3:33 pm , June 29, 2020

শামীম আহমেদ ॥ বরিশাল-ঢাকা সহ দক্ষিণাঞ্চলে নৌ-পথে গত ৫ বছরে নৌ দূর্ঘটনার পরপরই কখনো ৩, ৫ কিংবা ৭ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু তদন্তের প্রতিবেদন ও দোষীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত বিচার ব্যবস্থা গ্রহনের কোন নজির এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
অন্যদিকে নৌ-পথে দূর্ঘটনা ঘটলে নৌ-যান সহ মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা রাখা হলেও সড়ক পরিবহনের দূর্ঘটনায় মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না রাখায় লঞ্চ মালিক সমিতি রয়েছে চরম ক্ষোভ। তারা সরকারের এ আইনকে কালো আইন বলে বাতিলের দাবী জানিয়েছে।
অন্যদিকে সমুদ্র পরিবহন কর্তৃপক্ষ বড় ও ছোট নৌ-যানের সারেং, মাস্টার ও সুকানীদের কি ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে সনদ প্রদান করে তা নিয়েও মালিক পক্ষের রয়েছে নানা অভিযোগ।
সূত্রমতে, আমাদের দেশে লঞ্চডুবি নিয়মিত এবং অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনার একটি। প্রায় প্রতি বছরই নৌ পথে ছোট-বড় লঞ্চ বা ট্রলার দুর্ঘটনা হয়। সেই সাথে প্রতিবছরই লঞ্চডুবির ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটছে। দেখা যায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রীবহন, চালকদের অদক্ষতা-অনভিজ্ঞতা, লঞ্চের নকশায় সমস্যা, লঞ্চের ফিটনেস তদারকির অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সর্বশেষ গতকাল সকালে ঘটেছে ভয়াবহ লঞ্চডুবির ঘটনা। এতে শিশু, মহিলা পুরুষ সহ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জনের মত যাত্রীর প্রানহানীর ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ বছরের পিছনের দিকে তাকালে দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে বরিশাল-ঢাকা নৌপথ সহ দক্ষিণাঞ্চল ও বিভিন্ন নৌপথে ঘটেছে প্রাণহানী নৌ দূর্ঘটনা। ২০১৬ সালের ৫ জুলাই বরিশাল-ঢাকা নৌপথে সুরভী-৭ ও পিএস মাহসুদের সংঘর্ষ হয়। কীর্তনখোলা নদীতে এ সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হন। আহত হয় ১৫ জন। হতাহত সবাই পিএস মাহসুদের যাত্রী। ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল কীর্তনখোলা নদীর বেলতলা খেয়াঘাট এলাকায় বালুবাহী একটি কার্গোর ধাক্কায় এমভি গ্রীন লাইন-২ লঞ্চের তলা ফেটে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তীরে নেয়ার কারনে দুই শতাধিক যাত্রী সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যায়। ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদীর ওয়াপদা চেয়ারম্যান ঘাটের টার্মিনালে তীব্র স্রোতের মুখে ডুবে যায় তিনটি লঞ্চ। এতে একই পরিবারের তিন জনসহ ২২ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের ২২ জুন মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে এমভি রিয়াদ নামের একটি লঞ্চের তলা ফেটে অর্ধেক পানিতে ডুবে যায়। লঞ্চের তলা ফেটে পানি উঠতে শুরু করলে অন্য ট্রলার গিয়ে লঞ্চযাত্রীদের উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে যায়। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি মেঘনা নদীর চাঁদপুর সংলগ্ন মাঝ কাজীর চর এলাকার মাঝ নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে দুই যাত্রী নিহত এবং আটজন আহত হয়। হতাহতদের মধ্যে নিহত দুজনসহ আহত তিনজন এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের এবং বাকি আহত পাঁচজন এমভি ফারহান-৯ লঞ্চের যাত্রী ছিলেন। নৌ দূর্ঘটনার তদন্তের প্রতিবেদন কি পূর্বের মত অন্ধকারের ঘরে বন্দি হয়ে থাকবে নাকি আলোর দেখবে তা এখন দেখার বিষয় হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, নৌ পথে প্রায় সময়ে যে দূর্ঘটনা ঘটে তা মাস্টার সুকানীর অদক্ষতা, গাফলতির কারনেই বেশীর ভাগ সময়ে ঘটে থাকে। এখানে এরা যদি একটু সচেতনতা অবলম্বন করে লঞ্চ চলাচলের ক্ষেত্রে পরিচালনা করে, তাহলে এধরনের দূর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা যদি সরকারী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মাস্টার, সুকানী ষ্টাফ নিয়োগ না দিলে সরকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করে। এখানে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন এরাই আবার সরকারী সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে সনদ নিয়ে আসে তাহলে এদেরকে তারা কি প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এছাড়া যাদেরকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে, তারা বেশীর ভাগ সময় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করে না বলে তিনি দাবী করেন।