4:02 pm , August 23, 2020
হেলাল উদ্দিন ॥ দাপ্তরিক অদক্ষতা ও দূর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে মন্ত্রনালয়ে আটকে আছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন বরাদ্ধ। ২০১৯ সালের মার্চে নগর উন্নয়নের নানা বিষয় নিয়ে প্রনয়ন করা ১১’শ কোটি টাকার প্রকল্পের বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে বরিশালবাসী। সিটি মেয়রকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে কয়েকজন কর্মকর্তার দুরভী সন্ধিকিনা সেটিও প্রশ্ন উঠেছে। এবার দ্বিতীয় ধাপে প্রেরন করা সংশোধিত পৌনে ৭’শ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে তৈরী হয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরনের প্রায় ৬ মাস অতিক্রম হলেও এখনো স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়েই ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে আছে প্রকল্পটি। চূড়ান্ত ভাবে অনুমোদনের জন্য এখনো কয়েক ধাপ বাকি থাকায় এই প্রকল্পের অনুমোদন তথা ভবিষ্যত নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তায় পড়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। আর বড় এই প্রকল্পের অনুমোদন না হওয়ায় অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে সার্বিক নগর উন্নয়ন। এদিকে প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় বিসিসিতে একে অন্যের উপর দায়ভার চাপানো হচ্ছে। গত ২০ আগস্ট প্রকল্প প্রনয়নের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিচুজ্জামানকে শোকজ করা হয়েছে। ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তাকে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তিনি ছিলেন এই প্রকল্পের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। কিন্তু সম্পূর্ণ অসচেতন এবং অনভিজ্ঞতার কারণে প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়নি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। স্বয়ং মন্ত্রনালয়েরই জানা নেই প্রকল্পটির বর্তমান অগ্রগতি বা অবস্থান। তবে বিসিসি কয়েক কর্মকর্তার উদাসীনতা ও শিথিল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রকল্প অনুমোদনের ধীর গতি ও অনিশ্চতয়ার অন্যতম কারন বলে মনে করা হচ্ছে। তথ্য সুত্রে জানা গেছে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে বিসিসির ৩০টি ওয়ার্ডে সড়ক নির্মান ও সংস্কার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জন্য ১১’শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। এর পর প্রকল্পটি মন্ত্রনালয় ও পরিকল্পনা কমিশন হয়ে একনেক সভায় উত্থাপিত হলে তা বাতিল করে দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সাথে অর্থ ব্যয় কমিয়ে পুনরায় প্রকল্প প্রনয়ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়। সে মোতাবেক চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ব্যয় কমিয়ে ৬’শ ৮৩ কোটি টাকার অনুরুপ প্রকল্প পুনরায় জমা দেয়া হয়। কিন্তু ৬ মাস অতিক্রম হলেও প্রকল্পটি অনুমোদনের কোন অগ্রগতি বা আলামত মেলেনি।
আর এ ব্যর্থতার দায়ে বিসিসি প্রশাসন প্রকল্প প্রনয়ন দলের প্রধান সমন্বয় কারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিচুজ্জামানকে অভিযুক্ত করেছেন। প্রদান করা হয়েছে শোকজ নোটিশ। কারন হিসেবে প্রকল্প আবেদনের পর তিনি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোন খোঁজ খবর নেননি। এমনকি এ বিষয়ে সিটি মেয়রকে অবহিত করা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে প্রকল্প প্রণয়ন দলের প্রধানের আন্তরিকতা নিয়েও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প প্রনয়ন দলের প্রধান সমন্বয় কারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান বলেন, প্রধান প্রকৌশলী সহ অন্তত ১০-১২ জন সদস্য মিলে প্রকল্পটি প্রনয়ন করা হয়েছে। প্রথম বার ১১’শ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেওয়ার পর একনেক সভায় উত্থাপিত হলে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে পুনরায় প্রকল্প প্রনয়ন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই সভায় প্রকল্পটি বাতিল করা হয়নি। পরবর্তীতে সংশোধনী প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে জমা দেওয়ার পর আর কোন অগ্রগতির খবর আমার জানা নেই। তিনি বলেন আমার দায়িত্ব ছিলো পুনাঙ্গ প্রকল্প প্রনয়ন করে মন্ত্রনালয়ে জমা দেয়া। কিন্তু সেটা অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও কোন ভুমিকা থাকার সুযোগ নেই। অথচ এই দায়ে আমাকে দায়ী করে বিসিসি প্রশাসন শোকজ নোটিশ দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি আলাপকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের পরিকল্পনা অধি শাখার যুগ্ম-প্রধান আবু মো. মহিউদ্দিন কাদেরী বলেন, এই মূহুর্তে বিষয়টি মনে পড়ছে না। তবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের একাধিক ছোট-বড় প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আগামীকাল (আজ) প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে অবহিত করতে পারবেন বলে জানান। এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে বৃহৎ এ প্রকল্পটি অনুমোদন না পাওয়ার ক্ষেত্রে বিসিসির অদক্ষ কর্মকর্তারাই দায়ী। তারা বলেন এসব প্রকল্প অনুমোদন পেতে হলে বিভিন্ন মাধ্যমে তদ্বির-লবিং অব্যাহত রাখতে হয়। সম্ভাব্য সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে বিসিসি কর্তৃপক্ষ। তবে পুরো বিষয়টি সিটি মেয়রকে বেকায়দায় ফেলার জন্য করা হয়েছে কিনা সেটি তদন্ত করে দেখার অনুরোধ জানিয়েছে নগরবাসী।