3:13 pm , August 7, 2019
সাঈদ পান্থ ॥ জমতে শুরু করেছে বরিশাল মহানগরীসহ জেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী ৬৬টি পশুর হাট। আসন্ন ঈদ উল আজহা উপলক্ষে ইতোমধ্যে জমজমাট হয়ে উঠেছে হাটগুলো। যারমধ্যে বেশকিছু হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে আরো দুই দিন আগ থেকে। আশা করা হচ্ছে, আগামীকাল শুক্রবার থেকে বরিশালের সব হাটে পুরোদমে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে। হাটগুলোতে প্রচুর দেশি গরু, মহিষ ও ছাগলের দেখা মিলছে। স্থানীয় খামারিরা দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করেছেন। তবে গো-খাদ্যসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বারের চেয়ে এবারে পশুর দাম অনেকটাই বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। তাই কোরবাণী ঈদের মাত্র পাঁচ বাকি থাকলেও কেনা-বেঁচা খুব একটা হচ্ছেনা বলে বিভিন্ন হাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।স্থানীয় খামারিরা জানিয়েছেন, খামারে ভুষি, খড়, ভাত, কুড়া, খৈল ও ঘাসই গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গরু মোটাতাজা করতে কোনও ওষুধ ব্যবহার করেন না। এবার গরু লালন-পালন, গো-খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই গরুর দামও একটু বেশি। গতবার যে গরু ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি সেই গরুর দাম এবার ৭০-৮০ হাজার টাকা। বরিশাল জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের ১০ উপজেলায় এবারে মোট ৬৬টি পশুর হাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারমধ্যে ২৫ টি স্থায়ী ও ৩৫ টি অস্থায়ী হাট।
স্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলায় ১ টি, বাবুগঞ্জে ২ টি, বাকেরগঞ্জে ৬ টি, গৌরনদীতে ২টি, মুলাদিতে ২টি, বানারীপাড়ায় ৩টি, হিজলায় ৭টি ও মেহেন্দিগঞ্জে ২টি রয়েছে। অপরদিকে, অস্থায়ী হাটের মধ্যে সদর উপজেলায় ৭টি, বাবুগঞ্জে ৪টি, উজিরপুরে ৬টি, বাকেরগঞ্জে ৪টি, গৌরনদীতে ১টি, আগৈলঝাড়ায় ৩টি ও মুলাদীতে ১০টি হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরের পোর্টরোড কসাইখানা, বাঘিয়া আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের দু’টি স্থায়ী হাট রয়েছে। যার পাশাপাশি কোরবানির পশু বিক্রির জন্য নগরের রূপাতলীর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর ঢালে, কালিজিরা বাজার সংলগ্ন এলাকা, চৌমাথা থানা কাউন্সিলের বিপরীত পাশে, কাউনিয়া টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন মাঠে একটি করে অস্থায়ী গরুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৪২টি স্থানে কোরবানি পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারন করা হয়েছে। বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত হাসান বাবলু বলেন, অনুমোদিত হাটগুলোতে যথানিয়মে পশু সরবরাহ করবে ইজারাদাররা। হাটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ সার্বিক কাজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সঙ্গে সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করবে। তিনি আরও বলেন, কেউ যেন পশু বিক্রেতাদের টানা-হেঁচড়া না করেন। তারা যে হাটে যেতে চান, সে হাটেই তাদের যেন যেতে দেওয়া হয় এ বিষয়ে হাট ইজারাদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
এদিকে বরিশাল জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি হাট ইজারাদার বা পরিচালনাকারীদের নিজস্ব ভলান্টিয়ার ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণের মেশিন, পুলিশ ক্যাম্প, পশুর চিকিৎসা ও গুণগত মান নিশ্চিত করণে মেডিকেল ক্যাম্প, মোবাইল ব্যাংকিং বুথ থাকছে। এছাড়া নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা পশু ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন প্রাণি স¤পদ কর্মকর্তা বলেন, গরু মোটাতাজাকরণের ওষুধে গরুর লিভার নষ্ট হয়ে যায়। ওই মাংস খাওয়াও নিরাপদ নয়। পশু হাটগুলোতে মনিটরিং এর জন্য বিভিন্ন টিম কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমরা কসাইদের মাংস প্রক্রিয়াজাতের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতো কিছু করার পরও খামারিরা গরুর খাবারের দাম বেশী দেখে গরু মোটাতাজাকরণের ওষুধ খাওয়াচ্ছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারি না। কারণ এসব খামারিরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই ব্যবসা করছে।