3:13 pm , August 20, 2019
পরিবর্তন ডেস্ক ॥ বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার আদালতে নিয়েছিল পুলিশ; জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে তাকে পাঠিয়েছেন বিচারক। বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না- তা সাত দিনের মধ্যে সরকারকে জানাতে বলেছে হাই কোর্ট। মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করে। সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাত দিনের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আগামী ২৮ অগাস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবিরকে যাবতীয় নথিপত্রসহ আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মিন্নি রিমান্ড শেষে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার আগের দিনই বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে রিফাতের স্ত্রীর ‘দোষ স্বীকারের’ তথ্য দেন। এ বিষয়ে আদালত লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে পুলিশ সুপারের কাছে। আগামী ২৮ অগাস্ট তা হাই কোর্টে দাখিল করতে হবে। মিন্নির পক্ষে এদিন হাই কোর্টে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও এম আমিনউদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী। এম আমিনউদ্দিন শুনানিতে আদালতকে বলেন, “আমরা আর কিছু চাইছি না, মেয়েটার জন্য শুধুমাত্র জামিন চাচ্ছি। সে পালাতে পারবে না। সে তার বাবার হওলায় থাকবে। “তাছাড়া এ মামলায় গ্রেপ্তার ১৫ জনের মধ্যে চারজন জবানবন্দি দিয়ে দিয়েছে। সুতরাং তদন্ত প্রভাবিত করারও সুযোগ নাই। এ কারণে তার জামিন চাইছিম” এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী শুনানিতে বলেন, “গ্রেপ্তার ১৫ জনের মধ্যে চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চারজনের জবানবন্দিতেই এ হত্যাকা-ে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। সে এই হত্যাকা-ের মূল নকশাকারী এবং ষড়যন্ত্রকারী। “এটা খুবই আলোচিত মামলা। পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে মামলার তদারক করা হচ্ছে। এ মামলায় তাকে জামিন দেওয়া যায় না।” গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন; তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়। তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।” বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতকের এই ছাত্রী পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি। বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দয়েরা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ অগাস্ট হাই কোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। গত ৮ অগাস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চে আংশিক শুনানির পর জামিন পাওয়ার আশা না দেখে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না আবেদন ফিরিয়ে নেন এবং রোববার নতুন বেঞ্চে আবেদন করেন।