কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে ২০৯ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে ২০৯ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম - ajkerparibartan.com
কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে ২০৯ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম

3:24 pm , August 28, 2019

শামীম আহমেদ ॥ ২০৯ কোটি টাকা বরাদ্দে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ড্রেজিং করে নদীর বালু নদীতে ফেলা, পর্যাপ্ত বালুর বস্তা না ফেলাসহ ব্লক তৈরীতেও রয়েছে এ অনিয়মের অভিযোগ। প্রকল্পের সময়সীমার মধ্যে বালুর বস্তা, ব্লক ও নদী খনন করার কথা থাকলেও আদৌ তা সম্ভব কিনা এ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলোর দাবি, দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে রাক্ষুসী নদীর কবলে ভিটেমাটি হারিয়ে তাদের পথে বসতে হবে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ব্লক তৈরীতে অনিয়মের বিষয়টি তার নজরে এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে ২০৯ কোটি টাকার প্রকল্পের এ কাজটি শুরু হয় চলতি বছরের শুরুতে। নদীর গতিপথ ফেরাতে ৪১ লাখ ঘণমিটার বালু উত্তোলনের জন্য বরাদ্দ করা হয় নদী খনন বাবদ ৫৬ কোটি টাকা। তবে এ জন্য চারদিকে বেষ্টনি দিয়ে নদীর তীরে দুইটি ডাইক তৈরী করার নির্দেশনা থাকলেও ডাইক করা হয়েছে একটি। অপরটি ডাইক তৈরী না করে বরং নদীর বালু কেটে নদীতেই ফেলছে জোডিয়াক ড্রেজিং লিমিটেড। খুলনা শিপইয়ার্ড থেকে সাব কন্ট্রাকে নেয়া কনফিডেন্স গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জোডিয়াক ড্রেজিং লিমিটেডের এ প্রকল্পটি ২০২০ সালের মে মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের বাকী ১৫৩ কোটি টাকা বালুর বস্তা ও ব্লকের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ব্লকের মান নিয়েও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ব্লক তৈরীতে যে সাইজ এবং মানের পাথর ব্যবহার করার কথা রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাও ব্যবহার না করার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আজিম সরদার জানান, নদীর বালু কেটে নদীতেই ফেলা হচ্ছে। এতে করে কোন সুফল পাওয়া যাবেনা। তিনি আরও জানান, তাদের ঘরবাড়ি নদীর তীরে। ধীরগতিতে প্রকল্পের কাজ চলায় রাক্ষুসী নদীর ভাঙনে যেকোন সময় তাদের বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আতঙ্কে তাদের থাকতে হচ্ছে।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, তারাই এখানে প্রথম আন্দোলন করেছেন ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য। দাবীপূরন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তা অপরিকল্পিত। তারা বলেন, প্রধান সড়কসহ যেখানকার ঘর বাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে বালুর বস্তা না ফেলে অন্যপাশ দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, বালুর বস্তা ফেলতে হবে নদীর তীরের কমপক্ষে ৫০ফিট নিচ থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত। নতুবা নিচের দিকে ভাঙ্গতে শুরু করলে ওপরের বস্তাগুলো আস্তে আস্তে নদীর তলদেশে চলে যাবে। সে নিয়মও মানছেন না ঠিকাদারের লোকজনে। এমনকি ব্লক তৈরীতেও মরা পাথর এবং বড় পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও তারা (স্থানীয়রা) অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জুডিয়াক ড্রেজিং লিমিটেডের প্রকল্প প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের সিডিউল মোতাবেকই তারা কাজ করছেন। নিয়মের বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ডাইকের বিষয়ে তিনি বলেন, আরেকটি ডাইক করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু চর অনেক নিচু হওয়ার কারনে আগে ডাইকের স্থানে বালু ফেলে ওই এরিয়া উঁচু করতে হবে। নতুবা চারদিক বেষ্টনি দিয়ে ডাইক তৈরী করা সম্ভব হবেনা। বালু ভরাট করেই ডাইক তৈরী করা হবে। ব্লক এবং বালুর বস্তার বিষয়ে তিনি জানান, সাব কন্ট্রাকে এগুলোর কাজ অন্য প্রতিষ্ঠান নিয়েছে। ব্লকের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বরত একজনে জানান, ব্লক তৈরীতে যে পাথর অর্ডার করা হয়েছিলো পাথর বিক্রেতা ট্রাকের উপরে তা দিয়ে ভেতরে বড় পাথর দিয়েছে। যা ফেরত দিয়ে সিডিউল অর্ডার অনুযায়ী পাথর আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম জানান, ব্লক তৈরীতে অনিয়মের বিষয়টি তার নজরে এসেছে। তার কাছে একটি ছবিও রয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধীরগতিতে কাজ হোক, তবুও অনিয়ম মেনে নেয়া হবেনা। ফ্রেশ পাথর আনার পর কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এরা ভিতরে সিঙ্গেলস পাথর ব্যবহার করে উপরে সিডিউল অনুযায়ী পাথর দিয়ে রেখেছিলো। পরে তা খুচিয়ে বের করার পর পাথরগুলোকে রিজেক্ট ঘোষনা করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি চাই কাজটি সুন্দর এবং স্বচ্ছভাবে হোক। কাজে সাংবাদিকরা নজরদারি করলে কাজটি আরও সুন্দর হবে। প্রকল্পটির দিকে স্পেশালভাবে মনিটরিং করা হবে বলেও প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে সহমত পোষন করে বলেন, কোন অনিয়ম হলে ঠিকাদারের বিল আটকে দিয়ে বিধিমোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT