মাঝ নদীতে ত্রাস করলে সেই লঞ্চ ঘাটে ভিড়তে পারবে না- মেয়র মাঝ নদীতে ত্রাস করলে সেই লঞ্চ ঘাটে ভিড়তে পারবে না- মেয়র - ajkerparibartan.com
মাঝ নদীতে ত্রাস করলে সেই লঞ্চ ঘাটে ভিড়তে পারবে না- মেয়র

3:16 pm , August 8, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঈদ যাত্রায় মাঝ নদীতে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে একটি যদি আরেক লঞ্চকে ধাক্কা দিলে নৌ-বন্দরে ভিড়তে পারবে না সেই লঞ্চ। ঈদে যাত্রীদের নিরাপত্তায় লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি এমন হুশিয়ারী দিয়েছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। গতকাল বৃহষ্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের তৃতীয় তলার সভা কক্ষে আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন এবং কোরবানীর পশুর বর্জ্য অপসারণ বিষয়ক সভায় তিনি এ হুশিয়ারী দেন। এ সময় ঈদে ঘর ফেরা মানুষদের একটি শান্তি এবং নিরাপত্তা দিতে পারলে সেটাই হবে আমার এবং আমার সরকারের সব থেকে বড় সফলতা। তাই ঘরমুখো যাত্রীরা যাতে নিরাপদে যাত্রা করতে পারে সে দিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও খেয়াল রাখতে হবে। কেননা সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও বেতন-ভাতা হয় জনগণের টাকায়। তাই তাদের নিরাপত্তা সহ সকল ভালোমন্দ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, দেশের অন্যান্য পরিচ্ছন্ন সিটি’র মধ্যে বরিশাল সিটি অন্যতম। পরিচ্ছন্ন এই নগরীর দায়িত্ব শুধু আমার একার নয়। কেননা আমরা বাহির ঠিক রাখতে পারবো কিন্তু আপনার ঘর ঠিক রাখার দায়িত্ব আপনাকেই পালন করতে হবে। এজন্য আসন্ন ঈদ উল আযহায় সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত জায়গায় কোরবানীর পশু জবাই করতে করতে হবে। মেয়র হিসেবে আমি ঘোষনা দিচ্ছি পূর্বে কি হয়েছে না হয়েছে তা জানি না। তবে এবার কোরবানীর দিন রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে কোরবানীর পশুর সকল বর্জ্য অপসারণ করা হবে।
মেয়র বলেন, শুধুমাত্র পরিচ্ছন্ন নগর ব্যবস্থা ধরে রাখতে এবার কোরবানীতে পশুর বর্জ্য অপসারনের জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত বছর যেখানে প্রায় সাড়ে চারশ শ্রমিক ছিলো সেখানে এবার ৯শ শ্রমিক কাজ করবে বর্জ্য অপসারণে। তাছাড়া কোরবানীর পশু জবাইয়ের স্থানও বৃদ্ধি করা হয়েছে। গতবার ৩০টি ওয়ার্ডে যেখানে ১৩৭টি পশু জবাই’র স্থান ছিলো সেখানে এবার তার সংখ্যা ১৪২টিতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই নির্ধারিত জায়গায় কোরবানীর পশু জবাই দেয়ার পাশাপাশি কোরবানীর পশুর বর্জ্য অপসারনে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সহযোগিতার আহ্বান জানান মেয়র।
সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আরো বলেন, ঈদ এবং কোরবানীতে দক্ষিণাঞ্চলে যত মানুষ এসে থাকে তার বেশিরভাগ যাত্রীই লঞ্চ যোগে আসেন। তাই এই দিকটাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নৌ পথে কোন ধরনের প্রতিযোগিতা করা যাবে না। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বা ত্রাস করে লঞ্চ চলাচলের কারনে কোন নৌ যান দুর্ঘটনা এমনকি ধাক্কা লাগলেও সেই লঞ্চ নদী বন্দরে বার্দিং করতে দেয়া হবে না বলে মালিক ও শ্রমিকদের হুশিয়ার করেন। সেই সাথে লঞ্চ ও বাস গুলোতে নিয়মিত মশার স্প্রে করার আহ্বান জানান তিনি।
মেয়র আরো বলেন, ঢাকা থেকে আসা লঞ্চগুলো গভীর রাতে নদী বন্দরে পৌছায়। এর পর গন্তব্যে পৌছতে তাদের পরিবহন বিরম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। যা গেলো ঈদ উল ফিতরে আমি নিজে রাতভর দাড়িয়ে থেকে উপলব্দি করেছে। এজন্য আসন্ন কোরবানীতে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতে দূর্ভোগে পড়তে না হয় সে জন্য লঞ্চঘাট থেকে রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করা হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩ থেকে ৪টি করে বাস চলবে চারটি রুটে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি যেমন করবে, তেমনি গণপরিবহনের নৌরাজ্য থেকে রক্ষা পাবে ঘরমুখো যাত্রীরা।
এদিকে সভায় অংশগ্রহনকারী বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ নগরীতে সম্প্রতি সময়ে সৃষ্ট যানজট নিরসের দাবী তোলেন সিটি মেয়র এর নিকট। এর প্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো আমি নাকি টাকা খেয়ে অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। এজন্য আমি মেয়র নির্বাচিত হয়ে সদর রোড এলাকায় মাহেন্দ্র বন্ধ করে অটোরিক্সা চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটার দায়ভার আমি কোনভাবেই নিবো না। অটোরিক্সার বিশৃঙ্খলা এবং যানজটের কারনে নগরবাসি আমাকে গালি দিবে তা হবে না। আমি চালু করে দিয়েছি এটা নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। ট্রাফিক বিভাগ যদি ব্যর্থ হয় তবে পুরো দায়িত্ব আমাদের উপর ছেড়ে দিতে হবে। আমরা সিটি ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করে এগুলো নিয়ন্ত্রন করবো। যা পুলিশ নয় বরং সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অপরদিকে চলমান ডেঙ্গু রোগের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয় সভায়। সেখানে শেবাচিম হাসপাতালে ঈদের ছুটিতে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করেন অংশগ্রহনকারীরা। এসময় সভায় উপস্থিত শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ইউনুস মিয়া দায়সারা বক্তব্য দিতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বক্তব্যের মধ্যে সিমাবদ্ধ না করে বাস্তবে চিকিৎসকদের উপস্থিত থেকে কাজ করার আহ্বান জানান মেয়র। এছাড়াও নির্বিঘেœ শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপনে সকলকে সহযোগিতার আহ্বান জানান মেয়র।
এসময় সভায় উপস্থিত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) হাবিবুর রহমান খান বলেন, গেলো ঈদে পুলিশ কমিশনার মহোদয় নিজেই রাতভর লঞ্চ এবং বাস টার্মিনালে উপস্থিত থেকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকি করেছেন। এবারেও তার ব্যত্বয় ঘটবে না। কমিশনার মহোদয়ের পাশাপাশি আমরাও কর্মকর্তারা সবাই যাত্রীদের নির্বিঘেœ ঈদ যাত্রা ও শান্তিপূর্ণ ঈদ উদযাপনে কঠোর অবস্থানে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার অংশ হিসেবে শুধুমাত্র নদী বন্দর এলাকায় পুলিশের একজন সদস্য মোতায়েন থাকবে।এছাড়াও যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে ফ্রি বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেই সিদ্ধান্তকে সাদুবাদ জানান পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ সভায় উপস্থিত সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ও স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খায়রুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিব আহমেদ, বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহাবুব হাসান, বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সিকদার, বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সাইদুর রহমান রিন্টু, বিসিসি’র প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, রফিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখ।এছাড়াও অনুষ্ঠিত সভায় পরিচ্ছন্ন নগরী, কোরবানীর পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও শান্তিতে ঈদ উদযাপনের বিষয়ে পরামর্শমুলক বক্তব্য রাখেন বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী আবুল কালাম আজাদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মুরাদ আহমেদ, কাজী মিরাজ মাহমুদ, রাহাত খান, সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT