চরমোনাইতে তিনতলা বিশিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ চরমোনাইতে তিনতলা বিশিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ - ajkerparibartan.com
চরমোনাইতে তিনতলা বিশিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

3:22 pm , September 9, 2019

শামীম আহমেদ ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের চর গোপাল জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয় বহুমূখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের তিন তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত বালি ব্যবহার করে ভবনের ফ্লোর, ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টারের কাজ শেষ করা হয়েছে। অন্যান্য কাজ শেষ করে হস্তান্ততরের আগেই ভবনের বিভিন্ন অংশের প্লাস্টার খসে পড়তে শুরু করেছে।ফলে ভবনের বাকি থাকা আংশিক কাজ শেষের আগেই স্থানীয়রা ক্ষুব্দ হয়ে নিন্মমানের কাজ করায় ঠিকাদারের নিয়োগকৃত শ্রমিকদের সবধরনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঠিকাদার নামেমাত্র ভবন নির্মান করে কোটি টাকা লাভবানের আশায় শুধু পুকুর নয় সাগর চুরির মাধ্যমে আশ্রয় কেন্দ্রের নামে মরন কেন্দ্র নির্মান করছেন। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ভবন নির্মানকাজের সময় দূর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তরের প্রকৌশলীসহ বরিশাল সদর উপজেলার বেশ কয়েকজন পরিদর্শক (পিআইও) দায়িত্ব পালনকালে তাদের চোখের সামনে ঠিকাদার নিন্মমানের মালামাল ব্যবহার করে কাজ সস্পন্ন করার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এখনও বেশ কিছু অংশের কাজ বাকি থাকতেই তিন তলা ভবনের বারোটি কক্ষের প্রতিটি ফ্লোরসহ ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে শুধু বালি বের হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় প্রবনতা থেকে উপকূলীয়বাসীকে দূর্যোগকালীন সময়ে জানমাল রক্ষার জন্য দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সংলগ্ন ভয়ঙ্কর কালাবদর ও আড়িয়াল খাঁ দুই নদীর মধ্যখানে থাকা চটুয়া চরগোপাল (নলচর) এলাকার মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এজন্য ২ কোটি ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৩৩১ টাকা ৬০০ পয়সা অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তিনতলায় ১২টি কক্ষ বিশিষ্ট বহুমূখী আশ্রয় কেন্দ্রটি নির্মান করার জন্য বিশ্ব বন্ধু ইন্টারন্যাশনাল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তপন কুমার সাহাকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১০ জুলাই ৭৮০.০৮ বর্গমিটার জমিতে ১২০০ ব্যক্তির ধারন ক্ষমতার জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের কাজের নির্দেশ দেয়া হয়। যা পরবর্তীতে ১৯ সালের ৩০ জুন শেষ করার কথা থাকলেও অদ্যবর্ধি কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রব জানান, ঠিকাদারের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও সাগর চুরির মাধ্যমে শেষ করার পূবেই স্থানীয় চরবাসীর কাছে কাজের অনিয়ম ধরা পরলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুরো কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সরেজমিনে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহারের তথ্য ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে ঠিকাদার ও তার নিয়োগকৃত সাইট দেখার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা পূর্বে ভবন নির্মান কাজে যেসব শ্রমিক কাজ করেছেন তাদের বিদায় দিয়ে নতুন করে রাজশাহী থেকে শ্রমিক এনে ধ্বসে পরা প্লাস্টার ও ফ্লোরের কাজ নতুন করে করিয়ে পুরো অনিয়মের ধামাচাঁপা দেয়ার চেষ্ঠা করেন।
নিন্মমানের কাজের ব্যাপারে শ্রমিক সর্দার বাইতুল ইসলাম বলেন, প্রথমপর্যায়ের কাজে তারা যুক্ত ছিলেন না। মাত্র ১০দিন পূর্বে তাদের রাজশাহী থেকে আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিন্মমানের কাজের অভিযোগে এলাকাবাসী তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। বিষয়টি ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
চটুয়া চরগোপালপুর নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, কাজের সময়ে ঠিকাদারের নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ার ও তাদের শ্রমিকরা আমাদের কাজের সাইডে আসতে বাঁধা প্রদান করেন। এ বিষয়টিসহ নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের ব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইসমাইল হাওলাদার বলেন, নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান করায় ভবন হস্তান্তরের আগেই বিভিন্ন অংশ খসে পরতে শুরু করেছে।
কাজের দ্বিতীয়পর্যায়ে তদারকি করা সদর উপজেলার প্রকল্প পরিদর্শক মোঃ মোজাহিদুল ইসলামের (বর্তমানে মেহেন্দিগঞ্জে পিআইও হিসেবে কর্মরত) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার সময়ে কোন অনিয়ম হয়নি। আমি বদলী হয়ে আসার পর কি হয়েছে তা বলতে পারবোনা। বর্তমানে বরিশাল সদর উপজেলায় কর্মরত (পিআইও) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আমি অল্প কয়েকদিন হয় এখানে এসেছি। এরমধ্যে কয়েকবার সাইড পরিদর্শন করেছি। সেসময় তেমন কোন অনিয়ম চোখে পরেনি। কাজের অনিয়মের কথা শুনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা ঠিকাদার তপন বাবুর সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ঠিকাদার বেইড ও ছাদের বিল বাবদ প্রায় ৯০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের প্রথম পর্যায়ে সাইট দেখাশুনার দায়িত্বপালনকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ওই কাজের পাইলিং পর্যন্ত ছিলাম। এরমধ্যে কোন অনিয়ম হয়নি। গত চার মাস পূর্বে আমাকে অন্য প্রজেক্টের কাজের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো। নদী ও চরবাসীর দূর্যোগকালীন সময়ে তাদের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র করা হচ্ছে, কারো জীবনহানীর জন্য আশ্রয় কেন্দ্র করা হচ্ছেনা। কাজের মধ্যে কোন ধরনের অনিয়ম হলে ঠিকাদারকে ভবন ভেঙ্গে নতুন করে কাজ করে দিতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দূর্যোগকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের জীবন রক্ষার জন্য নতুন আশ্রয় কেন্দ্র করে দিচ্ছেন। আর সেখানে ঠিকাদার ভবন নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়ম করে কোটি টাকা ব্যবসা করে ভবন বুঝিয়ে দিতে চাইলে তারা ক্রটিযুক্ত আশ্রয় কেন্দ্র বুঝে নেবেন না। এ ব্যাপারে তারা (স্থানীয়রা) নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দূর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও দূর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ব বন্ধু ইন্টারন্যাশনাল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক তপন কুমার সাহার সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে দুইদিন সময় দেন, আমি সামনা সামনি এসে কথা বলবো, বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT