2:29 pm , April 26, 2020
হেলাল উদ্দিন ॥ দীর্ঘ ১৭ দিন পর বরিশালে বিরতি দিলো করোনা সংক্রমন। রোববার বরিশাল বিভাগের কোন জেলায় কোন করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি। এমনকি আক্রান্তদের মধ্যে কারো মৃত্যুও ঘটেনি। বিষয়টি কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করার মত কিছু হয়নি বলে জানিয়েছে বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শেবামেক এর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আকবর কবির জানিয়েছেন শনিবার শেবামেক ল্যাবে ৮৮ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিলো। এদিকে স্বস্তির এই বার্তার মধ্যেও শনিবার বরিশাল বিভাগে ১’শ ছাড়িয়েছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিভাগে এখন রোগীর সংখ্যা ১০১ জন। এর মধ্যে ১০ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী ১৭ জন। আক্রান্তের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে এক সপ্তাহ ধরে করোনা রোগী বাড়ছে। বরগুনায় ৯ এপ্রিল একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর সেখানে ১১ এপ্রিল আরও একজন রোগী শনাক্ত হয়। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০-এ। বরিশালে ১২ এপ্রিল প্রথম এক রোগীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত ছিল ১৪ জন। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তা বেড়ে হয় ৩৬ জনে। পটুয়াখালী জেলায় ৯ এপ্রিল প্রথম শনাক্ত রোগী মারা যাওয়ার পর ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দুজন আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু ২১ এপ্রিল এক দিনে নতুন ৮ জন আক্রান্ত হয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ১০-এ। এরপর গত ৫ দিনে আরও ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়। তবে ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে ১০ দিন ধরে রোগী সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। ভোলায়ও নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় আক্রান্তের হার বৃদ্ধির পেছনে গ্রামে ফেরত লোকজনের ভূমিকা বেশি। এই তিন জেলায় আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আক্রান্তদের ৭০ ভাগই নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা এবং সাভার থেকে ফেরা শ্রমিক। বাকিরা তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, প্রথম রোগী সনাক্ত হবার পর রবিবার প্রথম বিভাগের কোন জেলায় নতুন করে করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি। এটা ভাল এবং অবশ্যই আশার মত কিছু। কিন্তু একদিনের চিত্রে এ নিয়ে মূল্যায়ন বা মন্তব্য করা উচিত হবে না। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন তিনি। তিনি আরো বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ আক্রান্ত হলে পুরা হাসপাতাল লকডাউন হবে না। প্রয়োজনে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে অন্য এলাকার চিকিৎসক এনে সাময়িক কার্যক্রম চালু রাখা হবে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বরিশালে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়। আর বরিশাল জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত ১৭ দিনে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ১০১ জন। এর মধ্যে বরিশালে ৩৬ জন, বরগুনায় ৩০ জন, পটুয়াখালীতে ২০ জন, পিরোজপুরে সাতজন ও ঝালকাঠিতে ছয়জন। এ ছাড়া গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো ভোলায় দুজন শনাক্ত হয়। বিভাগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন চারজন। সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে নিয়মিত ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ৯ জন, একজন মেডিকেল ছাত্র, চারজন নার্স, তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এদের মধ্যে সর্বশেষ গতকাল শনিবার নতুন করে বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক তরুণ চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ হয়েছে।