3:34 pm , July 11, 2020

মুকুল দাস ॥ প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্র্রু কিশোর দীর্ঘদিন মরণঘাতি ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে হার মানলেন। তার গাওয়া গানের মতো করে “ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে” সেই দয়ালের ডাকে চলে গেলেন। এন্ড্রু কিশোরের রতœগর্ভা মা রেনু বালা দেবী কিশোর কুমারের গান শুনতে খুব ভালোবাসতেন। এর জন্য ছেলে জন্মাবার পর কিশোর কুমারের নামানুসারে ছেলের নাম রাখেন এন্ড্রু কিশোর। এ ভাবেই আমরা পেয়ে যাই বাংলাদেশের এক কিশোর কুমারকে। গানের বিচারে তার বেসিক গানের সংখ্যা অতি নগন্য হলেও ফিল্মি গানেই ছিল তার অধিপত্য। রাজশাহীর সাদীত গুরু আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে তিনি প্রথম সাদীতের পাঠগ্রহণ করেন। সাতাত্তর সালে মেইল ট্রেন ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাকে যাত্রা। তারপর থেকে আর থেমে থাকেনি তার সামনে চলা। অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয় স্থায়ী আসন অধিষ্ঠিত করেছেন। আমার জানা মতে, এন্ড্রু কিশোর দুবার বরিশালে এসেছিলেন। একটু পেছনের ইতিহাস বলতে হয়। সাতাত্তর সালে বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিকপ্রতিনিধিদল চীন সফরে গেয়েছিল। এ দলে মিউজিক কনডাকটর হিসেবে ধীরে বহে মেঘনা ছবি খ্যাত সদীত পরিচালক সময় দাস ও অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলেন। অনুষ্ঠান হয়েছিল পিকিং, হ্যানচাও ও ক্যাঞ্জনে। গানের শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ আবদুল হাদী, শাহনাজ, রহমতুল্লাহ, খুরশীদ আলম, ফিরোজ বেগম ও সাবিনা ইয়াসমিন। মোট চৌদ্দ খানি গানের প্রালিউড ও ইন্টারলিউড ধৈর্যের সাথে তৈরী করেছিলেন সময় দাস। আমার নেয়া চীন প্রত্যাগত সময় দাসের সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়েছিল দৈনিক সংবাদ এর শিল্প ও সংস্কৃতি পাতায়। সাতাত্তর সালের জুলাই মাসে। বিরাশি সালে সময় দাস একবার বরিশালে এসেছিলেন ব্যাপ্টিস্ট মিশনে। খবর পাঠাইতেই আমি ছুটে গিয়েছিলাম। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বলে চার্চের বাইরে অপেক্ষা করছি। সময় দাস তখন ক্যারল সঙ্গীতের রিহার্সাল করাচ্ছিলেন। আমার আসার কথা শুনে বাইরে এসে জোর করে হাতধরে টেনে আমাকে চার্চের মধ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গায়ক এন্ড্রু কিশোরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। ছিয়াশি সাথে এন্ড্রু কিশোর আবার এসেছিলেন বরিশালে। উদয়ন স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে গান গাইতে। উদয়ন স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার কাছে এসে বরিশালের বেশ কয়েকজন শিল্পী নিয়ে এন্ড্রু কিশোরের অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার অনুরোধ জানান। তখন বরিশাল সংগীতআঙ্গনের প্রভাবশালী নেতা সংগীত শিল্পী সত্তার কর্নধার প্রয়াত বশিরুল হক বাদল। বাদলকে বললাম তুই তোর সত্তার দু’তিন জন শিল্পী নিয়ে অনুষ্ঠানটা নামিয়ে দে। বাদল মুখের উপর বলে দিল টাকা ছাড়া আমি গান করি না। মহা ফাপড়ে পরে গেলাম। পরে নৈতিক দায়িত্ব বোধ থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম কেউ গান করুক চাই নাই করুক আমি গান গাইব। কারন আমি প্রভাতী স্কুলের ছাত্র। রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী অনীতা দত্তকে গিয়ে ধরি বলি তুমি রবীন্দ্র সঙ্গীত নয়, আধুনিক গান গাইবে। এই ভাবে প্রসূন সেনকে বলি তুই গান গাইবি। অনুষ্ঠানে অনীতা গেয়েছিল শ্রবন্তী মজুমদারের গাওয়া নেশার কাজল চোখে দিয়েছি। আমি গেয়েছিলাম কার্তিক বসন্তের গাওয়া কপালের পাথর টাকে সরাই কেমন করে? আর প্রসূন গেয়েছিল মাসুম ছবির অনুপ ঘোষালের গাওয়া তুঝসে নারাজ নগী জিন্দেগী হয়রান হু ম্যায়। পরে এন্ড্রু কিশোর গাইলেন তার জন প্রিয় গান। জীবনের গল্প আছে বাকি আল্প, আমার বুকের মধ্যিখানে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি নিজের গানের বাইরে কার্তিক বসন্তের একটা গানও গেয়েছিলেন। কথা প্রসঙ্গে বলে ছিলেন রাজশাহীতে বসবাস করলেও তাদের আদি নিবাস বরিশাল জেলায় গৌরনদী উপজেলায়। সমাহিত হবার পর তার গাওয়া আমার সারাদেহ খেও গো মাটি অনিবার্য বাবে মিলে যাবে। তার গাওয়া অনেক গানের মধ্যে বড় ভালো লোক ছিল ছবির সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত” হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস” আমার কাছে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত। এই গানের মধ্যদিয়ে এন্ড্রু কিশোর আবারো প্রমান করলেন “দম ফুরাইলে ঠুস”।