3:07 pm , September 20, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের দুর্বল তদন্তে চাপা পড়তে চলা মুলাদী’র গৃহবধূ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে গৌরনদী থানা পুলিশ। তড়িঘরি করে লাশ দাফনের পূর্ব মুহুর্তে গৃহবধূকে হত্যার তথ্য ফাঁস করে তারা। এই কারনে রাতেই কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য পুনরায় মৃতদেহ উদ্ধার করতে বাধ্য হয়। সেই সাথে গৌরনদী থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে নিহত গৃহবধূর স্বামী ও তার শ^শুর। নিহত গৃহবধূ মুন্নী বেগম (২০) মুলাদী উপজেলার আলিমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ সরদারের ছেলে শামীম সরদারের স্ত্রী। প্রায় সাত মাস পূর্বে তাদের বিয়ে হয়েছিলো। এই ঘটনায় রাতেই মুলাদী থানায় মামলা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) জিয়াউল আহসান।
পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, ‘প্রায় সাত মাস পূর্বে আলিমাবাদ গ্রামের মৃত নজরুল ইসলাম ও নাসিমা বেগম দম্পতির মেয়ে মুন্নী বেগম এর বিয়ে হয় শামীম সরদারের সাথে। তবে মুন্নীর পরিবার নিতান্তই গরিব হওয়ায় বিয়ের সময় তার শ^শুর বাড়ির দাবী পুরন করতে পরেনি। এর ফলে বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক অশান্তি আর নির্যাতন সহ্য করতে হয় মুন্নীকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত মুন্নীকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্তও নেয় স্বামী শামীম ও তার পরিবার।
তবে তাদের সেই সিদ্ধান্তে বাঁধা হয়ে দাড়ায় মুন্নীর গর্ভের সন্তান। তাই তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার পরিকল্পনা করে শামীম ও তার স্বজনরা। সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে মুন্নীকে জোর করে ঔষধ সেবন করিয়ে গর্ভপাতের চেষ্টা করে। এতে মাত্রারিক্ত রক্তক্ষণের সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন গৃহবধূ মুন্নী। ওই অবস্থায় রাতে তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসে শ^শুর বাড়ির লোকেরা। রাত ১টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সাথে সাথে মৃত্যু হয় মুন্নীর।
এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে জানাগেছে, ‘হাসপাতালে ভর্তি’র সময় মুন্নীর অসুস্থতার কারণ হিসেবে ‘অজানা বিষপান’ উল্লেখ করা হয়। যে কারণে মৃত্যুর পরে প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে ধরে নেয় কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এমনকি ঘটনার সুষ্ঠুভাবে তদন্ত না করেই শুধুমাত্র নিহতের স্বামী ও মায়ের পরিবারের কথার ওপর ভিত্তি করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ময়না তদন্ত ছাড়াই মৃতদেহ দাফনের অনুমতি দেয়।
এদিকে গৌরনদী মডেল থানার ওসি গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘নিহত মুন্নীর নানাবাড়ী উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে। রাতে তড়িঘড়ি করে গৃহবধূর মৃতদেহ দাফন করা হচ্ছে বলে আমার কাছে খবর আসে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে আগে দাফন কাজ বন্ধ করা হয়। পরে নিহতের স্বামী শামীম ও শ^শুর সিরাজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায় বেরিয়ে আসে রহস্য।
ওসি বলেন, ‘স্বামী এবং শ্বশুর দু’জনেই স্বীকার করেছে গৃহবধূর উপর নির্যাতনের কথা। তারা জানিয়েছে গৃহবধূর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য তাকে জোর করে ঔষধ সেবন করানো হয়। এর পর পরই গৃহবধূর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের এক পর্যায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে সে বিষপান করেছে দাবী করে রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওসি গোলাম সরোয়ার আরো বলেন, ‘আসামীদের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে শেবাচিম হাসপাতালে। সেখানে আত্মহত্যা উল্লেখ করে একটি অপমৃত্যু মামলাও হয়েছে। যে কারনে ওই রাতেই কোতয়ালী মডেল থানায় পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করা হয়। এর পর রাতেই কোতয়ালী পুলিশ গৌরনদী পৌছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের শেবাচিমের মর্গে প্রেরণ করেন। তাছাড়া শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে গ্রেফতারকৃত স্বামী ও শ^শুরকে মুলাদী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে মুলাদীতে। যে কারনে সেখানে গিয়ে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া নিহতের মা ও ভাই মৃতদেহের ময়না তদন্ত করাতে রাজি হয়নি। তারা তাদের মেয়ের ময়না তদন্ত করাবে না বলেও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং কোতয়ালী মডেল থানার ওসি বরাবর লিখিত দিয়েছে। নিহতের মা ও ভাইয়ের সাক্ষ্যর উপর ভিত্তি করেই মৃতদেহ ময়না তদন্ত ছাড়াই শুধুমাত্র একটি অপমৃত্যু মামলা করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হলে আমরা রাতেই গৌরনদী থানা পুলিশের সহযোগিতায় মৃতদেহ উদ্ধার করে শুক্রবার দুপুরে ময়না তদন্ত করিয়েছি।
এদিকে মুলাদী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) জিয়াউল আহসান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যতটুকু বোঝা গেছে তাতে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ কারনেই নিহতের স্বামী এবং শ^শুর পরিবার মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তড়িঘরি করে লাশ দাফনের চেষ্টা করে। ঘটনাটি টের পেয়ে গৌরনদী থানা পুলিশের সহযোগিতায় গৃহবধূর দাফন আটকানো এবং দু’জনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিহতের স্বজনদের সাথে কথা হয়েছে। তারা দাফান শেষ করে এসে রাতেই এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হবে বলে জানিয়েছেন ওসি জিয়াউল আহসান।