3:09 pm , August 7, 2019
খান রুবেল ॥ স্থান সংকটের মধ্যেও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চালু হচ্ছে অস্থায়ী স্বতন্ত্র ডেঙ্গু ইউনিট। আজ বৃহস্পতিবার হাসপাতালের চতুর্থ তলায় এই ইউনিটটিতে রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে। এর পাশাপাশি আগামী রোববার জরুরী ভিত্তিতে আরো ১২টি কেবিন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য চালু করা হবে। তবে এতেও স্থান না হলে আড়াইশ রোগী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে শেবাচিমের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের। গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ( শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, কাগজে কলমে এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের মত রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহন করছে। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে স্থান সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। তার মধ্যে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চারটি ইউনিটের অধিনে ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য পৃথক চারটি ওয়ার্ডের ব্যবস্থা থাকলেও নারীদের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে একটি মাত্র ওয়ার্ডে। ওই একটি ওয়ার্ডের চারটি ইউনিটের রোগী রাখা হয়। যার কারনে ওয়ার্ডটিতে বছর জুড়েই রোগীদের ভোগান্তি রয়েছে। পুরুষদের জন্য নির্ধারিত চারটি ওয়ার্ডে প্রতিটিতে (বর্ধিত শয্যা সহ) ৪৮টি করে মোট ১৯টি এবং একটি মহিলা ওয়ার্ডে ৭২টি শয্যা রয়েছে। বুধবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিটেই এক থেকে দেড়শ জন রোগী ভর্তি থেকে বর্তমানে চিকিৎসা গ্রহন করছেন। যার মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাই প্রায় আড়াইশ জন।
সরেজমিনে দেখাগেছে, হাসপাতালের মাঝের একটি ব্লকে গত এক বছর ধরে পুনঃনির্মানের কাজ চলছে। এ কারনে ওই ব্লকে থাকা মেডিসিন-২ ও মেডিসিন-৩ ইউনিটের পুরুষ রোগীদের রাখা হচ্ছে অপর দুটি ওয়ার্ডের মেঝে এবং হাসপাতালের বারান্দায়। একই ব্লকে থাকা কেবিনে রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে নির্মান কাজের শুরু থেকেই। ফলে চলমান সংকটের মধ্যে ডেঙ্গু রোগী নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। জায়গা দিতে না পারায় অন্যান্য রোগীদের সাথে এক ওয়ার্ডের মধ্যেই রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, কোরবানী উপলক্ষ্যে ঢাকার হাজার হাজার মানুষ বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে আসবে। এ কারনে বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। গত কদিনে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ার চিত্র এমনটাই মনে হচ্ছে। কেননা প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কমছে না বরং বেড়েই চলছে।
পরিচালক বলেন, ঈদের সময় অন্যান্য রোগীর চাপ কম থাকলেও ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আগেভাগেই স্বতন্ত্র ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালে মাঝের যে ব্লকের উন্নয়ন কাজ চলছে তার চতুর্থ তলার একটি ওয়ার্ড ডেঙ্গু ইউনিট হিসেবে চালু করা হচ্ছে। যেখানে একশ রোগী ভর্তি রাখা যাবে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে। তিনি ওয়ার্ডটিতে বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা সহ রোগী রাখার উপযোগী করে দিচ্ছেন। তাই বৃহস্পতিবার থেকেই ওয়ার্ডটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি শুরু হবে।
তাছাড়া আগামী সপ্তাহের রোববার একই ব্লকের পঞ্চম তলায় জরুরী ভিত্তিতে ১২টি কেবিন চালু করা হবে। এজন্য গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই দিন থেকে কেবিনগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারবেন।
পরিচালক ডা. বাকির হোসেন আরো বলেন, নতুন ইউনিট চালুর পরেও সংকুলন না হলে সে জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সেটা ঈদের পরবর্তী সময়ে। কেননা ওই সময় রোগীর চাপ বেশি থাকে। এজন্য নগরীর কালিজিরা এলাকায় সদ্য চালু হওয়া এ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। সংকট মোকাবেলায় তারা শেবাচিম কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন। এর ফলে বেসরকারি ওই হাসপাতালটিতে এক সাথে আড়াইশ রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদান করা যাবে।
তবে এ ক্ষেত্রে রোগীদের ওষুধ-পত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহ আনুসাঙ্গীক বিষয়গুলো শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই দেখভাল করবে। এমনকি ওই হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের মাধ্যমেই চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। এজন্য কিছু জন্যবল সেখানে স্থানান্তর করতে হতে পারে। তবে সেটা ডেঙ্গু রোগীর পরিস্থিতি’র উপর নির্ভর করে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক।
