3:04 pm , September 15, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার রুকন্দি গ্রামে সেনা সদস্য আব্দুস সত্তার গোলদারের ছেলে মিজানুর রহমান ফোরকানকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার ৫ মাস অতিবাহিত হলেও প্রধান ঘাতকসহ চার আসামীকে আজো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে গ্রেফতারকৃত অপর ঘাতক অহিদ খানের ছেলে রুবেল খানকে রিমান্ডে নেয়া হলেও জামাই আদরে রাখায় কোন তথ্যই বের হয়নি। এদিকে এ ঘটনায় একই এলাকার জুয়েল হোসেন মীর বিচারকের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ফোরকানের হত্যার বিষয়টি স্পস্ট করেছে।
এ বছর ১৫ ফেব্রুয়ারী মেহেন্দীগঞ্জ থানায় নিহতের স্ত্রী পিয়ারা বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। আসামী হচ্ছে ঃ ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে তোতা গোলদার, তাহের খানের ছেলে রিয়াজ খান, হাফেজ খানের ছেলে আকতার খান, অহিদ খানের ছেলে রুবেল খান, দুলাল খানের ছেলে নয়ন খান ও জেবুল বেপারীর ছেলে পারভেজ বেপারী। এদের মধ্যে আকতার ও রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে আকতার জামিনে রয়েছে। রুবেলকে ২দিনের রিমান্ডে নেয়া হলেও নিহতের স্বজনদের দাবি জামাই আদরে রাখার কারনে কোন তথ্যই দেয়নি রুবেল। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সত্তার গোলদার ও তার ছেলে মেবিন গোলদার জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফোরকারনের জমির উপর থেকে নৌযানের মালামাল উঠানামা করানো হয়। এ জন্য ফোরকান ওই সকল নৌযান দিয়ে মসজিদের জন্য চাঁদা উত্তোলন করে আসছিল। তা পছন্দ হয়নি মামলার প্রধান ঘাতক তোতার। সে ফোরকানকে ওই স্থান থেকে সরে যেতে বলে। তারা নৌযান থেকে বড় অংকের চাঁদা উত্তোলন করবে বলে জানায়। কিন্তু এতে ফোরকান রাজী না হওয়ায় তাকে দুইদফা মারধর করা হয়। এরপরও ফোরকান কোনভাবেই তাদের হাতে নৌযান থেকে চাঁদা উত্তোলনের দায়িত্ব না দেয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল তোতাসহ অপর আসামীরা। তাদেরও ইচ্ছে ছিল নৌযান থেকে বড় অংকের চাঁদা উত্তোলন করে তা আত্মসাতের। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় পরিকল্পিতভাবে রুবেল মোবাইল করে ফোরকানকে বাসা থেকে বের করে। বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ থাকে ফোরকান। ১৫ ফেব্রুয়ারী সকালেও ফোরকান বাসায় না আসায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করা হয়। এমনকি তার সাথে থাকা মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। বিকেলে খলিল মিরাদের বাগানে ফোরকানের লাশ দেখে এলাকাবাসী আমাদের খবর দেয়। তখন আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ সনাক্ত করি। এ সময় ফোরকানের মাথায় ও হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। ওই দিন পুলিশ লাশ উদ্ধার করে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতের পিতা ও ভাইয়ের দাবি ফোরকানকে চাপা মাইর দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এতে তার হাতে আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে এবং মাথায় ক্ষতের চিহ্ন হয়েছে। এ সময় একাধিক ঘাতকদের সাথে ফোরকানের ধস্তাধস্তি হয় বলে ধারণা তাদের। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ মাত্র দুইজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। বাকী আসামীদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। অপরদিকে রুবেলের বাবা প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। তার সাফ কথা রুবেল জামিনে বের হওয়ার পর তোমাদের জ্যান্ত মাটি দেবো। এছাড়া আসামীদের স্বজনরাও তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। অথচ রুবেলকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সকল ঘটনা বেরিয়ে আসে। তারা আরো জানান, এজাহারভূক্ত আসামী ছাড়া ওই এলাকার জুয়ের মীরকেও আটক করেছির পুলিশ। জুয়েল বিচারকের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারী রাতে আমি, আমার স্ত্রী ও একই এলাকার সবুজ আমার মুরগীর ফার্মে প্রবেশ করি। তখন আমার ফার্ম হতে ১০০ হাত দূরে মন্টু দফাদারের সুপারী বাগানের মধ্যে ডাক চিৎকার ও বাঁচাও বাঁচাও বলে শব্দ পাই। তখন আমার স্ত্রী বলে একটা লোককে মেরে ফেলছে তোমরা গিয়ে কিছু করো। তখন আমি আমার স্ত্রী ও সবুজ ফার্ম থেকে বের হয়ে রাস্তার উপর আসি। তখন দেখতে পাই তোতা গোলদার সুপারী বাগান থেকে রাস্তার উপর উঠছে। তোতা সম্পূর্ণ উলঙ্গ ছিল। কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তোতা বলে, ফোরকান ও রুবেল তাকে মেরেছে। তখন আমরা তোতার কাপড় খুজতে সুপারী বাগানে গেলে সেখানে ফোরকানের লাশ দেখতে পাই। তখন তোতার কাছে ফোরকানের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তোতা বলে রুবেল হয়ত ফোরকানকে হত্যা করেছে। ফোরকানের লাশের কাছে তোতার লুঙ্গি, মোবাইল, লাইট, টিফিনবক্স ও মানিব্যাগ পাই। তোতা মোবাইলে কল দিয়ে আবুল কালাম ও আকতারসহ অনেকের সাথে কথা বলে। আমি ও সবুজ মহিলা মেম্বর কানিজ ফাতেমা বিউটির বাড়িতে গিয়ে তাকে সবকিছু খুলে বলি। মেম্বর বিউটি আমাদের চুপ থাকতে বলেন। পরে আমি ও সবুজ পুনরায় ঘটনাস্থলে আসি। রিয়াজ, নয়ন, পারভেজ ও আরো কয়েকজন মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে আসে। তোতাসহ আরো ৬ জন আমাদের জিজ্ঞাসা কেের আমরা ঘটনা কিছু দেখেছি কিনা। আমরা বলি আমরা ঘটনার কিছু দেখিনি। তখন আকতার বলে তোমরা বাড়ি চলে যাও। এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলে চুপ করে থাকো। নিহতের পিতা সাবেক সেনা সদস্যের দাবি জুয়েলের জবানবন্দিতে তার ছেলেকে হত্যার বিষয়টি স্পষ্ট। কিন্তু তারপরও পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে পারছে না। এমনকি রুবেলকে রিমান্ডে নিয়ে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও বিষয়টি আরো স্পষ্ট হতো বলে দাবি করেছেন তিনি। মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী পিয়ারা বলেন, মামলায় প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে কোন ধরনের সহায়তা না পেয়ে পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করি। পুলিশ সুপার স্যার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে দেন। কিন্তু এখনো সেই আগের মতই অবস্থা। মামলার কোন অগ্রগতি দেখছি না। এ ব্যাপারে বর্তমানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেন্দীগঞ্জ থানার পরিদর্শক মজিবুর রহমান বলেন, আসামীরা সকলে পলাতক। এ কারনে আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।