নাব্যতা সংকটে বন্দরে আটকা পড়ছে ঢাকাগামী লঞ্চ নাব্যতা সংকটে বন্দরে আটকা পড়ছে ঢাকাগামী লঞ্চ - ajkerparibartan.com
নাব্যতা সংকটে বন্দরে আটকা পড়ছে ঢাকাগামী লঞ্চ

3:04 pm , October 28, 2019

খান রুবেল ॥ বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে একটি চ্যানেল। বিকল্প চ্যানেল হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে লঞ্চগুলো। তার মধ্যে বরিশাল নৌ বন্দর সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে পলি জমে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে প্রতি রাতেই আটকে যাচ্ছে ঢাকাগামী লঞ্চ। নির্ধারিত সময়ের দুই থেকে তিন ঘন্টা বিলম্বে ঘাট ত্যাগ করছে লঞ্চগুলো। এমন পরিস্থিতিতে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো।
যদিও খুব শীঘ্রই বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের চ্যানেল ড্রেজিং কার্যক্রমের মাধ্যমে নাব্যতা সংকট দূর হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌ বন্দর কর্মকর্তা (যুগ্ম পরিচালক) আজমল হুদা মিঠু সরকার। জানাগেছে, ‘বরিশাল থেকে ঢাকা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। রাত্রিকালিন নৌ ভ্রমন আরাম দায়ক বিধায় নৌ রুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের পদচারনাও বেশি। কিন্তু চলতি মৌসুমে নদীতে নাব্যতা সংকটের কারনে চরম ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বরিশাল-ঢাকা নৌ পথ। এমনকি নাব্যতা সংকটের কারনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সহজ ও নিরাপদ নৌরুট গুলো।
বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের বিলাসবহুল এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের মাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের বরিশাল নদী বন্দর থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি পয়েন্ট নাব্যতা সংকটের কারনে ঝুকিপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। এসব পয়েন্ট হয়ে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয়।
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নাব্যতা সংকটের কারনে এরই মধ্যে মিয়ারচর চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেছে। গত দুই মাস ধরে ওই চ্যানেল হয়ে লঞ্চ চলাচল করছে না। মাস কয়েক পূর্বে মিয়ারচর চ্যানেলর প্রবেশ মুখে একটি বাল্কহেড ডুবে যায়। সেটি উদ্ধার না করায় চ্যানেলটির বিভিন্ন পয়েন্টে পলি মাটি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে। এ কারনে বিকল্প চ্যানেল মেঘনার উলানীয়া কালিগঞ্জ হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে করে গন্তব্যে পৌঁছতে দুই ঘন্টা সময় বেশি লাগার পাশাপাশি অন্তত তিন ব্যারেল (৬শত লিটার) তেল বেশি লাগে। কিন্তু ওই চ্যানেলটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম ঘটেছে। উত্তাল এই চ্যানেলটির প্রায় একশ মিটার এলাকাজুড়ে জোয়ারের সময়েও বর্তমানে সর্বোচ্চ ২ মিটার পানি থাকে। অথচ যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর তলদেশ চলাচলের সময় অন্তত ২ মিটার পানিতে ডুবে থাকে। তাই উলানীয়া কালীগঞ্জ চ্যানেলে মাটি ঘেষে লঞ্চ চলাচল করতে হয়।
তার মধ্যে ওই চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে থাকায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থাকে। তাছাড়া এ চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেলে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের লঞ্চগুলোকে চলাচল করতে হবে ভোলার ইলিশা হয়ে। এতে করে গন্তব্যে পৌছতে অন্তত আরও এক ঘন্টা সময় বেশি লাগবে। বেড়ে যাবে জ¦ালানি খরচও।
অপরদিকে বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের বাউশিয়া-নলবুনিয়া চ্যানেলে ইতিপূর্বে ৭-৯ মিটার পর্যন্ত পানি ছিল। কিন্তু বর্তমানে ওই চ্যানেলে জোয়ারের সময় দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত পানি থাকছে। আর ভাটার সময় থাকে মাত্র ১ মিটার পানি। যে কারনে ভাটার সময় বড় নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। বাকিটা পলি মাটি জমে নদীর গভিরতা কমে গেছে।
একই অবস্থা উপকন্ঠ শায়েস্তাবাদের কীর্তনখোলা ও আড়িয়াল খাঁসহ তিন নদীর মোহনায়। সেখানে পলিমাটি জমে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম ঘটেছে। তিন নদীর ওই মোহনায় ভাটার সময় চলাচল করতে গিয়ে প্রায়শই আটকে যায় নৌ-যান। এতে ঘটে দুর্ঘটনাও।
বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের মাস্টার মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে কীর্তনখোলা লঞ্চ ঘাটেও নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে প্রায় প্রতি রাতেই লঞ্চ ঘাটে আটকে যাচ্ছে। জোয়ারের অপেক্ষায় অন্তত দুই থেকে তিন ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গত ২৬ অক্টোবর রাতে এক সঙ্গে দুটি লঞ্চ এমভি কীর্তনখোলা-১০ ও এ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি বরিশাল নৌ বন্দরে আটকে যায়। যে কারনে রাত ৯টায় লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। রাত ১০টার পরে জোয়ার আসলে লঞ্চ দুটি ছেড়ে যায়। তাছাড়া ২৭ অক্টোবর রাতে আটকে যায় এমভি মানামী লঞ্চটি। জোয়ারের অপেক্ষায় থেকে নির্ধারিত সময়ের ৩ ঘন্টা পরে ঘাট ত্যাগ করতে হয় লঞ্চটির। এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের তুমুল বাকযুদ্ধও হয়। সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বরিশাল নৌ বন্দরের বর্তমান এমন পরিস্থিতি আর ১০-১২ দিন গেলে পন্টুনে কোন লঞ্চই বার্দিং করতে পারবে না। এমনকি বার্দিং করলেও সিডিউল অনুযায়ী চলাচল করতে পারবে না। এতে করে যাত্রীদের ভোগান্তি এবং লঞ্চ চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হবে। তাই নাব্যতা সংকট নিরসনে দ্রুত ড্রেজিং কার্যক্রম চালুর দাবি জানান লঞ্চের এই মাস্টার।
এদিকে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে নাব্যতা সংকট সৃষ্টির জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র অপরিকল্পিত ডেজিং ব্যবস্থাকেই দায়ি করছেন লঞ্চ মালিক এবং মাস্টাররা। এর কারন উল্লেখ্য করে তারা বলেন, ‘মাত্র এক বছর আগে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্যোগে নদীতে ড্রেজিং করা হয়েছে। কিন্তু বছর শেষ না হতেই যেসব চ্যানেলে ড্রেজিং করা হয়েছে তাতে আবার পলি জমে নদীর গভরতা কমে গেছে। কেননা ড্রেজিংয়ের বালু যে স্থান থেকে কাটা হচ্ছে তা আবার এক থেকে দেড়শ মিটার দুরেই ফেলা হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের বালু নদীতে না ফেলে অন্যত্র সরিয়ে ফেলবে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না। তাছাড়া ড্রেজিং কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন লঞ্চ মালিক এবং মাস্টাররা।
নাব্যতা সংকটের বিষয়ে বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা এবং বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ‘চলতি মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকে। এ কারনে কিছু কিছু পয়েন্টে পলি জমে নাব্যতার সৃষ্টি হয়। তবে খুব শিঘ্রই এ সমস্যা সমাধান হবে। যেসব পয়েন্টে পলি জমে নাব্যতা কমে গেছে সেসব পয়েন্টে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ড্রেজিং এর বালু নদীতে ফেলা ছাড়া কোন উপায় নেই। কেননা যে পরিমান বালু কাটা হয় তা স্থলে ফেলাবার মত জায়গা নেই। এ কারনে আমরা বিগত বছরেও আমরা ঘোষনা দিয়ে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করেছিলাম যে কারোর নি¤œজমি থাকলে তা বিনামূল্যে ড্রেজিংয়ের বালু দিয়ে ভরে দেয়া হবে। এবারও সেই একই ঘোষনা থাকবে। কিন্তু কেউ বালু না নিলে সে ক্ষেত্রে নদীতে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায়ও থাকছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT