শেবাচিমের বেপরোয়া মামুনের লাগাম টানবে কে? শেবাচিমের বেপরোয়া মামুনের লাগাম টানবে কে? - ajkerparibartan.com
শেবাচিমের বেপরোয়া মামুনের লাগাম টানবে কে?

3:12 pm , August 21, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বেয়াদবখ্যাত অক্ষর জ্ঞানহীন মাদকাসক্ত চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী গালকাটা মামুনের কাছে নাজেহাল হচ্ছে উচ্চ শিক্ষিত ও মর্যাদাশীল লোকেরাও। হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী কারোরই রেহাই মিলছে না তার কাছ থেকে। অশালিন আচরণ, শারীরিক লাঞ্ছনা সহ এমন কিছু নেই যা করছে না গালকাটা মামুন। গতকাল বুধবার এমন আরো একটি ঘটনার জন্ম দিয়েছে বেয়াদব খ্যাত মামুন। তিনি হাসপাতালের প্যাথলজী বিভাগের টেকনিশিয়ানকে নাজেহাল করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের দেয়া সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা করছে হত্যা চেষ্টা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী আল মামুন মুছা ওরফে গালকাটা মামুন। বিভিন্ন প্যাথলজী, রেডিওলজী, দালাল ও পকেটমার সিন্ডিকেটের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব কিছু জানার পরেও মামুনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানাগেছে, হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে সরকারি ওষুধ চুরি মামলার অন্যতম আসামী চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সেফালী। ওই মামলার আসামী ছিলো তার ছেলে আল মামুন মুছা ওরফে গালকাটা মামুন। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কুদ্দুস মোল্লার সু-দৃষ্টির কারণে ওই মামলার চার্জশীট থেকে বাদ পড়ে যায় মামুনের নাম।
অপরদিকে শুধু ওষুধ চুরিই নয়। মঠবাড়িয়ার অপর একটি হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী মামুন। ওই মামলাতেও তার বিরুদ্ধে চার্জশীট রয়েছে। ইউপি সদস্যকে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া ওই মামলায় মামুনের সাজা নিশ্চিত বলে মনে করছেন আসামী পক্ষের আইনজীবীরা। তার মধ্যেই শেবাচিম হাসপাতালের বিতর্কিত নিয়োগ বানিজ্যের সময় সরকারি চাকরী পেয়ে যায় গালকাটা মামুন। শুধু তাই নয়, যেদিন যোগদানের শেষ তারিখ ছিলো সেদিনও কারাগারে ছিলো মামুন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে নির্ধারিত মেয়াদের দু’দিন পরে চাকরিতে যোগ দেয় মামুন। যদিও তার যোগদান নিয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল কাদের এর বিরুদ্ধে উৎকোচ বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালের সাধারণ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা জানিয়েছেন, যোগদানের পর থেকেই আল মামুন মুছা ওরফে গালকাটা মামুন একের পর এক অপকর্ম করে আলোচনার শীর্ষে উঠে আসছে। নিজেকে পরিচালকের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে শেবাচিম হাসপাতালকে মাদকের আতুড় ঘরে পরিনত করেছে। নতুন চাকরি পাওয়া দু’জন কর্মচারীকে নিয়ে নিয়মিত মাদকের হাট বসায় গালকাটা মামুন। এমনকি মাস কয়েক পূর্বে হাসপাতালের অভ্যন্তরে মাদক বিক্রির সময় গাঁজা সহ আটকও হয় সে।
শুধু এসবই নয়, মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে আরো একাধিক অভিযোগ। যার মধ্যে দালাল ও পকেটমার বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ অন্যতম। হাসপাতালের প্যাথলজী, রেডিওলজী, ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে চাঁদা চাওয়ার বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে মামুনের বিরুদ্ধে।
কর্মচারীরা জানায়, মামুন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে চাঁদাবাজী করে। যেসব দালাল এবং পকেটমার তাকে চাঁদা না দিচ্ছে তাকেই নাজেহাল সহ পরিচালকের কাছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। যে টাকা দিচ্ছে সে খালাস। উদাহারণ স্বরুপ হাসপাতালের রেডিওলজী ও প্যাথালজী বিভাগেই ঘুরে বেড়ান এক নারী দালাল। যিনি রোগী ধরে নিয়ে যায় বাইরের প্যাথালজীতে। ওই নারী দালাল গালকাটা মামুনের আত্মিয় এবং চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টারে তার ঘরেই বসবাস করে। চোখের সামনে দালালী করলেও তাকে ধরছে না মামুন।
তাছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্যাথালজী থেকে মাসহারা চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে মামুনের বিরুদ্ধে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জানায়, হাসপাতাল থেকে কিছু রোগী বাইরের ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসে। এ কারনে প্যাথালজী মালিকদের কাছে চাঁদা চায় মামুন। যে দিবে সে রোগী পাবে, আর যে না দিবে সে পাবে না। শুধু বাইরের প্যাথালজী থেকেই নয়, খোদ হাসপাতালের প্যাথালজীতেও চাঁদাবাজী করতে যায় মামুন। তা না পেরে গতকাল বুধবার টেকনিশিয়ান বিভুতী ভুসন হালদারকে নাজেহাল করে। সে পরিচালকের মেয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যস্ত থাকা অবস্থায় ফরম নিয়ে জমা দেয় পরিচালকের কার্যালয়ে। এমনকি প্যাথালজী বিভাগে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হাকিম আলীকেও বিভিন্নভাবে ভয়ভিতি প্রদর্শন করে বেয়াদব মামুন।
এসব কারনে মামুনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে কর্মস্থলের সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গত মঙ্গলবার কর্মচারী লিখনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ছাড়াও ইতিপূর্বে এবিএম ফিরোজ, দিদারুল, মমিনুল, শান্তসহ আরো কয়েকজন কর্মচারীকে মারধর করে মাদকাসক্ত মামুন। এছাড়া হাসপাতালের সরদার ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী কল্যান সমিতির সভাপতিকেও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে মামুনের বিরুদ্ধে। সে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছেন গণপূর্ত বিভাগের এসও সেলিমকে। এসব কারনে অতিষ্ঠ কর্মচারী এখন মামুনের শাস্তি চাচ্ছে। তবে মামুনকে শাস্তি দেয়ার প্রশ্নে রহস্যজনক ভূমিকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাকে শান্তি না দিয়ে বরং প্র¯্রয় দিয়ে যাচ্ছেন তারা। এমনকি বরিশাল সিটি মেয়র’র এর নির্দেশনা থাকা সত্যেও মামুনেই ভর করে আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যদিও সম্প্রতি একাধিক ঘটনার পরে মামুনের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও চটেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হয়েছেন বিব্রত। এ কারণে কর্মচারীদের দাবীর প্রেক্ষিতে মামুনের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, মামুনের বিরুদ্ধে খুব শিঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিভাগীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাকে বরগুনা বদলীর প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে সকল কাগজপত্র সম্পাদন হয়েছে। এখন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এর দপ্তর থেকে তার বদলীর আদেশ আশার অপেক্ষা মাত্র।তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আব্দুর রশিদ বলেন, মামুনের বিষয়টি আমি অবগত। তবে সে শেবাচিম হাসপাতালের কর্মচারী হাওয়ায় তার বিরুদ্ধে আমরা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারিনা। কেননা হাসপাতালের পরিচালক এবং আমার পদমর্যাদা একই। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল পরিচালক মামুনকে বদলীর বিষয়ে আমাকে লিখিত দিবেন। পদ শূণ্য থাকা সাপেক্ষে আমরা মামুনকে বদলী করবো। লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অন্যের কর্মচারী আমাদের বদলি করার এখতিয়ার নেই।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT