দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে আবহাওয়ার বিচিত্র আচরন দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে আবহাওয়ার বিচিত্র আচরন - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে আবহাওয়ার বিচিত্র আচরন

1:00 am , February 17, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বসন্ত বরন হলেও গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে আবহাওয়ার নানা বিরূপ আচরন পরিবেশে নানা মুখী প্রভাব ফেলছে। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’এ ভর অগ্রহায়নের অকাল ভারি বর্ষনের পরে পৌষের বৃষ্টিপাত যেমনি আমন ও রবি ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে, তেমনি মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্য প্রবাহ প্রলম্বিত হবার সাথে লাঘাতার মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশায় জনজীবনে ও জনস্বাস্থেও যথেষ্ট বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। গত ৫ জানুয়ারী বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৮.৫ ডিগ্রী সেলসিসে হ্রাস পায়। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৪ ডিগ্রী নিচে। অনুরূপভাবে গত ১১ ফেব্রুয়ারী তাপমাত্রার পারদ আবার স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রী নিচে নেমে ৯.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে স্থির হয়। এমনকি গত দুদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদও স্বাভাবিকের ওপরে উঠে যাচ্ছে।
এমনকি এবার ঠান্ডা জনিত রোগব্যাধি দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রতিককালের রেকর্ড অতিক্রম করে জেলাÑউপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে গত নভেম্বর থেকে দেড় লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসার জন্য এসেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে নিউমোনিয়া আর শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশী। মারাও গেছে কয়েকজন। তবে বেসরকারী পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যা সরকারী হাসপাতালগুলোর দ্বিগুনেরও বেশী বলে জানিয়ছে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। সে হিসেবে এবার দক্ষিণাঞ্চলে ৫ লক্ষাধীক মানুষ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া সহ শীতকালীন বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারী বরিশালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ১১ ফেব্রুয়ারী ঋতুরাজ বসন্ত শুরুর মাত্র ৩ দিন আগে তা ৯.৮ ডিগ্রীতে হ্রাস পায়। তবে পরের দিন ১২ ফ্রেব্রুয়ারী সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে বৃদ্ধি পেলেও ১৩ ফেব্রুয়ারী তাপমাত্রা আবার ১০ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পায়। ১৪ ফেব্রুয়ারী বসন্তের প্রথম দিনে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১১.৫ ডিগ্রীতে বৃদ্ধি পেলেও মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে বসন্তের দ্বিতীয় দিন, ১৫ ফেব্রুয়ারী সর্বনি¤œ তাপমাত্রার পারদ এক লাফে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়ে ১৬.৫ ডিগ্রীতে বৃদ্ধি পেলেও শেষ রাত থেকে সকাল প্রায় ১০ পর্যন্ত প্রচন্ড ঘন কুয়াশায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে নদ-নদী সহ বিশাল জনপদ ঢেকে যায়।
ফলে সড়ক, নৌ ও আকাশ যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরে। তীব্র কুয়াশার সাথে হালকা বাতাসে স্বাভাবিক জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পরে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, সাধারন দৃষ্টি সীমা ২৫ মিটারেরও নিচে নেমে আসে। ফলে বরিশাল বিমান বন্দরে সকালের দিকের দুটি উড়ান নিয়ে যথেষ্ঠ সমস্যা সৃষ্টি হলেও ১০টার পরে পরস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে রবিবার তাপমাত্রার পারদ আবার ২.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে ১৩.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে স্থির হলেও শণিবারের মত অতটা তীব্র কুয়াশার দাপট লক্ষনীয় ছিলনা দক্ষিণাঞ্চলে।
আবহাওয়া বিভাগের হিসেব অনুযায়ী জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশালে স্বাাভাবিক সর্বনি¤œ তাপমাত্রা থাকার কথা যথাক্রমে ১১.৯ ও ১৪.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অথচ এ দুটি মাসে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ যথাক্রমে ৮.৫ ও ৯.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসেও হ্রাস পায়। চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক দফায় মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্য প্রবাহ বয়ে গেছে। যা সম্প্রতিকালের অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় যথেষ্ট প্রলম্বিতও হচ্ছে।
আর এবার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অতিমাত্রায় নিচে নেমে যাবার পাশাপাশি লাগাতার ঘন কুয়াশার দাপটে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি ক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। বুলবুল-এ ভর করে মাত্র ৫ ঘন্টায় প্রায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে যেমনি প্রধান ফসল আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত ঠান্ডা আর কুয়াশা দাপটে বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরী’ সহ গোল আলু ‘লেট ব্লাইট’ রোগে সংক্রমনের শিকার হয়। উপরন্তু ফুলকপি ও বাঁধাকপি সহ বেশীরভাগ শীতকালীন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হবার পাশাপাশি তার গুনগত মানও বিনষ্ট হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT