2:54 pm , September 15, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আদালত চলাকালীন সময়ে বিচারকের সামনে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এক নারী। গতকাল রোববার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (ক অঞ্চল) আদালতের বিচারক রুম্পা ঘোষের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এজলাসে উপস্থিত থাকা প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানায়, বানারীপাড়া উপজেলার নলশ্রী গ্রামের কবির হোসেনের স্ত্রী পারভিন বেগমের দায়েরকৃত মামলার শুনানি কালে পারভিন এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সৃষ্টি করে। পারভিন এক দারিদ্র অর্থলোভী মহিলা। এর আগে তিনি অর্থলোভে নিজ গর্ভের দুই সন্তান বিক্রি করে দিয়েছে। গত জানুয়ারী মাসের দিকে তার আরও একটা পুত্র সন্তান হয়। যার নাম জাসান আবদুল্লাহ। তিনি ওই সন্তান বিক্রি করার আহবান জানালে একই উপজেলার বেতাল গ্রামের নিঃসন্তান গাফফার ফরাজির স্ত্রী নাছরিন আকতার রাজি হয়। তিনি একলাখ টাকা দিয়ে গত ২৯ জুন রোয়েদাদ নামা তৈরি করে নোটারি পাবলিক আদালতের মাধ্যমে পারভিনের সন্তান জাসান আব্দুল্লাহকে কিনে নেয়। কিছুদিন অতিবাহিত হলে পারভিন আবার লোভে পড়ে। নাছরিনের নিকট আরও টাকা দাবি করে। অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি তার সন্তান নেয়ার দাবি জানায়। টাকা ফেরত চাইলে পারভীন বানারীপাড়া থানা পুলিশের স্মরনাপন্ন হয়। থানা পুলিশ উভয় পক্ষের কথা শুনে পারভিনকে সন্তান বিক্রি করে নেয়া টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়। পারভীন টাকা না দিয়েই সন্তান দাবি করে। গত ২৪ জুলাই সন্তান জোড় করে রেখে দেয়ার অভিযোগ দিয়ে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে পারভিন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (ক অঞ্চল) আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত বিবাদী নাছরিনকে সন্তান সহ আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেন। গতকাল ধার্য্য তারিখে নাছরিন আদালতে উপস্থিত হয়ে এডভোকেট হুমায়ূন কবির-১ এর মাধ্যমে সন্তান নেয়ার সময় করা রোয়েদাদ নামা দাখিল করেন। বাদী পারভীনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সাক্ষর করার কথা অস্বীকার করে। আদালতকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টায় পরিকল্পিত ভাবে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দাড়িয়েই সন্তান না দিলে কোমড়ে গুজিয়ে রাখা কীটনাশকের বোতল বের করে পান করতে উদ্যত হয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রূম্পা ঘোষ হতচকিত হয়ে উঠে। তিনি নিজেই হাত দিয়ে বিষপান করতে বাধা দিয়ে পারভীনের হাত থেকে কীটনাশকের বোতল ছিনিয়ে নেয়। পারভীনকে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখে শুনানি মুলতবি করে নতুন করে দিন ধার্য্য করে দেন। উপস্থিত আইনজীবীরা পারভীনকে মানসিক রোগী বলে আখ্যা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে বিবাদীর আইনজীবী এডভোকেট হুমায়ূন কবির বলেন, আদালতে ওপেন এজলাসে বিষপান করার চেষ্টার ঘটনা এই প্রথম। এটা নিঃসন্দেহে আদালতকে প্রভাবিত করা সহ বিভ্রান্ত করার পরিকল্পিত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এধরণের ঘটনা ঘটানোর জন্য পারভিনের কঠিন বিচার হওয়া উচিৎ। যদি দুর্ঘটনা ঘটতো তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট সহ আদালত সংশ্লিষ্টদের বিপাকে পড়তে হত। ম্যাজিস্ট্রেটের সুদক্ষতায় একটা কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা হয়েছে।