3:27 pm , August 26, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো জনমনে যথেষ্ঠ উদ্বেগের কারন হয়ে আছে। গত একসপ্তাহে বরিশাল ও পিরোজপুরে আরো ৩ জনের মৃত্যু ছাড়াও বিভাগের ৬টি জেলার সরকারী হাসপাতালগুলোতে সহস্রাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৪শ। মারা গেছেন দুজন। এসময়ে পিরোজপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১১জনের মৃত্যু হল। দক্ষিণাঞ্চলের ডেঙ্গু পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঢাকার আইডিডিআর-এর একটি গবেষনা টিম বরিশালে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ সহ এরোগ বিস্তারের কারণসমুহ পর্যালোচনা করছে বলে বিভাগীয় পরিচালক-স্বাস্থ্য জানিয়ছেন। এক হাজার শয্যার দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি এমনিতেই রোগীর ভাড়ে নুহ্যমান, সেখানে সোমবার দুপুর পর্যন্ত শুধু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীই চিকিৎসাধীন ছিল ১৬৭জন। এর আগে হাসপাতালটিতে প্রায় ৪শ ডেঙ্গু রোগীও চিকিৎসাধীন ছিল। সোমবার সকাল পর্যন্ত বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠীর জেলাÑউপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৩৫ জন বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে। এর বাইরেও অন্তত হাজার পাঁচেক ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষ বিভিন্নভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন। সোমবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে জন ডেঙ্গু জ্বরের রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২০ আগস্ট দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় ১৩৫জন ডেঙ্গুজ্বর রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঐদিন দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫০৭জন। ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন করে ভর্তির সংখ্যা ছিল ৪৮। মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭২। ২১ আগস্ট ৬ জেলার সরকারী হাসপাতালগুলোতে নতুন ১৩৫ জন সহ ভর্তিকৃত মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৭৩। যারমধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৫ জন। হাসপাতালটিতে মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ১৪৭। ২২ আগস্ট ৬ জেলায় নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৬তে উন্নীত হয়। ঐদিন দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ৪৯৫। এসময় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ৫৭ জন সহ মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ১৬৩। ২৩ আগস্ট দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ১২৬-এ হ্রাস পায়। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩৩। ঐদিন শের-ই-বাংলা মেডিকল কলেহজ হাসপাতালে নতুন ৫৭জন সহ মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৪৫-এ হৃাস পায়। ২৪ আগস্ট দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার হাসপাতালে ভর্তিকৃত ১০৯জন সহ চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী ছিল ৪৯৭। আর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ৫২জন সহ মোট রোগী ছিল ১৮৩। ২৫আগস্ট নতুন করে ১২৫জন ডেঙ্গু আক্রান্তকে হাসপাতালে ভর্তির পরে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাড়ায় ৪৭৮-এ। আর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ৫৪জন সহ মোট রোগী ছিল ১৭৫। সোমবার এ বিভাগে নতুন করে আরো ১১০জন ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্তকে ভর্তির পরে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ শতে হ্রাস পায়। তবে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন নতুন রোগী সহ চিকিৎসাধীন ছিল প্রায় ১৯০জন।
গত ১ জুলাই থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু জ্বর রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পর থেকে ২৪ আগস্টই ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল সর্বনিম্ন,১০৯জন। আর শের বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২১আগস্ট ভর্তির সর্বনিম্ন সংখ্যা রেকর্ড করা হয় ৪৫জনে। এর পরের দিনগুলোতে তা ৫৭তে উন্নীত হলেও সোমবার সকালে হাসপাতালটিতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৪৮জনে হ্রাস পেয়েছে।
সোমবার সকাল পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সরকারÑবেসরকারী হাসপাতালগুলোতে যে ৩ হাজার ৬৩৫জন রোগী ভর্তি হবার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৭শ। ডেঙ্গুজ্বর নিয়ন্ত্রনে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে ঢাকা থেকে আগত সব ধরনের নৌযান সহ যানবাহনগুলো গন্তব্যে যাত্রা করার আগে মশক নিধনের বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন বিষয়টির সাথে একমত পোষন করে তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনার আহবান জানিয়েছেন। পাশাপাশি বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলে সব ধরনের মশার বংশ নির্মূলে হ্রাস করতে প্রোগাম গ্রহনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসগন।