3:27 pm , August 5, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে আবাসিক হোটেলগুলোতে কোনভাবেই থামছেনা দেহ ব্যবসা। কতিপয় অসাধু পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই বেশ কিছু হোটেলে এসব অবৈধ কার্যকলাপ চলছে। শুধু দেহ ব্যবসায়ীই নয় এর আড়ালে আবাসিক হোটেলগুলো পরিনত হয়েছে মাদকের স্বর্গরাজ্যে। এসব হোটেলের কারণেই ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে যুব সমাজ। অনুসন্ধানে জানা গেছে নগরীর ১০/১২টি হোটেলে চলে গণহারে দেহ ব্যবসা। এসব হোটেলে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ জন নারী রাখা হয়। আবার কিছু হোটেলে স্থায়ীভাবে মেয়ে না রাখলেও ঘন্টা হিসেবে রুম ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এই তালিকায় নগরীর অনেক ভিআইপি হোটেলও রয়েছে। ওই সব হোটেলে যারা যায় তারা বেশিরভাগই স্কুল ও কলেজ পড়–য়া। তারা একটি রুম এক ঘন্টার জন্য ৫‘শ থেকে এক হাজার টাকায় ভাড়া নেয়। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছেন তারা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে এ ধরনের কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। পুলিশকেই মাসোহারা না দিলেই চলে অভিযান। গণহারে দেহ ব্যবসা চলে যেসব হোটেলে ঃ নগরীর ৮/১০টি হোটেলে স্থানীভাবে মেয়েদের রেখে দেহ ব্যবসা চালানো হয়। এই তালিকায় রয়েছে দক্ষিন চকবাজারের গালিব, পাতারহাট, পপুলার ইন, অতিথি, পোর্টরোড এলাকার হোটেল চিল, অন্তরা, মহসিন মার্কেটে হোটেল ঝিনুক (পূর্বে নাম ছিল মা বোর্ডিং)। গত শুক্রবার দুপুরে পরিচয় গোপন রেখে হোটেল পপুলারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ১০ জন মেয়ে কক্ষের বাইরে লাইন দিয়ে বসে আছেন খদ্দেরের অপেক্ষায়। রেট জানতে চাওয়া হলে হোটেলের ম্যানেজার জানান, আগে পছন্দ করুন তার পরে রেট দেখা যাবে। হোটেল পপুলার এক ব্যক্তি পরিচালনা করছেন। হোটেলের মূল মালিক মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছেন। প্রতি মাসে হোটেল ভাড়া ৭০ হাজার টাকা।
গালিব, পাতারহাট ও অন্তরাসহ ৬টি হোটেল ভাড়া দিয়ে চালাচ্ছেন মনির নামের এক নারীর দালাল। এই ছয়টি হোটেলের মাসিক ভাড়া গুনতে হয় চার লাখ ২০ হাজার টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে একটি হোটেলে মাসে কমপক্ষে আয় হয় ছয় লাখ টাকার উপরে। এ হিসেবে হোটেল ব্যবসায়ী মনির মাসে আয় করছেন ৩৬ লাখ টাকার বেশি। এই ব্যবসা করে নারীর দালাল মনির এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। নগরীর রুপাতলীতে করেছেন বাড়ী। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় আছে অনেক জমি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রতি হোটেলে মাসে ছয় লাখ টাকা আয় হলেও এর থেকে দেড় লাখ টাকায় ব্যয় করতে হয় পুলিশ ম্যানেজ করতে। শুধু কোতয়ালী পুলিশ নয় ডিবি পুলিশকেও টাকার ভাগ দিতে হয়। প্রতি হোটেল থেকে এসআইরা পায় এক হাজার টাকা (সব এসআই নয়), এএসআইদেরকে দিতে হয় ৫‘শ টাকা। থানার ওসিকে প্রতি হোটেল থেকে মাসে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। ডিবি পুলিশের আটটি টিম রয়েছে। প্রত্যেক টিমকেই আলাদাভাবে টাকা দিতে হয়। অভিযানের পূর্বে ওই সব টিমের সদস্যরা আগেভাগেই হোটেল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেন। হোটেলে অবৈধ ব্যবসা নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে ১০/১৫ দিন হোটেলে নারী ব্যবসা বন্ধ থেকে পুনরায় চালু করা হয়। সাবেক পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিনের সময় টানা তিন বছর হোটেলে নারী ব্যবসা বন্ধ ছিল। ওই সময়ে কোতয়ালী থানার এক ওসি প্রতি তিনটি হোটেল থেকে ৪৫ হাজার টাকা অগ্রীম নিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কমিশনারের কঠোর নির্দেশনার কারণে টাকা দেয়ার পরেও হোটেলে নারী ব্যবসা চালাতে সাহস পায়নি। পুলিশ কমিশনার বদলি হয়ে যাওয়ার পরে আবার নতুন করে হোটেলগুলোতে জমজমাট হয়ে ওঠে দেহ ব্যবসা। শুধু তাই নয় হোটেলগুলো মাদকের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। রাতে যুবকরা হোটেলে গিয়ে নেশায় মত্ত থাকে। মাদক কেনাবেচার নিরাপদ ঘাটিও আবাসিক হোটেল। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান পুলিশ কমিশনার এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স থাকলেও তাকেও মাঝে মধ্যে ভুল বোঝানো হয়ে থাকে। নামমাত্র কয়েকটি হোটেলে মাঝে মধ্যে পুলিশ রেট দিয়ে দুই-একজনকে আটক করলেও আইনী মারপেছে তারা ছাড়া পেয়ে যায়।
অপর একটি সূত্র জানায়, বেশিরভাগ হোটেলেই কমবেশি নারী ব্যবসা হয় শুধু পদ্ধতিটা ভিন্ন। যেমন ইম্পেরিয়াল, শামস, সিটি প্লাজায় ব্যবসা হয় ঘন্টা হিসেবে। এখানে মেয়েরা থাকেনা। তবে অনেক স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলে-মেয়েরা এখানে এসে এক ঘন্টার জন্য রুম ভাড়া নেয়। প্রতি ঘন্টায় হোটেল কর্তৃপক্ষকে ৫‘শ থেকে এক হাজার টাকা দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হোটেল ম্যানেজার এ প্রতিবেদককে বলেন, নারী ব্যবসা না করলে হোটেলে প্রতি মাসে লাভতো দূরের কথা ভাড়া টাকাও ওঠেনা। ফলে আমরা বাধ্য হয়েই নারী ব্যবসা করছি। এতে করে আমাদের যেমন লাভ হচ্ছে তেমনি পুলিশও লাভবান হচ্ছে। আমরাতো সব একারা খাচ্ছিনা। সবাইকে ম্যানেজ করে চলতে হচ্ছে।