3:04 pm , August 9, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর চিহ্নিত নারীর দালাল মনির ও শিপন। যাদের রয়েছে পোর্ট রোড, পদ্মাবতি ও দক্ষিণ চক বাজার এলাকায় ১৭টি আবাসিক হোটেল। যার প্রতিটিতেই চলছে প্রকাশ্যে পতিতা ও মাদক ব্যবসা। অথচ তাদের লাগাম টেনে দিতে পারছে না র্যাব, পুলিশ বা ডিবি। মাঝে মধ্যেই অভিযানের নামে আই ওয়াশ চললেও ধরা পড়ছে না দালাল মনির ও শিপন। এক প্রকার মনির ও শিপনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে গোটা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও উৎকোচের বিনিময়ে পুলিশ ও ডিবি’র কতিপয় সদস্য’র বিরুদ্ধে আবাসিক হোটেলে দেহ ব্যবসায় সহযোগিতার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, নগরীতে যে সংখ্যক আবাসিক হোটেল রয়েছে যার সিংহভাগ কোতয়ালী মডেল থানা এলাকায়। এসব আবাসিক হোটেলেই বছরের পর বছর ধরে চলছে দেহ ব্যবসা। বিশেষ করে নগরীর দক্ষিণ চক বাজার, পোর্ট রোড, পদ্মাবতি এবং ফজলুল হক এভিনিউ সড়ক এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা নাম মাত্র আবাসিক হোটেলের প্রতিটিতেই এ ব্যবসা এখন রমরমা। কোন হোটেলে পতিতা ব্যবসায়ীদের রাখা হয় আবার বেশিরভাগ হোটেলে কলগার্ল দিয়ে চলছে পতিতা ব্যবসা।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এমন একাধিক হোটেলের নাম। হোটেলগুলো হলো- নগরীর দক্ষিণ চক বাজার নগর ভবনের পেছনের অংশে আবাসিক হোটেল পায়েল, ভোলা বোডিং, হোটেল জিলানী, হোটেল গালীব, পোর্ট রোডের হোটেল চীল আবাসিক, হোটেল গ্রান্ড প্লাজা, মিয়া বোডিং, হোটেল কটেজ, হোটেল কীর্তনখোলা, বরগুনা আবাসিক হোটেল, খান আবাসিক হোটেল, পদ্মাবতি রোডের হোটেল দোয়েল, হাওলাদার বোডিং, গোল্ডেন প্যালেস, হোটেল নছিব, ফজলুল হক এভিনিউ সড়কে হাজী মোহাম্মদ মহসিন মার্কেটে উজিরপুর বোডিং ও হোটেল ঝিনুক। এর মধ্যে হোটেল গালিব, হোটেল পায়েল সহ ১৩টি হোটেল নিয়ন্ত্রন করে নারীর দালাল মনির। এছাড়া ভোলা বোডিং, সি-প্যালেস, বরগুনা ও ঝিনুক হোটেল নিয়ন্ত্রন করে শিপন।
বেশ কয়েকজন হোটেল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মনির ও শিপন শুধু নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসাই করান না। হোটেলের মধ্যে চলে তাদের মাদকের ব্যবসাও। বিশেষ করে শিপনের নিয়ন্ত্রিত চারটি হোটেলে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পতিতা ও মাদক ব্যবসা চলছে। এসব করে তারা দু’জনই কোটিপতি বনে গেছেন।
সূত্র জানায়, রূপাতলী এলাকার মনি’র এক সময় হোটেলের কর্মচারী ছিলো। সেখান থেকেই শুরু হয় তার নারীর দালালী ব্যবসা। বর্তমানে তিনি ১৩টি হোটেল ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। যার মধ্যে ৬টি হোটেলে সার্বক্ষনিক পতিতাদের রাখা হয়। প্রতি সপ্তাহে ঢাকা এবং উত্তরাঞ্চলের স্কুল-কলেজ পড়–য়া মেয়েদের এনে রাখা হয় হোটেলগুলোতে। ৬টি হোটেলে রাখা নারীদের কর্লগাল হিসেবে পাঠানো হয় নগরীর বিভিন্ন নামিদামী হোটেলে। এসব করে প্রতি মাসে মনিরের আয় হচ্ছে ৩৬ লাখ টাকার বেশি। যা দিয়ে মনির এখন কোটিপতি বনে গেছেন। রূপাতলী এলাকায় বিলাশবহুল বাড়ি সহ হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রায় সময় কোতয়ালী এবং ডিবি পুলিশ হোটেলগুলোতে অভিযান চালাচ্ছেন। ধরে নিয়ে যাচ্ছেন পতিতা ও খদ্দেরদের। কিন্তু আদৌ ধরা পড়েনি মুল গডফাদার ও নারীর দালাল মনির, শিপন বা ইসমাইল সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। বরং ধরা পড়া পতিতা ও খদ্দেরদের ছাড়িয়ে আনার কাজ করছে তারা।
এদিকে গত কদিন ধরেই আজকের পরিবর্তনে আবাসিক হোটেলে পতিতা ব্যবসা সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হয়ে আসছে। কিন্তু এর পরেও থেমে নেই হোটেল গুলোতে পতিতার ব্যবসা। এমনকি সংবাদের দৃষ্টি কাড়েনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। শুক্রবার বিকালে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক পুনরায় খোঁজ খবর নিতে যান আবাসিক হোটেলগুলোতে। চোখে পড়ে প্রকাশ্যে খদ্দের ডেকে হোটেলে উঠানোর চিত্র।
নগরীর পদ্মাবতি রোডে হোটেলের সামনে সাধারণ মানুষের ন্যায় অবস্থান নিতেই হাওলাদার বডিং ও গোল্ডেন প্যালেসের সামনে অবস্থান নেয়া কয়েকজন দালালের ইশারা মেলে। এগিয়ে আসেন আল আমিন পরিচয় দেয়া অপর এক দালাল। ঘন্টা ৩শ টাকা চুক্তিতে নিয়ে যান নগর ভবনের পেছনে হোটেল পায়েল-এ। ওই হোটেলে আপত্তি জানালে নিয়ে যান দক্ষিণ চকবাজারে হোটেল গালিব-এ। এসময় জানতে চাওয়া মাত্রই আল আমিন নাম পরিচয় দেয়া ব্যক্তি বলে দেন নারীর দালাল মনিরের ব্যবসার সব ফিরিস্তি। আল আমিন বলেন, “মনির ভাই’র ১৩টি হোটেল আছে। যার মধ্যে ৬টিতে সব সময় মাল (নারী) পাওয়া যায়। বাকিগুলোতে না রাখা হলেও সেখানে কর্লগলের ব্যবস্থা আছে।
পুলিশি ঝামেলার কথা বললে আলামিন জানায়, ভাই এটা কোন ব্যপার না। পুলিশ আইবে না। তাদের মনিরভাই ম্যানেজ করছে। আপনের মনে চাইলে আপনে যাইতে পারেন”। অপরদিকে গত কদিন ধরে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে আল আমিন বলেন, ওয়া মনির ভাই ভালো যানেন। তিনিই ম্যানেজ করতাছেন। আর প্রশাসন ম্যানেজ থাকলে পত্রিকায় লেখলে কিছু আসে যায় না”। এমন কথার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের পরিচয় পেতেই ‘থ’ খেয়ে যায় আল আমিন। ক্ষমা চেয়ে নিজের নাম পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানান।
এসময় আল আমিন বলেন, এইসব হোটেলে মেয়ে রেখে ব্যবসা করে বলেই এনিয়ে বার বার পত্রিকায় নিউজ হয়। কিন্তু চক বাজারের হোটেল ইসলামিয়া, হোটেল কুয়াকাটা, পোর্ট রোডের হোটেল রোদেলা, হোটেল শিকদার, হোটেল রোজ হ্যাভেনের মত হোটেলগুলোতে দেহ ব্যবসা চলে যা নিয়ে কেউ লেখে না। ওইসব হোটেলে কর্লগল বা বাইরে থেকে ছেলে মেয়েরা এসে ঘন্টা হিসাবে ভাড়া নিয়ে কাজ করে চলে যায়। শুধু তাই নয়, হোটেলগুলোতে মাদক ব্যবসাও চলে বলে দাবী মিনি পতিতালয়ের দালাল আল আমিনের।
এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম এর সাথে তার সরকারি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ওসি’র সরকারি নম্বরে কল রিসিভ করে সেকেন্ড অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় সময় অভিযান চালাচ্ছি। ধরেও আনা হচ্ছে পতিতা ও খদ্দেরদের। আমরা যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছে পতিতা ব্যবসা নিয়ন্ত্রনের জন্য।
নগর পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, গত কদিন আগেও দুটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রায় সময় এমন অভিযান আমরা চালাই। চেষ্টা করছি প্রতিরোধ করার।
তিনি বলেন, যাদের আটক করা হচ্ছে তাদের আদালতে চালান করা হয়। কিন্তু মাত্র ২শ টাকা জরিমানা দিয়ে আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে তারা। আইনটা আরেকটু শক্তিশালী হলে পতিতা ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হতো। তাছাড়া মনির ও শিপনকে আটক না করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা স্পটে যাকে পাচ্ছি তাকেই ধরে আনছি। এখন যাকে পাচ্ছি না তাকে তো ধরে আনা সম্ভব না। তবে এ বিষয়ে পুলিশের অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।