3:05 pm , August 17, 2019
খান রুবেল ॥ নানামুখি পদক্ষেপের পরেও ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব করতে পারেনি বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ সহ স্থানীয় প্রশাসন। পন্টুন সংকট যাত্রীদের ভোগান্তির অন্যতম কারন হয়ে দাড়িয়েছে। পর্যাপ্ত পন্টুনের অভাবে ঝুঁকি নিয়ে এক লঞ্চ থেকে অপর লঞ্চে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে হাজার হাজার যাত্রী তাড়াহুড়ো করে লঞ্চে উঠতে গিয়ে ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা। তবে বছরের পর বছর ঈদ আসলেই যাত্রীদের এমন দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগ নেই বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের। শুধু আশ^াসের বাণী শুনিয়েই বছর পার করছেন তারা। অবশ্য বরিশাল নদী বন্দরে পন্টুন সংকট আগামী ঈদে আর থাকবে না বলে পুনরায় আশ^াস দিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে দেখাগেছে, ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই বরিশাল নদী বন্দরে যাত্রীদের পদচারনা বেড়ে গেছে। ঈদের পূর্বে ঘরমুখো যাত্রী এবং ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলমুখি যাত্রীদের ভিড়ে নদী বন্দরে তিল ধারনের ঠাই নেই। লঞ্চ মালিক এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের ধারনা মতে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বরিশাল নদী বন্দরে যাত্রীদের ভিড় দ্বিগুনেরও বেশি। এদিকে যাত্রীদের ভিড় এবং বছর বছর বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে লঞ্চের সংখ্যা বাড়লেও বৃদ্ধি পায়নি বরিশাল নদী বন্দরে পন্টুন সংকট। দীর্ঘ বছরের পুরানো ৬টি পন্টুই লঞ্চ ও যাত্রীদের জন্য শেষ ভরসা। বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে সীমিত পন্টুনে জায়গা হয়না অভ্যন্তরিন রুটের লঞ্চগুলোর।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক (টিআই) মো. কবির হোসেন জানান, এবার কোরবানীর ঈদে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রীদের চাপ বেশি। যেটা বোঝা যাচ্ছে ঈদ পরবর্তী যাত্রায়। তাছাড়া এবার বিশেষ সার্ভিসে সরকারি-বেসরকারি লঞ্চের সংখ্যাও বেশি।
গত শুক্রবার বরিশাল নদী বন্দর থেকে রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। যাত্রীদের চাপ এতটাই ছিলো যে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার মধ্যে লঞ্চগুলোকে নদী বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। শুক্রবারের মত করেই ভিড় ছিলো শনিবার (১৭ আগস্ট)। যে কারনে পূর্বের দিনের তুলনায় লঞ্চও একটি বেশি ছিলো।
শনিবার রাত্রিকালিন সার্ভিসের মোট ১৮টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে নদী বন্দরে নোঙর করা ছিলো। এর বাইরে বিআইডব্লিউটিসি’র ১টি, ভায়া রুটের আরো ৪টি এবং দিবা সার্ভিসের তিনটি ওয়াটার বাস মিলিয়ে মোট ২৬টি যাত্রীবাহী নৌ যান বরিশাল হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কিন্তু সবকটি লঞ্চের জায়গা হয়নি পন্টুনে।
সরেজমিনে দেখাগেছে, শুক্রবার বরিশাল নৌ বন্দরে বার্দিং করা ১৮টি লঞ্চের মধ্যে ১০টি লঞ্চের জায়গা হয়েছে ৭২০ ফুটের ছয়টি পন্টুনে। বাকি কীর্তনখোলা-২, কীর্তনখোলা-১০, পারাবত-১১ ও পারাবত-১২, পূবালী-৭ ও এমভি কামাল সহ ৭টি লঞ্চ পন্টুনে নোঙর করতে পারেনি। পন্টুনে বার্দিং করা লঞ্চের পেছনে এবং পাশে ঘেরে বার্দিং করা হয়েছে বাকি লঞ্চগুলোকে। আর দিবা সার্ভিসের তিনটি ওয়াটার বাস ঘাট দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ’র জেটিতে। তবে অভ্যন্তরিন রুটের লঞ্চগুলোর জায়গা হয়নি তাদের জন্য নির্ধারিত ৩টি পন্টুনে।বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দিবা সার্ভিস মিলিয়ে এ রুটে নিয়মিত চলাচল করছে ২৪টি লঞ্চ। স্বাভাবিক দিনে ৬ থেকে ৭টি লঞ্চ রোটেশন অনুযায়ী চলাচল করছে। কিন্তু ঈদের মৌসুমে সকল লঞ্চই বিশেষ সার্ভিস দিয়ে থাকে। তাই বরিশাল নদী বন্দরে পন্টুন সংকট চরম আকার ধারণ করে।তারা বলেন, সারা বছর পর ঈদ মৌসুম লঞ্চ মালিকদের ব্যবসার সময়। কিন্তু পন্টুনে লঞ্চ বার্দিং করতে না পারায় সকল লঞ্চে সমসংখ্যক যাত্রী উঠছে না। অনেক যাত্রী ঝুকি নিয়ে এক লঞ্চ থেকে অপর লঞ্চে যেতে চায় না। ফলে লোকসান না গুনলেও হতাশ হতে হয় যাত্রীদের।ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা লঞ্চের যাত্রী রাজধানীর শ্যামলীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম খোকন বলেন, এমভি পারাবত-১২ লঞ্চে ফ্যামিলি কেবিন নিয়েছেন তিনি। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বিকাল ৫টার মধ্যে ঘাটে থাকতে বলা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে ঘাটে এসেও লঞ্চ খুঁজে পাইনি। পরে ঘাট থেকে জানতে পারি লঞ্চটি কীর্তনখোলার মাঝ নদীতে অপর একটি লঞ্চের পেছনে নোঙর করেছে।
তিনি বলেন, দুটি শিশু সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে এ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের মধ্যে থেকে গিয়ে পারাবত-১২ লঞ্চে উঠতে হয়েছে। তাও খুব ঝুঁকি নিয়ে। এর বাইরে লঞ্চ ঘাটে বিভিন্ন লঞ্চ কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার দৃশ্যও দেখা গেছে। তারা তাদের লঞ্চ হয়ে অন্য লঞ্চে যেতে বাধার সৃষ্টি করছেন। ফলে পেছনে থাকা লঞ্চে ডেকের যাত্রী কমে যায় বলে দাবী ওইসব লঞ্চের মালিকদের।
বরিশাল নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক এবং বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, পন্টুন সংকট দীর্ঘ দিনের পুরানো। তবে এই সংকট সামনে আর থাকবে না। কেননা এরই মধ্যে ১২০ ফুট করে ৩টি বন্টুন নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু পন্টুন হলেই হবে না। গ্যাংওয়ে সহ আনুসাঙ্গিক প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। আগামী ঈদের আগেই এই সমস্যা সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেন, এক লঞ্চ হয়ে অন্য লঞ্চে যেতে ভোগান্তি হওয়াটা স্বাভাবিক। তার পরেও আমরা চেষ্টা করতে যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। আমাদের বিশাল কর্মী এবং ভলান্টিয়ার রয়েছে তারা যাত্রীদের নিরাপত্তায় কাজ করছে। রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি সদস্যরাও। ফলে এখন এখন পর্যন্ত কোন অঘটন ঘটেনি বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্মকর্তা।