3:04 pm , May 19, 2020
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জ্যৈষ্ঠের অমাবশ্যার ভরা কোটালে ভর করে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ ১৩ বছর আগের সুপার সাইক্লোন ‘সিডর’ এর তীব্রতা নিয়ে দেশের দক্ষিণ উপকূলে ধেয়ে আসার সাথে উপকূল জুড়ে কোটি মানুষের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ক্রমশ বাড়ছে। করোনা ভাইরাসের শংকার মধ্যে প্রকৃতির আরেক আঘাত সহ্য করতে প্রস্তুতি গ্রহন করছে শত শত বছর ধরে লড়াই করা উপকূলের মানুষ। তবে ১৩ বছর আগে সিডর আঘাত হেনেছিল সোয়া ২শ কিলোমিটার বেগে ১৫ নভেম্বর রাতে। আর ২০১৩-এর ১৬ মে প্রত্যুষে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাশেন’এর তীব্রতা ছিল ১২০ কিলোমিটার। অতীতের হিসেবে মে মাসের ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা দেড়শ কিলোমিটারের বেশী না হলেও এবার আম্পান যথেষ্ট সময় নিয়ে শক্তি সঞ্চার করে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন হিসেবে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে এগিয়ে আসছে। মঙ্গলবার দুপুরের পরে দক্ষিন উপকূলের বরগুনা, পটুয়াখলী, পিরোজপুর, ঝালকাঠী ও বরিশালে বিচ্ছিন্নভাবে হালকা বৃষ্টিপাতের সাথে বাতাসের গতিছিল ১০-২৮ কিলোমিটার। বিকেল থেকে আকাশ ক্রমশ কালো হয়ে ছিল। তবে আম্পানে ভর করে বৃষ্টি এখনো উপকূলভাগে পৌছেনি। ইতোমধ্যে দক্ষিন উপকূলে এ ঘূর্ণিঝড় ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে রেড ক্রিসেন্ট-এর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’র স্বেচ্ছাসেবকগন সতর্ক করে বার্তা প্রচার করছে। অতি ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে নারী ও শিশু সহ বয়োবৃদ্ধদের আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর শুরু হয়েছে। সন্ধ্যার আগে আরো বেশী সংখ্যক মানুষকে ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে আনা হবে। সিপিপি’র ৭টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের আওতায় পূর্বে টেকনাফ থেকে পশ্চিমে সুন্দরবন সংলগ্ন দুবলারচর পর্যন্ত উপকূলীয় ৪১টি উপজেলার সাড়ে ৩শ ইউনিয়নের ৩ হাজার ৬৯০টি ইউনিটের প্রায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আম্পান এর হাত থেকে মানুষকে উদ্ধার তৎপরতা সহ দূর্যোগ পরবর্তি যেকোন পরিস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। উপকূলভাগে সাইরেন ও মেগাফোন দিয়ে প্রচারনার পাশাপশি সতর্কতামূলক লাল-কালো পতাকাও উত্তোলন করা হয়েছে। সিপিপি’র সদর দফ্তর থেকে বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জোনাল হেডকোয়াটার-এর মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিটের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। যেকোন পরিস্থিতিতে উপকূলের ঝুকিপূর্ণ এলাকার অন্তত ১৫ লাখ নারী, শিশু ও বয়োজেষ্ঠ্য সহ অপেক্ষাকৃত দূর্বল শ্রেণীর মানুষকে সাড়ে ৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদে সরিয়ে নিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবকদের। বরগুনায় ৫০৯ টি আশ্রয়কেন্দ্র, ভোলায় প্রায় ১ হাজার ১০৫টি, ঝালকাঠীতে ২৭৬টি সহ পটুয়াখালী, বরিশাল ও পিরোজপুরের সব আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য ঝুকির কথা বিবেচনায় নিয়ে এসব আশ্রয় কেন্দ্র পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়া পর্যবেক্ষকদের মতে বুধবার দুপুরের আগে আম্পান বাংলাদেশে উপকূলে নাও পৌছতে পারে। সেক্ষেত্রে ইতিহাসের দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন আম্পান যদি অমাবশ্যার ভরা জোয়ার ভর করে রাতে আঘাত হানে তবে তা হবে আরো ভয়াবহ। এ পর্যন্ত আম্পান যে গতিতে উত্তর দিকে এগিয়ে আসছে তাতে বুধবার বিকেলের আগে তা বাংলাদেশ উপকুলে আঘাত হানার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রকৃতির রুদ্র রোশের শিকার বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বিগত দুইশ বছরে ঝড়, জলোচ্ছাস সহ নানা দূর্যোগে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। আশ্রয়হীন হয়েছে আরো অন্তত কোটি মানুষ। বিনষ্ট হয়েছে কয়েক লাখ কোটি টাকার ফসল ও সম্পদ। বার বার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা। ফলে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও এখানে বসবাসরত মানুষের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নতি বার বারই থমকে গেছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকৃতির সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হলেও এটিই যেন তাদের নিয়তি।