আমতলীতে মাদ্রাসা ছাত্র এখন ‘হোটেল বয়’ আমতলীতে মাদ্রাসা ছাত্র এখন ‘হোটেল বয়’ - ajkerparibartan.com
আমতলীতে মাদ্রাসা ছাত্র এখন ‘হোটেল বয়’

3:34 pm , July 6, 2020

আমতলী প্রতিবেদক ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ভায়লাবুনিয়া গ্রামের দিনমজুর মোঃ বেল্লাল খানের পুত্র ও ছারছিনা দ্বিনিয়া মাদ্রাসার ৭ম শ্রেনীর ছাত্র মোঃ ইয়ামিন (১৫) এখন হোটেল বয়। করোনার কারনে সংসারের অভাব কিছুটা দূর করা জন্য ও পেটের তাগিদে পড়ালেখা ছেড়ে গত দুই মাস ধরে হোটেল বয়ের কাজ করছেন শিক্ষার্থী ইয়ামিন। জানাগেছে, উপজেলার ভায়লাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্ধা মোঃ বেল্লাল খানের ৫ জনের সংসার। স্বামী-স্ত্রী একমাত্র পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান নিয়ে তিনি গ্রামেই বসবাস করেন। বড় ছেলে মোঃ ইয়ামিন (১৫) ছারছিনা দ্বিনিয়া মাদ্রাসার ৭ম শ্রেনীর ছাত্র ও কন্যা সাথী ভায়লাবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী এবং অপর কন্যা আয়েশার বয়স ২ বছর। দিনমজুরের কাজ করে কোনরকম চলতো বেল্লাল খানের সংসার। হঠাৎ করে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব শুরু হয়। যে কারনে এক রকম আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিনমজুর বেল্লাল খান সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সংসারে শুরু হয় অভাব অনটন। বড় ছেলে মোঃ ইয়ামিন ছারছিনা দ্বিনিয়া মাদ্রাসা লিল্লাহ্ বোর্ডিংএ থেকে মাদ্রাসার খরচে পড়ালেখা করে। করোনায় মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেও বাড়ীতে চলে আসে। পুত্র ইয়ামিন বাড়ীতে চলে আসায় সংসারের খরচ আরো বেড়ে যায়। দিন যত সামনে যাচ্ছে তাতে বেল্লাল খানের পক্ষে দিন মজুরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে তিন বেলা আহার জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে সংসারের অভাব দূর করার জন্য মাদ্রাসা পড়–য়া ছেলে ইয়ামিনকে হোটেল বয়ের কাজে লাগিয়ে দেন। বর্তমানে ইয়ামিন আমতলী পৌর শহরের চৌরাস্তা সংলগ্ন হোটেল সকাল সন্ধ্যায় বয়ের কাজ করছেন। প্রতিদিন তিন বেলা আহার শেষে মাসে ৩০০০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন মাদ্রাসা ছাত্র ইয়ামিন। সংসারের অভাব দূর করার জন্য মাস শেষে বেতনের সব টাকাই তুলে দিচ্ছেন দরিদ্র দিনমজুর পিতার হাতে। গত দুই মাস ধরে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ইয়ামিন হোটেল বয়ের কাজ করছেন। যে বয়সে বই, খাতা, কলম নিয়ে বাড়ীতে বসে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা করার কথা। সেই বয়সে ইয়ামিন পেটের তাগিদে হোটেলে কঠোর পরিশ্রম করছেন। পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের দৈন্যদশা, অভাব অনটন ও পিতার বৈরী মনোভাবে তার সে আশা-আকাঙ্খা ধূলিসাৎ হওয়ার পথে। দারিদ্রতার কারণে তার আর লেখাপড়া হবে কিনা তাও বলতে পারছেন না ইয়ামিন। খোজ নিয়ে দেখাগেছে, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া বেশ কিছু অস্বচ্ছল পরিবার তাদের কিশোরদের একটু বাড়তি আয়ের আশায় বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ঠেলে দিচ্ছেন। সংসারের অভাব অনটন দূর করতে এসব কিশোররা না বুঝেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন। মাদ্রাসা ছাত্র ইয়ামিন বলেন, করোনা মহামারীর আগে বাবা দিনমজুর করে যা আয় করতো তা দিয়ে আমার মা-বাবা ও বোনসহ পরিবারের সদস্যরা তিন বেলা কোন রকম খেয়ে পরে থাকতো পারতো। মহমারী করোনাভাইরাস আসার পর আমার মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। আমিও বাড়ী চলে আসি। বাবা দিন মজুরী করে এখন যা উপার্যন করে তা দিয়ে আমরা তিনবেলা খেতে পারিনা। তাই পেটের তাগিদে আমি এখন হেটেল বয়ের কাজ করি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT