3:08 pm , August 17, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মরণ নেশা ইয়াবা’র সাগরে ভাসছে বরিশাল নগরী। প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর পরেও হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা ট্যাবলেট। লাল গোলাপী এবং সাদা সব ধরনের ইয়াবাই পাওয়া যাচ্ছে এই নগরীতেই। অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসিনদের ছত্র ছায়ায় থেকেই নগর জুড়ে ইয়াবার কারবারি চলছে। যার পেছনে কয়েকজন কাউন্সিলর ও পুলিশের সম্পৃক্ততার কথাও শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি ডিবি’র অভিযানে দুই মাদক স¤্রাট আটক হওয়ার পরে বেরিয়ে আসে এমন তথ্য।
এদিকে প্রায়শই র্যাব, ডিবি, এপিবিএন এবং থানা পুলিশের অভিযান দৃশ্যমান হচ্ছে। এতে চুনোপুটি নামমাত্র ইয়াবা সহ আটক হলেও অধরাই রয়ে যাচ্ছে নতুন বাজারের হারুন-বেবী দম্পতি, তাদের ছেলে আকাশ এর মত মাদকের গড ফাদাররা। সম্প্রতি সময়ে মাদক সহ একাধিক ব্যক্তির আটকের খবর পাওয়া গেলেও তার মধ্যে সব থেকে বড় চালান ছিলো ২ হাজার ১৪৫ পিস। বাকি যাদের ধরা হয়েছে তাদের কাছ থেকে ২ থেকে চার পিস ইয়াবা উদ্ধারের খবর রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, বরিশাল নগর জুড়ে ইয়াবার ব্যবসা চলছে। শুধুমাত্র বস্তি এলাকাতেই নয়, ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে এখন ভিআইপি এলাকা এবং ফ্লাট বাড়িতে। নগরীর পরেশ সাগর মাঠ, জিলা স্কুল মোড়, আমতলার মোড় পানির টেংকি, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, কাউনিয়া হাউজিং, রূপাতলী এবং নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা, জিয়া সড়ক, শের-ই-বাংলা সড়ক, ত্রিশ গোডাউন এলাকা, বরিশাল স্টেডিয়াম, শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টার এবং পোর্ট রোড এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা ট্যাবলেট। এসব এলাকায় পৃথক গ্যাং পরিচালনা করছে ইয়াবার ব্যবসা। তবে এদের পেছনে রয়েছে ক্ষমতাসিন দলের কোন না কোন বিতর্কিত নেতা বা কাউন্সিলররা। যারা ইয়াবা সহ আটক হওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের ছাড়িয়ে আনা বা বিভিন্ন বিষয়ে তদবির করছেন।
এমন একটি ঘটনা ঘটেছে গতকাল শনিবার। নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রোকেয়া আজিম সড়ক থেকে কাউনিয়া থানা পুলিশ আটক করে শাহীন নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী আটক করা হয় পলাশপুরের আয়নাল মিয়ার ছেলে ইয়াবার গড ফাদার জহিরুল সহ দু’জনকে। তাদের আটকের খবর পাওয়া মাত্রই শুরু হয় ছাড়িয়ে আনতে লবিং-তদবির। খোদ ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজেই আটক হওয়া জহিরুলকে ছাড়িয়ে আনতে লবিং করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবী করেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনি।
অপরদিকে অতি সম্প্রতি ব্রাউন কম্পাউন্ড রোড থেকে ডিবির হাতে ইয়াবা সহ আটক সহ আল আমিন ও শাওন নামের দুই ইয়াবার স¤্রাট। যারা দু’জনেই ক্ষমতাসিন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় ছিলেন। একই দিন নগরীর পোর্ট রোড থেকে আটক হয় ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্যাং এর সদস্য মেহেদী। সেও এক আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী ছিলেন বলে জানাগেছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ইয়াবা শুধু বাসা বাড়িতেই নয়, বরং হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও বিক্রি হচ্ছে। কিছু পূর্বে নগরীর বান্দ রোডের হেমায়েত উদ্দিন ডায়াবেটিস হাসপাতাল থেকে আটক করা হয় এক মাদক ব্যবসায়ীকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ইয়াবা ট্যাবলেট। তাছাড়া বর্তমান সময়ে শেবাচিম হাসপাতাল এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা রমরমা। বিশেষ করে হাসপাতালের সামনে চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টারের মধ্যে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইয়াবা বেচা-বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় এবং বহিরাগত একটি গ্যাং এই ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছে। যা কোতয়ালী পুলিশের দু-একজন কর্মকর্তা জানলেও আদৌও তারা গ্রেফতারের তালিকায় আসেনি। এছাড়াও নগর জুড়ে ছোট-বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় রয়েছে শতাধিক ব্যক্তির নাম। যাদের মধ্যে রয়েছে কিশোর গ্যাং। এদের ফলে এলাকায় মাদকের বিস্তারের পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। এ বিষয়ে প্রশাসনের জোড়ালো অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করছে সচেতন মহল।