খাজা মাঈনউদ্দিন মাদ্রাসার ঘোষিত কমিটি অবৈধ -এবায়দুল হক চাঁন খাজা মাঈনউদ্দিন মাদ্রাসার ঘোষিত কমিটি অবৈধ -এবায়দুল হক চাঁন - ajkerparibartan.com
খাজা মাঈনউদ্দিন মাদ্রাসার ঘোষিত কমিটি অবৈধ -এবায়দুল হক চাঁন

1:00 am , March 6, 2020

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর বাজার রোডের খাজা মঈন উদ্দিন মাদ্রাসার সদ্য ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন সাবেক সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব এবায়দুল হক চাঁন। একই সাথে কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের সামনে এই অভিযোগ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলন এবায়দুল হক চাঁন অভিযোগি করে বলেন, মাদ্রাসার মুহতামিম (মাদ্রাসা সুপার) আব্দুল হালিম পদাধিকার বলে কমিটির সাধারন সম্পাদক। তিনি সভাপতি ও কমিটির অন্যকোন সদস্যকে দাওয়াত বা না জানিয়ে নিজে একটি মণগড়া কমিটি গঠন করেছেন। যা সম্পূর্ন অবৈধ। নিজেকে বর্তমান সভাপতি দাবি করে এবায়দুল হক চাঁন বলেন, যেখানে কোন গঠনতন্ত্র নেই সেখানে কোন নিয়মের বলে কমিটি ঘোষনা করা হল। তিনি বলেন, নগরীর বাজার রোডের খাজা মঈন উদ্দিন মাদ্রাসা কমিটিতে ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়। একাধিক ব্যক্তির প্রচেষ্টায় মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কর্মকান্ড সম্পন্ন করা হয়। ওই সময়ে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দেন। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীরা অনুদান দিয়েছে। মাদ্রাসা স্থাপনের পর সামনে একটি মার্কেটও নির্মান করা হয়। এছাড়া মাদ্রাসার জন্য পেছনের জমি ক্রয় করা হয়। এখন সেই জমি দখল করে রেখেছে মাদ্রাসার সাতজন শিক্ষক। তারা ওই জমিতে বাড়ী নির্মান করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। আমি তাদেরকে ওই জমি ছেড়ে দিয়ে মাদ্রাসার ভবন নির্মানের কথা বললে তারা আমার কথার কর্ণপাত করে না। এমনকি মার্কেট থেকে আয়ের অর্থ তারা ব্যাংকের মাধ্যমে নিজেরাই খরচ করছেন। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, বাজার রোডের খাজা মঈনউদ্দিন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সৈয়দ কাওসার হোসেন। তিনি ছিলেন আজীবন সভাপতি। তার মৃত্যুর পর মাদ্রাসার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গঠনতন্ত্র না থাকায় প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যিনি সভাপতি থাকবেন তার মৃত্যুর আগে অন্য কেউ নতুন করে সভাপতি হতে পারবে না। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এমটাই হয়ে আসছে। কিন্তু ২০১৪ সালে সভাপতি হওয়ার পর মাদ্রাসা সুপার হিসেবে নিয়োগ পান আব্দুল হালিম। এর পর থেকেই সভাপতির কথায় কর্ণপাত না করে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে মাদ্রাসা পরিচালনা করেন সুপার। সুষ্ঠুভাবে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য কোন প্রকার বিধিমালা অনুসরণ করা হয় না। এমনকি আয় ব্যয়ের সুষ্ঠু হিসাবও রক্ষিত হয় না। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্য পর্যন্ত আয় ব্যয়ের সুষ্ঠু হিসাব এমনকি অডিটও হয়নি। আমরা মাদ্রাসা কমিটি বিষয়টি সুপারকে বললে তিনি প্রতি বারই কৌশলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। এর ফলে যারা কমিটিতে রয়েছেন তাদের উপরে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। সভাপতি থাকাবস্থায় নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে এবায়দুল হক চাঁন বলেন, ‘মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার বিধিমালা বা গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করে খাজা মঈন উদ্দিন মাদ্রাসার গঠনতন্ত্র প্রস্তুত প্রণালীর কাজ চলছে। তাই অচিরেই মাদ্রাসা সুপারের স্বেচ্ছাচারিতা ও সদ্য ঘোষিত কমিটি বাতিল করে মাদ্রাসার দায়িত্বশীলদের নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধিমালা প্রয়ণয়ন ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা আবশ্যক কবে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা সুপার প্রতিষ্ঠা ও প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপির নিকট একটি অভিযোগ দিয়েছেন। যেখানে তিনি মাদ্রাসার সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন ও সহ-সভাপতি আনিছুজ্জামান খান কামালের ওই কমিটিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়। পাশাপাশি তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদ্রাসার স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। তারা মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুন্নকারী কর্মকান্ডে নিয়োজিত থেকে বিগত পাঁচ বছরে মাদ্রাসা মার্কেট কমপ্লেক্সের কোন আয় ব্যয়ের হিসাব মাদ্রাসা সুপার ও শিক্ষকদের জানাননি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। যেখানে শিক্ষকরা জানতে চাইলেও এবায়দুল হক চান ও আনিছুজ্জামান খান কামালসহ কমিটির আরো কয়েকজন সদস্য শিক্ষকদের সাথে অসদ আচারণ করেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে খাজা মঈন উদ্দিন মাদ্রাসার সুপার আব্দুল হালিম বলেন, ‘মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি কাওসার হোসেনের মৃত্যুর পরে এবায়দুল হক চাঁন সু-কৌশলে সভাপতি হন। এর পর থেকেই তিনি মাদ্রাসায় বিশৃঙ্খলা করেন। মাদ্রাসার মার্কেট থেকে বছরে কোটি টাকা আয় হয়। কিন্তুগত ৫ বছর ধরে ওই মার্কেটের আয় এবং ব্যয়ের কোন হিসাব এবায়দুল হক চাঁন দেননি। মাদ্রাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরেও তিনি এ বিষয়ে কোন হিসাব বা কথা বলার সুযোগ দেননি। তিনি বলেন, মাদ্রাসা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাকে গঠনতন্ত্র প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। সে অনুযায়ী আমি বিভিন্ন মাদ্রাসায় যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গঠনতন্ত্র তৈরি করি। ২০১৫ সালে কার্যকরি পরিষদের একটি সভায় গঠনতন্ত্র অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনও করেছি। ওই গঠনতন্ত্রে কমিটির নির্দিষ্ট মেয়াদও উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই কারণেই এবায়দুল হক চাঁনসহ কমিটির অন্য সদস্যরা ওই গঠনতন্ত্রের অনুমোদন দেননি। তাই পরবর্তীতে আমি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ওই গঠনতন্ত্র অনুমোদন করে আনি। সেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের তিন মাস পরে বিধি মোতাবেক নতুন কমিটি ঘোষণা করেছি। এতে এবায়দুল হক চাঁন এবং আনিছুজ্জামান খান কামাল ছাড়া অন্য সকল সদস্য এবং উপদেষ্টাদের সম্মতিও রয়েছে।মাদ্রাসা সুপার অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসা একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এবায়দুল হক চাঁন এটিকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বিএনপি নেতা হওয়ায় তিনি দলীয় লোকজন নিয়ে মাদ্রাসার মধ্যে গোপন মিটিং সহ দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এটা প্রকাশ পেলে এলাকার লোকজন তার কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়। তাছাড়া সম্প্রতি তিনি দলীয় লোকজন নিয়ে জুমা নামাজের পরে মাদ্রাসায় শোডাউন দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনার পর দিন অর্থাৎ শনিবার এবায়দুল হক চাঁন মাদ্রাসায় আসলে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। এর পর থেকেই তিনি স্থানীয়দের ভয়ে মাদ্রাসায় আসেন না বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া প্রেসক্লাবে যে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে সেখানে এবায়েদুল হক চাঁন এবং সদস্য আব্দুল রাজ্জাক ছাড়া কেউ ছিলেন না। কেননা কমিটির অন্য সকল সদস্যরা চাঁনের কর্মকান্ডে পূর্বে থেকেই ক্ষুব্ধ বলে মন্তব্য করেন মাদ্রাসা সুপার।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT