3:02 pm , August 18, 2019
পরিবর্তন ডেস্ক ॥ অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, যার প্রধান কারণ হিসেবে বেপরোয়া গতির কথা বলেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বেসরকারি সংস্থাটির হিসাবে, গত ১২ অগাস্ট অনুষ্ঠিত কোরবানির ঈদের আগে-পরের ১২ দিনে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২৪ জন নিহতের এবং ৮৬৬ জন আহত হয়েছেন। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই তথ্য তুলে ধরেন। নিহতদের ‘অর্ধেকের বেশি’ পথচারী এবং তারা গাড়িচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। মোজাম্মেল হক বলেন, গত ৬ অগাস্ট থেকে ১৭ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৭টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে, যাতে প্রাণহানি হয়েছে মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৩৭ শতাংশের। এছাড়া পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ ‘কমেছে’ বলে জানান তিনি। সড়কে দুর্ঘটনার নয়টি কারণ চিহ্নিত করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এ তালিকার শুরুতেই কারণ হিসেবে রয়েছে ’বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো’। অন্যান্য কারণগুলো হল- ফিটনেসবিহীন যান ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, অদক্ষ চালক ও হেলপারের যানবাহন চালানো, বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে অবাধে অবৈধ যান চলাচল, সড়কে ফুটপাত না থাকা এবং ঈদ ফেরৎ যাতায়াতে জোরদার মনিটরিংয়ের অভাব। দুর্ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে মোজাম্মেল হক বলেন, “এবার মোট দুর্ঘটনার ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে বাসের কারণে। এরপরে ২৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ মটরসাইকেল, ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, কভার্ড ভ্যান ও লরি, ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ কার-মাইক্রো, ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ অটোরিকশা, ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ নছিমন-করিমন এবং ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ দুর্ঘটনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক জড়িত ছিল।” সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। চালকের প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স ইস্যু পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং লক্করঝক্কর ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল শতভাগ বন্ধের সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এছাড়া জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, চালক প্রশিক্ষণে সরকারি-বেসরকারিভাবে কার্যক্রম গ্রহণ, ঈদের আগে ও পরে সড়কে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, চালক-শ্রমিকদের যুগোপযোগী বেতন-বোনাস ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিশ্রামের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং যাত্রার আগে যানবাহনের ত্রুটি পরীক্ষা করারও সুপারিশ করেছে তারা। ঈদযাত্রায় রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, ঈদযাত্রার ১২ দিনে রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ১৩ জন নিহত এবং ট্রেনের ধাক্কায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। আর নৌপথে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৬ জন, ৫৯ জন নিখোঁজ ও ২৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঈদে রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ‘তুলনামূলক ভালো’ ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, নৌপথে বেশ কিছু নতুন লঞ্চ এসেছে, রেলপথেও বেশ কয়েক জোড়া নতুন রেল ও বগি যুক্ত হয়েছে। “তারপরও ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, যানজটের ভোগান্তি, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যযয় ও টিকেট কালোবাজারি, ফেরি পারাপারে ভোগান্তিসহ নানা কারণে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে।” সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিআরটিরিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা আয়ূবুর রহমানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।