2:58 pm , September 17, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল থেকে দুমকী পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক উন্নয়নে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাস্তা বর্ধিত করণে বক্স কাটিং পরবর্তী বালু ফিলিংয়ের পর দেয়া হচ্ছে না কম্প্যাশন। নি¤œমানের আরসিসি প্যালাসাইটিং নির্মান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশ্যেই চলছে অনিয়ম। এ অভিযোগ বিএনপি ঘরানার প্রভাবশালী ঠিকাদার মাহফুজ খান এর মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম খান ট্রেডিং এর বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বিরুদ্ধে। নির্বাহী প্রকৌশলীর সহযোগিতায় এম খান ট্রেডিং এর ঠিকাদার নির্মান কাজে অনিয়ম এবং দুর্নীতিতে মেতেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণেই প্রকাশ্য দুর্নীতির বিষয়টি জানার পরেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সওজ বিভাগ।
বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ‘সম্প্রতি দিনারের পুল হয়ে লক্ষ্মীপাশা-দুমকী আঞ্চলিক ২২ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়েছে। ঠিকাদারী চুক্তিতে উন্নয়ন কাজ পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম খান ট্রেডিং। উন্নয়ন কাজের আওতায় ৩টি পয়েন্ট থেকে পৃথক ২২ কিলোমিটার সড়কের পাশে বর্ধিতকরণ ও পুনঃসংস্কার করা হবে। সে অনুযায়ী বাকেরগঞ্জ পয়েন্টের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। রাস্তা বর্ধিতকরণের জন্য সড়কের দুই পাশে বক্স কাটিং ও বালু ফিলিং এর কাজ চলছে। তবে চলমান এই কাজেই অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তারা জানান, নিয়ম অনুযায়ী বক্স কাটিংয়ে বালু ফিলিং পরবর্তী কমপ্যাশন (চাপ প্রয়োগ) করতে হবে। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। রাস্তার দুই পাশে নি¤œমানের আরসিসি প্যালাসাইটিং দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ১২ মিলি রড দিয়ে প্যালাসাইটিং তৈরীর কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ১০ মিলি। প্রতিটি প্যালাসাইটিংয়ে ৬ ইঞ্জি পর পর রিং দেয়ার বিষয়টি কাজের স্টিমিটে থাকলেও দেয়া হচ্ছে ১২ ইঞ্জি পর পর। তাছাড়া প্যালাসাইটিং নির্মানে ৪ সিএফটি পাথর, ২ সিএফটি সিলেট বালু ও ১ সিএফটি সিমেন্ট দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। পাথরের সাথে ইটের গুড়ি এবং সিমেন্ট এর ব্যবহার হচ্ছে না বলেও অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের।
স্থানীয়রা আরো বলেন, ‘সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নের বাইরে বহুল প্রতিক্ষিত গোমা ব্রিজ নির্মান কাজও করছে এম খান ট্রেডিং। এ কাজেও নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ব্রিজ নির্মানের ক্ষেত্রে অকার্যকর (উৎমা-টিলা ভাঙা) পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে যার প্রমানও মিলেছে। তবে সড়ক ও ব্রিজ নির্মান কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কার্যসহকারী বা ইঞ্জিনিয়ার কেউ এর প্রতিবাদ করছে না।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে নির্মান কাজে অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আগেই এ বিষয়ে আমি অবহিত হয়েছি। এমনকি সরেজমিনে এর প্রমানও পেয়েছি। তাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নি¤œমানের কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। নি¤œমানের যেসব প্যালাসাইটিং ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো উঠিয়ে ফেলতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কাজে অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবী করেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে ভিন্নটা। পূর্বের প্যালাসাইটিং উঠিয়ে ফেলা দুরার কথা বরং নি¤œমানের ওই প্যালাসাইটিং দিয়ে এখনো কাজ করা হচ্ছে। বক্স কাটিং পরবর্তী বালু ফিলিং করে কমপ্যাশন করা হচ্ছে না। পূর্বের নিয়মেই চলছে সকল অনিয়ম-দুর্নীতি। উন্নয়ন এলাকা লক্ষ্মীপাশার হিরণ মোল্লার বাড়ি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এমনটিই দেখা গেছে। হিরন মোল্লার বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড়ে নি¤œমানের প্যালাসাইটিং দিয়েই চলছে নির্মান কাজ।
অভিযোগ উঠেছে, সওজ বিভাগের যোগসাজসেই কাজে অনিয়ম এবং দুর্নীতি হচ্ছে। যার নেপথ্যে রয়েছেন সজও এর নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা নিজেই। তার পরক্ষো সহযোগিতায় সাইড ইঞ্জিনিয়ার, কার্যসহকারীদের নিয়ে এমন দুর্নীতি করছে এম খান ট্রেডিং নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম খান ট্রেডিং মালিক মাহফুজ খানের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।