করোনায় নিস্তব্দ পাটি শিল্পী পল্লী করোনায় নিস্তব্দ পাটি শিল্পী পল্লী - ajkerparibartan.com
করোনায় নিস্তব্দ পাটি শিল্পী পল্লী

3:31 pm , May 15, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনা সংকটে নিস্তব্দ হয়ে পড়েছে ঝালকাঠির পাটিকর পল্লীগুলো। বিগতে বছরের এ সময়ে পাটিকর শিল্পীদের ব্যস্ততার অন্ত ছিল না। কিন্তু এই করোনা তাদের কাছে নিয়ে এসেছে নিষ্ঠুর বার্তা। পাটিকর শিল্পীদের আর কোন কিছু করার উপায় না থাকায় অনেকেই এখন দারুণ সংকটে। নিভৃত এই পল্লীতে পাটি বোনা শিল্পীদের বাচাতে সরকারী বেসরকারী সাহায্যও অপ্রতুল।
বরিশালে পাটি শিল্পীদের উন্নয়ন নিয়ে গত ৩ বছর ধরে কাজ করে আসছেন উন্নয়ন সংগঠক রান এর পরিচালক রফিকুল আলম। তিনি জানান বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠীর নলছিটি ও রাজাপুরের হাইলাকাঠীতে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের ২ হাজারেরও মানুষ এই শিল্পের সাথে জড়িত। এখানে উন্নত মানের পাটিগাছ যেটি স্থানীয় ভাবে ‘পাইত্রা’ বলে তা পাওয়া যাওয়ায় পাটি শিল্প গড়ে উঠেছে। ইউনেস্কো ২০১৭ সালে শীতল পাটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও শিল্পীদের উন্নয়নে সরকারী বেসরকারী কোন দেখভাল নেই, এর ফলে এই পেশা থেকে সরে আসছে অনেকেই। বর্তমান করোনা সংকটে শুধুমাত্র সেকুলার বাংলাদেশ-ইউ কে, সরকারের সামান্য ত্রাণ সহায়তা ছাড়া এদের ভাগ্যে জোটে নি কিছুই।
বরিশাল এর বাকেরগঞ্জের কাঠালিয়া হেলঞ্চা সহ বেশ কিছু গ্রামের ১১০ পরিবারের ৫শ মানুষ পাটি বুননের উপর নির্ভরশীল। যুগ যুগান্তর ধরে তারা পাটি বুনলেও ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারে নি। এখান থেকে সুন্দর পাটি বাংলাদেশের সর্বত্র, ঢাকা এমনকি সিলেটে বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু ২ মাস যাবৎ এখানে ১ টি পাটিও বিক্রি হয়নি। আর এসব কথা ভেবে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন কাঠালিয়া পাটিকর কল্যাণ সমিতির এর সম্পাদক সিদ্ধেশ্বর দত্ত। তিনি জানান, গত এক বছর আগে স্থানীয় পাটি শিল্পীদের অভিভাবক, রান এর উপদেষ্টা রফিকুল আলম সিলেট থেকে পাটি বোনা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। তার পর থেকে এখানের শিল্পীরা উন্নত মানের পাটি তৈরী করতে শুরু করে। কিন্তু করোনার কারনে তারা উন্নত মানের পাটি বানিয়েও দারুণ বিপাকে। গত ২ মাসে কাঠালিয়া গ্রামের ৫৫ ঘর পাটি শিল্পীর ১ টাকাও উপার্জন নেই। উপার্জন না থাকায় শুধু কাঠালিয়া নয়, ঝালকাঠী জেলার ণলছিটি উপজেলার মোল্লার হাট, রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়ন এর হাইলাকাঠী, ডহরশংকর, সাঙ্গুর গ্রামের কয়েকশত পারিবার আজ কোন উপায় না পেয়ে ভেঙে পড়ছে। অনেকেই শত বছরের ঐতিহ্য, বাপ ঠাকুরদার লালিত পেশা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা
করছে। হাইলাকাঠী- ডহরশংকর শীতলপাটি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি তাপস পাটিকর জানান প্রতিসপ্তাহে অন্তত শতাধিক পাটি এখান থেকে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু করোনার কারনে পাইকার আসতে না পারায় তারা বসে থেকে সময় পার করছে। কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় কৃষি কাজেও নামতে পারছে না।
তিনি জানান স্থানীয় মঠবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাত্র ৩৫ জনের জন্য ত্রাণ আসলেও বাকিরা রয়েছে বঞ্চিত।
নলছিটি মোল্লার হাটের পাটিকর পাড়ার গৌতম পাটিকর জানান এখানে ৪০/৫০ ঘর পাটিকর থাকলেও এ পর্যন্ত কোন ত্রাণ পায়নি। ত্রাণ না পাওয়ার কথা জানান এই গ্রামের কাজল রানী পাটিকর সহ অন্যান্যরা। বাকেরগঞ্জ এর পাটিকর পল্লীর, কাঠালিয়া গ্রামের অর্চনা রানী পাচিকর জানান সেকুলার বাংলাদেশ-ইউ কে নামক একটি সামাজিক সংগঠনের পক্ষে ৩০ টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও সিংহভাগ বাদ পড়েছে। রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোহাগ হাওলাদার জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পাটি শিল্পীদের নাম অর্ন্তভুক্তের জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার ইউ এনও মাধবী রায় জানান এই শিল্পীদেরকের সহায়তা পৌছানো হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT