3:04 pm , August 22, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে এক আশ্রিতা তরুনীকে গণধর্ষণের পরে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় তরুনীর সাথে আশ্রয় দাতার আপত্তিকর ছবি ধারণ ও জিম্মি করে ঘরের মালামাল লুট করে স্থানীয় একটি গ্যাং। বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরীর সিএন্ডবি সড়কের ১ নম্বর পুল সংলগ্ন ইসলামপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরই স্থানীয়দের সহযোগিতায় গ্যাংয়ের ফরিদ জমাদ্দার (২২) নামের এক সদস্যকে আটক করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে অপহৃত তরুনীকে উদ্ধারসহ আল আমিন নামে আরো এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ৪ আসামিকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও কোতয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান। আটককৃত ফরিদ জমাদ্দার বরগুনার তালতলী উপজেলার শোনাউটা গ্রামের ইব্রাহিম জমাদ্দারের ছেলে, অপর আসামি আল আমিন নগরীর ইসলামপাড়া এলাকার বিষ কবিরের ছেলে। ফরিদ জমাদ্দার ইসলামপাড়া এলাকায় বোনের বাসায় বসবাস করে দিন মজুরের কাজ করে আসছিলো। এছাড়া পলাতকরা হলো- গ্যাংয়ের প্রধান ইসলামপাড়া এলাকার বাসিন্দা বাবুল মহুরীর ছেলে জুয়েল, তার সহযোগী একই এলাকার বাসিন্দা শুভ ও মাহবুব । এদের মধ্যে জুয়েল, শুভ ও মাহাবুব তরুনীকে ধর্ষণ করেছে বলে দাবী আটক হওয়া ফরিদের। তরুনীর আশ্রয়দাতা স্থানীয় একটি কলেজের নৈশ প্রহরী জুয়েল মল্লিকের স্ত্রী লাকি আক্তার জানান, গত পাঁচ দিন পূর্বে নগরীর ফলপট্টিতে পরিচয় হয় ঢাকা থেকে আসা এক তরুনীর। পরিচয় থেকে লাকিকে বোন ডাকে ওই তরুনী। সেই সুবাদে বরিশালে কেউ পরিচিত না থাকায় তরুনীকে নিজ বাসায় আশ্রয় দেয় লাকি ও জুয়েল মল্লিক দম্পতি। লাকির স্বামী জুয়েল মল্লিক জানান, ওই তরুনী গত ৬ দিন ধরে তাদের ভাড়া বাসায় রাত্রি যাপন করে দিনে তার কাজে চলে যায়। প্রতিদিনের ন্যায় বুধবার দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বাসা থেকে বের হয়। রাতে ইসলামপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাদক ব্যবসায়ী গ্যাংয়ের প্রধান জুয়েল ও তার সহযোগিরা সু-কৌশলে আশ্রিতা তরুনীকে ফোন করে জুয়েল মল্লিকের বাসায় ডেকে আনে। জুয়েল মল্লিক অভিযোগ করেন, গ্যাংয়ের সদস্যরা তরুনীকে বাসায় ডেকে এনে আপত্তিকর প্রস্তাব দেয়। এতে প্রতিবাদ করায় তারা জুয়েল মল্লিককে মারধর করে একটি কক্ষের আটকে তাকে ও তরুনীকে উলঙ্গ করে মোবাইলে ক্যামেরায় ভিডিও এবং ছবি ধারণ করে। এর পর তরুনীকে মুখ বেধে পালাক্রমে ধর্ষণ ও পরে ঘরের মালামাল সহ আশ্রিতা তরুনীকে অপহরণ করে। খবর পেয়ে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় গ্যাংয়ের সদস্য ফরিদকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক করে তারা। তবে আটককৃত ফরিদ জানান, আশ্রিতা ওই তরুনীকে দিয়ে নিজ ঘরে অবৈধ ব্যবসা করে আসছিলো জুয়েল মল্লিক ও তার স্ত্রী লাকি। তাছাড়া তরুনীকে কেউ ডেকে আনেনি, সে ওই বাসায় ছিলো। আশ্রয়দাতা জুয়েল মল্লিক এর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় তাকে ধরে ফেলে। এসময় ওই অবস্থায় দু’জনের আপত্তিকর ছবি মোবাইলে ধারণ ও তিনজন মিলে তরুনীকে ধর্ষণ করে। পরে তরুনীকে নিয়ে তিনজন ঘর থেকে বের হয়ে চলে যায় এবং পরে তরুনী নিজের মত করে কোথাও চলে গেছে। তাকে কেউ অপহরণ করেনি এবং আটককৃত ফরিদ ও পলাতক আল আমিন ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলেও দাবী ফরিদের। কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদ জানান, তরুনী খারাপ হলেও সেটা দেখার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ রয়েছে। কিন্তু তার সাথে যেটা হয়েছে সেটা অবশ্যই অপরাধ। ভিকটিম জুয়েল মল্লিক চাইলে এই ঘটনায় পর্ণগ্রাফি আইনী মামলা হবে বলেও জানিয়েছেন মডেল থানার এসআই মাহামুদ।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও কোতয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল ইসলাম পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর রুপাতলি বাস টার্মিনাল থেকে অপহৃতা তরুনীকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাকে গনধর্ষন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তরুনী।
অপরদিকে এঘটনায় আশ্রয়দাতা বাদী হয়ে নামধারী ৬ জনকে অভিযুক্ত করে পর্নগ্রাফি আইনে কোতয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন।