চার বছরেও উচ্ছেদ করা যায়নি কীর্তনখোলার অবৈধ দখলদারদের চার বছরেও উচ্ছেদ করা যায়নি কীর্তনখোলার অবৈধ দখলদারদের - ajkerparibartan.com
চার বছরেও উচ্ছেদ করা যায়নি কীর্তনখোলার অবৈধ দখলদারদের

3:26 pm , August 27, 2019

সাঈদ পান্থ ॥ ক্রমশই সঙ্কুচিত হচ্ছে নগরীর কোল ঘেঁষে বয়ে চলা কীর্তনখোলা নদী। বছরের পর বছর এই নদীর দুই পাড় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দখলদাররা দখল করে ফেলেছে। দেশের সরকার পরিবর্তন হলে দখলদারও পরিবর্তন হয়ে যায়। এই ধারাবাহিকতাই চলছে দখলদারীত্ব। এই দখলদারদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সাল থেকে আন্দোলনে নেমেছে প্রশাসন। কিন্তু ৪ বছর পর হয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা বা উচ্ছেদ করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন। এমনকি তারা উচ্চ আদালতের রায়কেও পরোয়া করছে না দখলদার ও সংশ্লিষ্টরা। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে বরিশাল নদীবন্দর ঘোষণা হলে কীর্তনখোলা নদীর স্বাভাবিক ও পূর্ণ জোয়ারের পানি উচ্চ জলরেখা থেকে ভূমির দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ ৩৬ দশমিক ৮০ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে দেয়া হয়। নদীর উত্তরে আমানতগঞ্জ খাল থেকে দক্ষিণে রূপাতলী সিএসডি গোডাউন পর্যন্ত প্রায় ৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এলাকার ফোরশোর জমি গেজেট মোতাবেক জেলা প্রশাসন বিআইডব্লিউটিএ অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি হস্তান্তর করে। তবে এ জমি পিলার বা সীমানাপ্রাচীর দ্বারা বুঝিয়ে না দেয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নেতাকর্মীরা সেসব জমি দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতঘর স্থাপন করে। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ’র নদী তীরের ২৮ একর সম্পত্তির ২০ একরই বেদখলে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের জমিতে কত দখলদার আছে তা দেখার জন্য একটি জরিপ কার্যক্রম চালায়। তাতে দেখা যায় ৩০৬ জন দখলদার নানাভাবে দখল করে রেখেছে এ নদীর তীর। যারা দখলে রেখেছে তারা সবাই ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী। যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দফতর।
পরে ২০১৬ সালের ২২ আগষ্ট কীর্তনখোলা নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা ২১১ স্থাপনা দুই মাসের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বরিশালের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদের দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দিয়ে ছিল। আদেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসন, সিএস ও আরএসের রেকর্ড অনুযায়ী কীর্তনখোলা নদীর অবস্থান নির্ধারণ করে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে বলা হয়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ কীর্তনখোলা নদীর তীর দখলমুক্ত করার জন্য ঢাকা হেড অফিসে প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিলে ওই বছর ১৪ নভেম্বর অনুমোদন পায়। সে অনুযায়ী ৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে এলাকাবাসী তাদের বাধা দেয়। রসুলপুর (বস্তি) বাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাঁধার পর থেকে বন্ধ রয়েছে এই অভিযান।
বরিশাল নদী খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, ‘নদীর ওপারের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কীর্তনখোলা ক্রমশ শহরের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। আর এ কারণে নদীর তীর ঘিরে গড়ে উঠছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যার ফলে একদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীদূষণ, অপর দিকে দখল। দখল-দূষণ রোধে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে জেলা প্রশাসন ও দায়িত্বে থাকা দফতরগুলোকে। পরিবেশ অধিদফতরও নদী দখলের রোধে কোনো দায়িত্ব পালন করছে না। বিআইডব্লিউটিএ’র নকশাবিদ মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘রসুলপুর এলাকার ৮ একরের বেশি সম্পত্তি সবটুকুই বেদখলে রয়েছে। এছাড়া জেলখাল থেকে পক্সওয়ার্ড পর্যন্ত ২৮ একরের বেশি সম্পত্তির মধ্যে ৮ একরও তাদের দখলে নেই।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা জমি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য শুধু এই বিভাগ থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করে থাকি। বিশেষ করে সার্ভেয়ার ও প্রকৌশলী সাপোর্ট দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে বন্দর বিভাগ ভালো বলতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ১৩৮টি সীমানা পিলার স্থাপন করেছিলাম। তবে তা ছিল অস্থায়ী ভিত্তিতে। যার কারণে দখলদাররা সেই পিলার তুলে ফেলেছে। এমনকি লাল রং দিয়ে যে চিহ্নিত করা হয়েছিল তাও উঠিয়ে ফেলেছে। পিলার লাগানোর পরই জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান চালাই। বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ‘আমরা স্থায়ীভাবে যৌথ উদ্যোগে সীমানা পিলার স্থাপন করব। পর্যায়ক্রমে আমরা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করব। সরকারি সম্পত্তি কেউ দখল করে রাখতে পারবে না। খুব শীঘ্রই এই অভিযান চালানো হবে।’ এব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী উচ্ছেদের জন্য আমরা বরাদ্দ চেয়েছি বিআইডব্লিউটিএ এর কাছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘দখলদারদের বিরুদ্ধে নদী কমিশন তৎপর। আমরা দখলদারদের তালিকা তৈরি করেছি। শুধু কীর্তনখোলা নদীরই নয় পুরো জেলার দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পর্যাক্রমে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’ জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘জেলা প্রশাসন শুধু মাত্র ম্যাজিট্রেসি সহযোগিতা দিবে। বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ চালালে সেখানে আমরা সহযোগিতা করবো। এছাড়া উচ্ছেদ অভিযানের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। জমির স্কেচ ম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। অচিরেই দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT