন, খুনের দায় ও বর্ননা দিয়ে স্ত্রীর জবানবন্দীর পর সন্দেহ ভাজন গ্রেফতারকৃত ৩ জনের খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়াটা সর্ব মহলেই অগ্রনযোগ্য ও কাকতালীয়। তবুও আদালতে কেউ যে কোন দায় বা অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দী দিতেই পারে। কিন্তু এই জবানবন্দী মামলার শেষ কথা নয়। তবে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ এসব বিষয় মামলায় দীর্ঘ সুত্রিতা তৈরী করে। পরবর্তী তারিখে বাদীর সাথে পরামর্শ করে মামলার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল কাউনিয়া থানার পরিদর্শক তদন্ত মোঃ সগীর হোসেন বলেন, মামলায় পূর্বে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যে খুনের সাথে জড়িত সন্দেহের তালিকায় একাধিক ব্যাক্তির নাম ছিলো। তাদের মধ্য থেকে গত কয়েক দিন অভিযান চালিয়ে ঢাকা ও বরিশালের বিভিন্ন স্থান থেকে জলিল, রায়হান এবং সাকিল নামের ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে জলিল একটি চুরির মামলায় বাকেরগঞ্জ থানায় আটক ছিলো তাকে রিয়াজ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহ থেকেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। আমার কাজ হচ্ছে মামলার তদন্ত তথা আসামীদের গ্রেফতার করা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান আসামী গ্রেফতারের সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে দলিল লেখক রিয়াজকে তার নিজ ঘরে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরের দিন রিয়াজের ভাই রিপন বাদি হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রিয়াজের স্ত্রী লিজাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে লিজা স্বামীকে হত্যায় জড়িত থাকাসহ মুল রহস্য স্বীকার করে। পরে স্ত্রী আমেনা আক্তার লিজা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে লিজা স্বীকার করে তার স্বামীর সহকারী তার পরকীয়া প্রেমিক মাসুম হোসেন দা দিয়ে কুপিয়ে ঘুমন্ত রেজাউলকে হত্যা করে। এ সময় তার অন্য সহকারী হাবিব বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে। এর আগে তিনি (স্ত্রী) রিয়াজকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৬ টি ঘুমের ওষুধ কৌশলে দুধের সাথে মিশিয়ে রাখেন। যা খেয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে রিয়াজ। ওই অবস্থায়ই কুপিয়ে খুন করা হয় তাকে। এদিকে ঘটনার এক বছরে ৩ বার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও তদন্ত কার্যে বাস্তবিক কোন অগ্রগতি হয়নি বলে দাবী করেছেন বাদী রিপন। আর স্ত্রী লিজা জামিনে থেকে মাসুমের সাথে গোপন যোগাযোগের মাধ্যমে নানা ভাবে মামলার কার্য প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।