করোনার প্রভাবে ভালো নেই বাকেরগঞ্জের মুড়ি কারিগররা করোনার প্রভাবে ভালো নেই বাকেরগঞ্জের মুড়ি কারিগররা - ajkerparibartan.com
করোনার প্রভাবে ভালো নেই বাকেরগঞ্জের মুড়ি কারিগররা

2:07 pm , April 29, 2020

পলাশ হাওলাদার, বাকেরগঞ্জ ॥ পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেড়েছে, তাই তুলনামূলক কম হলেও অনেকটাই ব্যাস্ত সময় পাড় করছেন বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন এর বাখরকাঠি গ্রামে হাতে মুড়ি ভাজা কারিগররা। এই গ্রামে রমজানের চাহিদা মেটাতে নারীদের সাথে পুরুষরাও সমানতালে মুড়ি প্রস্তুত এর কাজ করছেন। কাজে সহায়তা করছেন পরিবারের সকলেই। করোনার লকডাউনে পরিবহন ব্যাবস্থার অভাবের কারনে তারা কিছুটা শংকিত। এছাড়া করোনার মতই তাদের আরেক প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ইউরিয়া ও হাইড্রোজ দিয়ে মেশিনে ভাজা বড় আকারের মুড়ি। বাকেরগঞ্জের হাতে ভাজা মুড়ি কারিগরদের সাথে আলাপে জানাগেছে, সারা বছরই মুড়ি তৈরির কাজ করেন তারা। তবে পুজির অভাব ও অসাদু ব্যাবসায়ীদের পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে হয় তাদের। তাদের তৈরি ভেজালমুক্ত হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ করতে পারছেন না করোনার প্রভাবে। অনেকেই নানা প্রতিবন্ধকতায় এই পেশা ত্যাগ করেছেন বলেন তারা। কারন বর্তমানে তাদের টিকতে হয় মেশিনে ভাজা মুড়ির মাথে পাল্লা দিয়ে। ইউরিয়া ও হাইড্রোজ মিশিয়ে মেশিনে মুড়ি বড় ও সাদা করে ভাজা হয় এবং তা কম দামে বিক্রি করেন কিছু অসাদু বিক্রেতারা। এতে খরচ ও পরিশ্রম উভয়ই কম লাগে তাই এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টেকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে হাতে ভাজা মুড়ি কারিগরদের। স্থানীয় আড়তদার ও মিল মালিক ইউসুফ আলী হাওলাদার জানান, মেশিনে মুড়ি ভাজলে হাইড্রোজ মেশানো হয় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু মানুষ কম দামে পেয়ে কিনে খায় তাই মেশিনের মুড়ি তৈরি অব্যাহত থাকছে। এছাড়া ক্রেতার পরিস্কার ও আকারে বড় না হলে সেই মুড়ি কিনতে চায় না তাই হাইড্রোজ মেশানো হচ্ছে। অপরদিকে হাতে ভাজা মুড়ি স্বাস্থ্যসম্মত হলেও এর চেহারা তেমন ভালো হয়না এবং এ মুড়ি তৈরিতে খরচও বেশি। তবে স্বাদের দিক দিয়ে হাতে ভাজা মুড়ির বিকল্প নেই। রমজান মাসে মুড়ির চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু করোনার প্রভাবে পরিবহন ব্যবস্থায় অসুবিধা হওয়ায়, মুড়ি কারিগরদের বাড়িতে মজুদ রয়েছে বিপুল পরিমাণ হাতে ভাজা মুড়ি। কোন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই হাতে ভাজা উৎপাদিত মুড়ি স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশ জুড়ে এর চাহিদা রয়েছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বাখরকাঠি শাহাদাত হোসেনের বাড়িতে সারা বছর ধরেই চলে মুড়ি ভাজার কাজ। রমজান উপলক্ষে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। তাই এসব বাড়ি এখন দিন-রাত মোটা চালের মোটা মুড়ি ভাজার কাজ চলছে। হাতে মুড়ি ভাজা বাড়ির পরিবার যুগ যুগ ধরে মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার ছাড়া এসব স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু মুড়ি এখন বরিশাল বিভাগ সহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখান থেকে মুড়ি নেয়। কারিগর বিলকিস বেগম জানান, হাতে মুড়ি ভাজতে হলে হাতের টেকনিক জানাটা অনেক দরকার। পাশাপাশি মুড়ি ভাজার উপযোগী মাটির চুলা ও সরঞ্জামের গুরুত্বও অনেক। প্রথমে নাকুচি মোটা ধান সেদ্ধো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় তিন দিন এর পর আবার সিদ্ধ করে রোদে শুকানো হয়, এর পর শুকনো মোটা ধান কলে নিয়ে চাল করা হয়। মোটা চাল লবন পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাটির পাত্রে হালকা ভাজেন। চাল ভাজার পাশাপাশি অন্য মাটির পাত্রে বালির মিশ্রন গরম করতে হয়। এর পর মাটির অন্য পাতিলের মধ্যে গরম বালি ঢেলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ভাজা চাল ঢেলে দেওয়া হয়। ১৫-২০ সেকেন্ডের নারাচাড়ায় তৈরি হয়ে যায় ভালো মানের সুস্বাদু মুড়ি। এক দিনে কেউ কেউ ৫০ কেজি বা অনেকে আবার ১শ কেজি হাতে চালের মুড়ি ভাজেন। হাতে মুড়ি ভাজা কারিগর শাহাদাত বলেন, যুগের পর যুগ ধরে বাপ-দাদার পেশা স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু হাতে মুড়ি ভাজার কাজ করছেন, কিন্তু হাতে মুড়ি ভেজেও শুধুমাত্র পুঁজির অভাবে ভাগ্য ফেরাতে পারেনি। প্রতি কেজি মুড়ি আমরা পাইকারি ৯০টাকা এবং খুচরা ১০০টাকা বিক্রি করি। এই অর্থ দিয়ে পরিবারের সবার জীবন-জীবিকা ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সকল খরচ করতে হয়। বছরের পর বছর মুড়ি ভেজেও শুধুমাত্র পুঁজির অভাবে ভাগ্য ফেরাতে পারেনি এই পরিবারগুলো। মুড়ি ভাজাকে কুটির শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে বিশেষ ঋনের ব্যবস্থা করা হবে, এমনটাই এ শিল্পে জড়িতদের প্রত্যাশা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT