মেরিন ওয়ার্কসপ মাঠ ও দূর্গাসাগরে পর্যটন মোটেল-ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা মেরিন ওয়ার্কসপ মাঠ ও দূর্গাসাগরে পর্যটন মোটেল-ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা - ajkerparibartan.com
মেরিন ওয়ার্কসপ মাঠ ও দূর্গাসাগরে পর্যটন মোটেল-ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা

2:48 pm , September 7, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিভাগীয় সদরে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমবারের মত জাতীয় পর্যটন প্রতিষ্ঠানের আবাসন ও চিত্ত বিনোদন সুবিধা সম্বলিত অবকাঠামো নির্মিত হতে যাচ্ছে। এরমধ্যে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল মহানগরীতে একটি পর্যটন মোটেল সহ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং নগরীর অদুরে দূর্গাসাগর দীঘির পাড়ে ১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বিশ্রামাগার সহ পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হবে। ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ভ্রমন পিপাসু মানুষের দীর্ঘদিনের আবাসন সংকট সহ চিত্ত বিনোদনের অভাব ঘুচতে যাচ্ছে। দূর্গাসাগরের প্রকল্পটি ইতোমধ্যে চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে। আগামী জানুয়ারী মাসের মধ্যে অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু হবে।
বরিশালই একমাত্র বিভাগীয় সদর যেখানে এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যটন প্রতিষ্ঠানের কোন স্থাপনা নেই। নতুন এসব অবকাঠামো নির্মিত হলে শুধু বরিশাল মহানগরী নয় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন সুবিধাই সম্প্রসারিত হবে। এমনকি এ পর্যটন মোটেল কুয়াকাটা সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ভ্রমনে আসা পর্যটকদের জন্য একটি ‘ট্রানজিট স্পট’ হিসেবেও কাজ করবে বলে মনে করছেন পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বশীল মহল। একই সাথে ঢাকার বাইরে বরিশালে একাটি ‘হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম ট্রেনিং সেন্টার’ স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এর ফলে দেশে বিদেশে বিপুল চাহিদার এ ধরনের দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা সম্ভব হবে। উপকৃত হবে দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষিত বেকার তরুন সমাজ। কারন এসব তরুনদের বেশীরভাগের পক্ষেই ঢাকায় গিয়ে প্রশিক্ষন গ্রহনের সামর্থ নেই। পাশাপাশি সারাদেশে একটিমাত্র ট্রেনিং সেন্টার থাকায় সেখানে ভর্তি হওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার।
দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বরিশালে পর্যটন সুবিধা সম্প্রসারনের উদ্যোগ গ্রহন করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলাপ করে সবুজ সংকেত লাভের পরে নগরীতে পর্যটন মোটেলের জন্য জমি খুজতে শুরু করেন। কিন্তু সুবিধাজনক স্থানে কোন খালি জমি না পাওয়ায় অবশেষে নদী বন্দরের কাছে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিত্যক্ত নৌ কারখানার খালি জমিতে পর্যটন মোটেল নির্মনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের দীর্ঘ টানা পোড়েনে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। অবশেষে তা প্রধানমন্ত্রীর গোচরীভূত করার পরে তার নির্দেশে নদী বন্দরের অদুরে বাঁধ রোডের পাশে কীর্তনখোলা নদী তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র মেরিন ওয়ার্কসপের অভ্যন্তরে এক একর জমি পর্যটন করপোরেশনকে ৩০ বছরের জন্য লীজ প্রদানে সরকারী নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে দুটি রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়েছে বছর দুয়েক আগে। চুক্তি অনুযাযী লীজকৃত জমিতে পর্যটন স্থাপনা গড়ে তুলবে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন-বিপিসি। জমির ভাড়া ছাড়াও পর্যটন মোটেলটির লাভ-লোকসানের অংশীদারিত্ব থাকবে বিআইডব্লিউটিএ’র।
তবে চূক্তিপত্র সম্পাদনের প্রায় দু বছর পরেও পর্যটন মন্ত্রনালয় বিষয়টি নিয়ে খুব বেশীদুর এগুতে পারেনি। বিপিসি’র তরফ থেকে ‘বরিশাল পর্যটন মোটেল ও ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন প্রকল্প’ নামের একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি মন্ত্রনালয়ে দাখিল করা হয়েছে। একাধীক লিফট সম্বলিত ৮তলা মোটেল ভবনটিতে ৮০টি কক্ষ থাকবে। যারমধ্যে দুটি এক্সিকিউটিভ স্যুট, ৩৮টি দৈত শয্যার কক্ষ ও ৪০টি তিন শয্যার কক্ষ থাকবে। এছাড়াও অত্যাধুনিক মানসম্মত রেষ্ট্রুরেন্ট, পুল ক্যাফে, সুইমিং পুল, জিম ও স্পা সুবিধা থাকবে এ মোটেলটিতে। ভবিষ্যতে এখানে রিভার ক্রুজ-এর ব্যবস্থা সম্বলিত আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এখন থেকে পর্যটকগন মোটেলটির পার্শ্ববর্তি কীর্তনখোলা নদীতে নৌ-বিহারও করতে পারবেন।
বরিশালের এ পর্যটন মোটেলে সংযূক্ত ট্রেনিং সেন্টারটিতে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন করে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম-এর ওপর প্রশিক্ষন গ্রহন করতে পারবেন। সাড়ে ৩ মাসের এ প্রশিক্ষন শেষে সার্টিফেকেট প্রদান করা হবে। যা আন্তর্জাতিক ভাবেও স্বীকৃত। বরিশালে মোটেল ও ট্রেনিং সেন্টারটির কাজ আগামী বছরের জানুয়ারী থেকে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে ডিপিপি’তে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে প্রকল্পটির চুড়ান্ত অনুমোদনের ওপর। এখনো এসংক্রান্ত ডিপিপি মন্ত্রনালয়ের যাচাই পর্যায়ে রয়েছে। সেখানের অনুমোদন শেষে পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। পরিকল্পনা কমিশনের কারিগরি কমিটি ও প্রী-একনেক’এর অনুমোদনের পরে তা চুড়ান্ত অনুমোদনে একনেক-এ উপস্থাপন করতে কতদিন লাগবে তা বলতে পারেন নি পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বশীল মহল।
অপরদিকে বরিশাল মহানগরী থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দুরে মাধবপাশার ঐতিহাসিক দূর্গাসগর দীঘির পাড়ে ১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক বিশ্রামার সহ রেষ্ট্রুরেন্ট ও পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন লাভ করেছে। আগামী জানুয়ারীর মধ্যেই প্রকল্পটির অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরুর কথা রয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী দূর্গাসাগর দীঘির পূর্বপাড়ে ৩ তলা ভীতের ওপর একটি দোতালা বিশ্রামাগার ভবন নির্মান করা হবে। নিচতলায় রেষ্ট্রুরেন্ট ও সুভেনির সপ থাকবে। দোতালায় মূল বিশ্রামাগারে থাকবে ৮টি কক্ষ। এছাড়া পূর্ব পাড়ে একটি ঘাটলা ও দক্ষিণ পাড়ে কয়েকটি পিকনিক শেড নির্মান করা হবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন করপোরেশনের জিএম-পরিকল্পনা। দীঘিটির চার পাশে ওয়াকওয়ে নির্মান সহ পুরনো দুটি ঘাটলা সংস্কার করা হবে। তবে দীঘিটির পাড়ে একটি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপনের প্রস্থ্বানা বাদ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
পর্যটন করপোরেশনের এ দুটি প্রকল্পই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পর্যটন করপোরেশন সরাসরি বাস্তবায়ন করবে বলে জানা গেছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT