চরবাড়িয়ার ভূমিহীনদের খাস জমি স্বচ্ছলদের নামে বন্দোবস্ত চরবাড়িয়ার ভূমিহীনদের খাস জমি স্বচ্ছলদের নামে বন্দোবস্ত - ajkerparibartan.com
চরবাড়িয়ার ভূমিহীনদের খাস জমি স্বচ্ছলদের নামে বন্দোবস্ত

3:12 pm , October 29, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সদর উপজেলার চরবাড়িয়ার বাসিন্দা মো. জলিল সরদার। পেশায় দপদপিয়া গ্যাস্টারবাইনের একজন পিয়ন। তবে সর্বমহলে তিনি ভূমি অফিসের একজন দালাল হিসেবেই পরিচিত। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি খাস জমি ক্রয়-বিক্রয় তার প্রধান কাজ। এসব করেই গড়ে তুলেছেন অর্থ সম্পদের পাহাড়। শুধু অর্থ সম্পদ নয়, তিনি নিজেই হয়েছেন ১৫ একর সরকারি খাস জমির মালিক। নিজের স্ত্রী, মা, ভাই এমনকি শ্যালিকার নামেও সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন।
তবে এ দুর্নীতি গ্যাস্টারবাইনের কর্মচারী জলিল সরদারের একার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন সদর উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার ফোরকান। যার পরোক্ষ সহযোগিতায় সদর উপজেলার চরবাড়িয়া-লামছড়ি মৌজার বিপুল পরিমান খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামে। সম্প্রতি এই দুই দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। যা তদন্তাধীন রয়েছে বলেও জানাগেছে। অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, ‘দীর্ঘ দিন ধরেই বরিশাল সদর উপজেলা ভূমি অফিসে সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ফোরকান। তিনি মাপঝোপের কারসাজিতে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমান খাস জমি। এমনকি পরবর্তীতে তা বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করছেন চড়া মূল্যে। তাকে এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন নগরীর দপদিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গ্যাসটারবাইনের পিওন জলিল সরদার। জলিল নিজেই বিভিন্ন নামে-বেনামে দখল করেছেন ১৫ একর জমি। যদিও এ ক্ষেত্রে তিনি তার ছদ্মনাম কাদের সরদার ব্যবহার করেছেন।
সম্প্রতি দুদকে দেয়া এক অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, ‘২০১৫ সালের ২০ আগস্ট চরবাড়িয়া মৌজায় জে.এল নম্বর ৪১ ও ৬০ নম্বর দাগে শূণ্য দশমিক ২০ একর খাস জমির মালিক হয়েছেন জলিল সরদারের স্ত্রী ছবি বেগম। এক্ষেত্রে নিজের নাম গোপন করে কাদের মিয়া নামে পরিচয় তুলে ধরেছেন জলিল।
একই মৌজায় ২০০১/৩৮৮৫ ও ২০০৩ নম্বর দাগে শূণ্য দশমিক ২০ একর জমির মালিক হয়েছেন উত্তর লামচরির বাসিন্দা আবুল কালাম মাসুদের স্ত্রী খাদিজা আক্তার। যিনি জমির দালাল মো. কাদের সরদারের শ্যালিকা।
চরবাড়ীয় লামচরি মৌজায় জে.এল নম্বর ৭২ ও ০৯ নম্বর দাগের শূণ্য দশমিক ২৫ একর জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে পুলিশ সদস্য আব্দুর রশিদের স্ত্রী নাহিদা বেগমের নামে। নাহিদার স্বামী আব্দুর রশিদ কাদের সরদারের আপন ভাই। কাদের অপর ছোট ভাই আব্দুর রব। যিনি দীর্ঘ বছর প্রবাসে ছিলেন। তার স্ত্রী ফারজানা বেগমের নামেও চরআইচা মৌজায় জে.এল ৭৮ ও ৮৬৬৬/৮৭৪৩, ৮৬৬৬/৮৭৪৪ দাগের শূণ্য দশমিক ৪২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। ফারজানার স্থায়ী ঠিকানা চরবাড়িয়া হলেও চরআইচার ভূয়া ঠিকানা দিয়ে ওই জমি বন্দোবস্ত পেয়েছে। কাদেরের মা আনোয়ারা বেগমের নামেও রয়েছে চরবাড়ীয় মৌজায় জে.এল ৪১ ও ২০০১/৩৮৮৫ নম্বর দাগে শূণ্য দশমিক ১১ শতাংশ খাস জমি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ছদ্মপরিচয়ে কাদের সরদার একাই নন, চরবাড়িয়া মৌজায় সরকারি খাস জমি দখলের তালিকায় রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম। তারাও ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ফোরকানের জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি খাজ জমির বন্দোবস্ত পেয়েছেন।
দুদকের কাছে দেয়া ওই অভিযোগে দেখাগেছে, সাপানিয়ার আব্দুল আজিজ এর ছেলে মো. জহিুল ইসলাম ওমরের নামে চরবাড়িয়া লামচরি মৌজায় শূণ্য দশমিক ২০ একর, উত্তর লামচরির মৃত চেরাগ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. মামুন হাওলাদারের নামে শূণ্য দশমিক ৪২ একর, একই মৌজায় পাশাপাশি দাগে মামুনের মা সোনাবরুর নামে শূণ্য দশমিক ৫০ একর জমি বন্দোবস্ত নেয়া হয়েছে।
উত্তর লামচরির মীর আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে মো. নুরে আলম মীরের স্ত্রী মাসুমা আক্তারের নামে চরবাড়িয়া লামচরি মৌজায় শূণ্য দশমিক ৩৫ একর খাস জমি বন্দবস্ত দেয়া হয়েছে। নুরে আলমের আপন ছোট ভাই মো. শুক্কুর মীর ও ভাই’র বৌ সাথী বেগমের নামে শূণ্য দশমিক ৩৫ একর জমি বন্দবস্ত দেয়া হয়েছে।
ভূমি অফিসের একটি দায়িত্বশিল সূত্র জানিয়েছে, ‘নুরে আলম মীর ও তার পরিবারের লোকেদের বিভিন্ন নামে বেনামে সরকারি খাজ জমি বন্দবস্ত দেয়া হয়েছে। এজন্য দালাল জলিল সরদার ওরফে কাদের সরদার ৭৫ হাজার টাকার করে নিয়েছে। যার মধ্যে থেকে ৩২ হাজার টাকা করে পেয়েছে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ফোরকান। বাকি টাকা চলে গেছে দালাল জলিল সরদার ওরফে কাদের সরদার।
তাছাড়া কাদের ও ফোরকানের সহযোগিতায় খাস জমির বন্দোবস্ত পেয়েছে রাড়ী মহলের বাসিন্দা কাসেম আলী তালুকদারের ছেলে তালুকদার মো. আজাদ। যিনি একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকারদার। তার নামে শূণ্য দশমিক ৫০ একর জমি রয়েছে। তাছাড়া নগরীর কলেজ রোডের বাসিন্দা ওবায়দুল করিমের ছেলে মো. ইউসুফ এর নামে চরবাড়ীয় মৌজায় শূণ্য দশমিক ৪২ একর জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে।
ভূমি অফিস সূত্রে জানাগেছে, সরকারি খাজ জমি বন্দোবস্ত পাবে ভূমিহীন অস্বচ্ছল পরিবার। এজন্য তাদের সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে হবে। পরে ভূমি বন্দোবস্ত কমিটির মাধ্যমে জমি বরাদ্দ দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্রে ভূমিহীন অস্বচ্ছল পরিবার পাচ্ছে না এই জমি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওই জমি চলে যাচ্ছে স্বচ্ছল পরিবারে। তাছাড়া সরকারি জমি বন্দোবস্ত পেতে ১ টাকা ফি দেয়ার বিধান থাকলেও সার্ভেয়ার ফোরকান আদায় করছেন ১০ হাজার টাকা করে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সার্ভেয়ার ফোরকানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কেননা জমি দেয়া বা নেয়ার কোন ক্ষমতা আমার নেই। এটার জন্য কমিটি রয়েছে। যার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সদস্য সচিব সহকারী কমিশনার (ভূমি)। আমরা শুধুমাত্র মাঠ পর্যায়ে কাজ করে কাগজপত্র তৈরী করে তাদের কাছে জমা দেই। তারাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন। তবে জলিল সরদারকে তিনি চেনেন বলে দাবি করে বলেন, ওই লোক মাঝে মধ্যে আমাদের অফিসে আসে। তবে সে কি কারনে এখানে আসে সেটা আমার জানা নেই।
অভিযোগের বিষয়ে গ্যাস্টারবাইনের পিওন জলিল সরদার ওরফে কাদের সরদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। তাছাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত দু’দিন পূর্বে বরিশাল থেকে বদলি হওয়ায় তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT