হাজারো পর্যটকে মুখরিত ভাসমান পেয়ারার রাজ্য হাজারো পর্যটকে মুখরিত ভাসমান পেয়ারার রাজ্য - ajkerparibartan.com
হাজারো পর্যটকে মুখরিত ভাসমান পেয়ারার রাজ্য

3:23 pm , August 28, 2019

সাঈদ পান্থ ॥ প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকে মুখরিত হচ্ছে বরিশাল-পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা নিয়ে গড়ে ওঠা ভাসমান পেয়ারার রাজ্য। নয়নাভিরাম পেয়ারা রাজ্য দর্শনে উৎসবের আমেজে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসছে এখানে। প্রতি বছরের আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র এই তিন মাস পেয়ারার মৌসুম। এসময় পাকা পেয়ারার মৌ মৌ গন্ধ নিতে আসে দেশ ও বিদেশের অনেক পর্যটক। তারই ধারাবাহিকতায় মুখরিত এই পেয়ারার রাজ্য। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ ভাসমান হাট এটি। যা পুরো বাংলাদেশেই অনন্য। আর এই হাট বসেছে ঝালকাঠি জেলার ভীমরুলী ও মাদ্রা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) কুড়িয়ানা, আটঘর, আতা, বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার নেরার কাঠি, জাম্ভুদ্বীপ, ব্রাহ্মনবাড়ি ও সৈয়দকাঠিতে। দেশের সিংহভাগ পেয়ারা উৎপাদন হয় এখানে। আর এ অঞ্চলের চাষিরা ডিঙিতে বসে বিকিকিনি করে এই পেয়ারা। এই পেয়ারাকে স্থানীয় ভাষায় গৈয়া কিংবা হবরী বলা হয়। পুষ্টিমানের দিক থেকে একটি পেয়ারা চারটি আপেলের সমতুল্য বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছে। তাই পেয়ারাকে ভালবেসে ‘বাংলার আপেল’ আবার কেউ ‘গরিবের আপেল’ হিসাবে গণ্য করে। এখানে প্রতিবছর পেয়ারার মৌসুমে বিপুল পরিমানে সুস্বাদু পেয়ারা ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। পেয়ারা এখানে প্রচুর উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হয় প্রতিবছরই। কারণ পেয়ারা দ্রুত পেকে যায়। তাই দ্রুত বিক্রি না করতে পারলে চাষিদের পড়তে হয় লোকসানের মুখে। পেয়ারা চাষ ও ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় পেয়ারার মোকাম। প্রতিদিন সকালে এসব মোকামে চাষিরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় সরাসরি বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে আসে পাইকারদের কাছে। তা কিনে ট্রলার যোগে নৌ পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ত হওয়ার কারণে সড়ক পথে এখন আগে তুলনায় অনেক বেশী পরিবহন হয়ে থাকে। ঝালকাঠির কাঁচাবালিয়া গ্রামের পেয়ারা চাষি আল আমিন মিয়া জানান, ‘এবার মৌসুমের শুরুতেই ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে প্রতি মন পেয়ারা ৮শ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পেয়ারার দাম কমে গেছে। প্রতি মণ ২ শ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিবছর পেয়ারার মৌসূমে বিভিন্ন স্থান থেকে নৌ পথে পেয়ারা বাগানে আসে পর্যটকরা। পেয়ারা বাগানে এসে দেখে মুগ্ধ হয়ে এখান থেকে পেয়ারা কিনেও নিচ্ছেন পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য। বছরের পর বছর ধরে পেয়ারা উৎপাদিত এসব এলাকার চাষিদের একমাত্র সমস্যা হিমাগার ব্যবস্থা না থাকা।
এ সব এলাকার শতভাগ মানুষ পেয়ারা চাষের সঙ্গে জড়িত। তবে এই মৌসুমে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ট্রলার ব্যবসা ও খাল পাড়ে গড়ে উঠেছে শত শত খাবার হোটেল। স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ চাষিদের মতে, প্রায় ২০০ বছর আগে ব্রাহ্মণকাঠি গ্রামের পূর্ণচন্দ্র মন্ডল ও কালাচাঁদ মন্ডলের হাত ধরে ভারতের গয়া থেকে এখানে পেয়ারার আগমন। সেখান থেকেই পেয়ারা চাষ শুরু হয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে গোটা আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে পেয়ারার চাষ। কুড়িয়ানার নাম অনুসারে কুড়িয়ানার পেয়ারা বলে সবার কাছে পরিচিত হলেও পেয়ারার চাষ এখন আর কুড়িয়ানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পেয়ারার চাষ এখন পাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিস্তৃতি ঘটেছে। পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, আদমকাঠী, ধলহার, কঠুরাকাঠি, আন্দাকুল, জিন্দাকাঠি, ব্রাহ্মণকাঠি, আতা, জামুয়া, মাদ্রা, ঝালকাঠি, শশীদ, পূর্ব জলাবাড়ী, আদাবাড়ি ও জৌসার গ্রাম এবং ঝালকাঠি ও বরিশালের বানারীপাড়ার মোট ৩৬টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষাবাদ হয়। এ ছাড়াও বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ৪টি, বিশারকান্দি ইউনিয়নের ১টি, উদয়কাঠি ইউনিয়নেরর ২টি গ্রামেও সম্প্রতি পেয়ারা বাগান গড়ে উঠেছে। স্বরূপকাঠি উপজেলায় ১০৫০ হেক্টর পেয়ারা বাগানের মধ্যে শুধু আটঘর কুড়িয়ানায়ই রয়েছে ৮২৫ হেক্টর। স্বরূপকাঠি উপজেলায় ২ হাজার ৫৫টি বাগান রয়েছে। এখানে পেয়ারা চাষির পরিবার রয়েছে ১ হাজার ৩৪৫টি। এখানে গড়ে প্রতি হেক্টরে বছরে ৯ থেকে ১১ টন পেয়ারা ফলে।
ঝালকাঠির জগদীশপুর গ্রামের পেয়ারা চাষি অমল মিস্ত্রি জানান, প্রতি বছর হিমাগারের অভাবে এসব এলাকার কয়েক কোটি টাকার পেয়ারা নষ্ট হয়ে যায়। কারণ পেয়ারা পচনশীল ফল। তাই দ্রুত পেকে যাওয়ায় তা সংরক্ষণ করে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। পেয়ারা চাষিরা জানিয়েছে, এ অঞ্চলের সাথে সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো ফল হলে পেয়ারা দ্রুত বাজারজাত করা যেত।
এব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘পেয়ারা সংরক্ষণের এখনো কোন পরিকল্পনা আমরা নিতে পারিনি। তবে ঝালকাঠি জেলায় পেয়ারা বেশী হওয়ায় সেখানে হিমাগার করার চেষ্টা চলছে। সেখানে যদি হয়, তবে বরিশালের পেয়ারা চাষিরাও সেখানে সংরক্ষণের সুযোগ পাবে। কিন্তু আমার জানা মতে এখনো কোন কোম্পানী এই পেয়ারা প্রসেজিং এ এগিয়ে আসেনি।’  তিনি বলেন, ‘পযর্টন কেন্দ্র করার বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি। বিশেষ করে এই পেয়ারা বাগান, উজিরপুরের সাতলার শাপলার বিল ও পিরোজপুরের ভাসমান সবজির হাটকে পর্যটন কেন্দ্র করার বিষয়ে আমরা আগ্রহী। তবে হয়ে যাবে। সম্প্রতি এই পেয়ারার হাট পরির্দশন করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT