2:58 pm , July 31, 2019
খান রুবেল ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট ও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেট ঘোষনা করা হয়েছে। আঠারোতম প্রস্তাবিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৫ শত ৪৮ কোটি ১০ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪৩৭ টাকা। যা গত ১৭ তম বাজেটের থেকে একশত ৪ কোটি ৭০ লাখ ৬৯ হাজার ১৮২ টাকা বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাজেটের আকার ছিলো ৪শত ৪৩ কোটি ৩৯ লাক্ষ ৯৮ হাজার ২৫৫ টাকা। যার সংশোধন হয়ে দাঁড়িয়েছে একশত ১২৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪৫ টাকা। গতকাল বুধবার বিকাল ৪টায় নগর ভবনের সামনে উন্মুক্ত বাজেট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র পক্ষে প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল হোসেন লিটু প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষনা করেন। সিটি নির্বাচনের এক বছর পরে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র এটাই প্রথম বাজেট। বাজেট ঘোষনা অনুষ্ঠানে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) হাবিবুর রহমান খান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ও মেয়র পতিœ লিপি আব্দুল্লাহ সহ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ, সুধিজন সহ সাধারণ নগরবাসী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিসিসি’র নিজস্ব আয়, অনুদান ও দাতা সংস্থার নির্ভরশীল প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের খাতকে তিনভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৩ টাকা। সরকারী অনুদান বাবদ আয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৬০ টাকা। গৃহীত ঋণ বাবদ আয় নির্ধারন করা হয়েছে ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার। তিনটি খাত মিলিয়ে মোট আয় দেখানো হয়েছে ১২৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৩ টাকা।
উন্নয়ন খাতে আয় ধরা হয়েছে ৪১৬ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৪ টাকা এবং উন্নয়ন সংযোগী সংস্থা কর্তৃক প্রাপ্ত তহবিল নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রারম্ভিক স্থিতি রয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
অপরদিকে বাজেটে একই ভাবে তিনটি খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ২০ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ টাকা। জমা ও অগ্রীম খাতে ৫ কোটি ৫০ লাখ, গৃহীত ঋণ বাবদ ব্যয় ১৫ লাখ টাকা। যার মোট দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ টাকা।
উন্নয়ন ব্যয় ৪১৬ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৪ টাকা। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কর্তৃক প্রাপ্ত তহবিল ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, সমাপনি স্থিতি ৬ কোটি ২৬ লাখ ১১ হাজার ৯৬৩ টাকা। সব মিলিয়ে যার ব্যয় দাড়ায় ৫৪৮ কোটি ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৩৭ টাকা।
এদিকে বাজেট ঘোষনার পরে উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বাজেটের পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন সম্ভাবনা ও অসঙ্গতী তুলে ধরে প্রশ্ন করেন নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। পরে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
এর পূর্বে আলোচনায় মেয়র নগরীর উন্নয়ন, ভবিষ্যৎ মহা পরিকল্পনা ও আধুনিক নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে গৃহিত বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন। পাশাপাশি বিগত পরিষদে নগর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির তথ্য তথ্য তুলে ধরে মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত রুপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এর অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮ সালের ২২ অক্টোর আমি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চতুর্থ পরিষদের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহন করি। দায়িত্বভার গ্রহণের পর দীর্ঘ দিনের নগরীর পুঞ্জিভূত সমস্যা সমাধানের বাস্তবমুখী কর্মপন্থা গ্রহণ করেছি। আমার যে সকল পরিকল্পনা রয়েছে সে সকল বাস্তবায়ন খুব একটা সহজসাধ্য নয়। প্রায় ৬ লাখ নাগরিকের অধ্যুষিত এই মহানগরীর রয়েছে হাজারও সমস্যা। আমাদের সীমিত সামর্থ্য ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে দিনরাত কাজ করে চলেছি।
মেয়র বলেন, বরিশালকে রাতারাতি বদলে দেয়ার দাবী আমাদের নেই। আমরা এগিয়ে যেতে চাই পরিকল্পিতভাবে এবং ক্রমান্বয়ে। আপনারা জানেন, প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার ঋণের বোঝা নিয়ে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ইনশা-আল্লাহ মানুষের ভাগ্যর পরিবর্তনের জন্য আমি যে শপথ নিয়েছি কোন অপশক্তি আমাকে রুখতে পারবে না। আপনারাই আমার শক্তি, আপনারা আমার পাশে থাকলে আমরাই গড়বো আগামীর বরিশাল।
এসময় মেয়র বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পূর্বের বিভিন্ন তথ্য উপাথ্য এবং অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৬ অর্থ বছরে অডিট আপত্তি আছে ১৩৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধ না করায় সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের সেবাকে ডিজিটাল না করায় দুর্নীতি ও অনিয়ম বেড়ে চলছিলো। এ সময় মোট ২৬টি অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরেন মেয়র।
তাছাড়া দায়িত্ব গ্রহনের পরে গত ৯ মাসে বর্তমান মেয়র সহ সিটি পরিষদের বিভিন্ন অর্জন ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন মেয়র। তবে অধিকাংশ পরিকল্পনাই বিগত মেয়রদের আমল থেকেই বাজেটে অন্তর্ভক্ত হয়ে আসছে। যার মধ্যে নগর ভবন নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিণালে স্থানান্তর, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল গড়িয়ার পাড়ে স্থানান্তর, ট্রাক টার্মিনাল নির্মান, নগরীতে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মান, মার্কেট নির্মান সহ আরো বেশ কিছু।
বিশেষ করে দায়িত্ব গ্রহনের পরে মহা পরিকল্পনার ফলে গত ৯ মাসে বিসিসি’র রাজস্ব আয় বেড়েছে, কমেছে ব্যয়। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিসিসি’র রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ কোটি ৭৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৪৪৯ টাকা। এছাড়া ব্যয় কমেছে ২ কোটি ১৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৬২ টাকা।
ব?রিশাল সি?টি ক?র্পো?রেশ?নের ২০১৯-২০ অর্থ বছ?রের বাজেটে পাঁচ বছর ও দশ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। পাছ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে নগরীর ৪৩ টি খাল পুন:খনন, নগরীর ৫টি খালের পাড় সংরক্ষন, জেল খালের পাড়ে বাইপাস সড়ক নির্মান, জেলখালের উপর ৪টি ব্রিজ নির্মান, নতুন বাজার স্থানান্তর করে যানজট নিরসন, আধুনিক নগর ভবন ও কাউন্সিলরদের জন্য প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে কার্যালয় নির্মান, বহুতল মার্কেট নির্মান, শহর রক্ষা বাঁধ র্নিমান ও রিং রোড র্নিমান, চাঁদমারী কেডিসি বধ্যভূমি, ত্রিশ গোডাউন এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, জলাশয় ভরাট বন্ধ করা, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নির্মান, শিশু বান্ধব নগরী গড়ে তোলা, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা, প্রসস্ত ফুটপাত তৈরী , শিশুদের সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা, ওয়াচ টাওয়ার র্নিমান, স্কাই রেস্টুরেন্ট নির্মান, নতুন পানির পাইপ লাইন স্থাপন ও গভীর নলকুপ স্থাপন করা।
এছাড়াও দশ বছর দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বরিশাল সিটি কপোরেশনের সীমানা বৃদ্ধি করা, নদীর তীরে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা, শহর রক্ষা বাঁধ এবং আধুনিক নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, নগর অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন মোকাবেলায় রক্ষা বাঁধ, সমন্বিত রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বস্তিবাসির উন্নয়ন করা,জেলখানা স্থানন্তর করে সেখানে অবথিয়েটার সহ আধুনিক সাইন্স সিটি ও বিনোদন পার্ক গড়ে তোলা, বরিশাল শহরের মধ্যে অভ্যন্তরীন মেট্রেরেল চালু করা।
বাজেট পেশ অনুষ্ঠানে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমি জনগনের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমি চাই জনগনকে সাথে নিয়ে কাজ করতে। আর তাই বাজেট অনুষ্ঠানে সাধারন মানুষকে আহবান জানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সাধারন মানুষের সহযোগিতায় একটি আধুনিক মডেল শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
তিনি বলেন আমি দূনীতি করি না আর কাউকে করতেও দেব না। বরিশাল সিটি করপোরেশন হবে একটি স্বচ্ছ কর্পোরেশন। এখানে নগরবাসী তাদের সেবা গ্রহন করবে।
প্রস্তাবিত বাজেট বরিশালের উন্নয়নে আরো বেগবান করবে উল্লেখ করে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বরিশাল সিটি কপোরেশন একটি অত্যাধুনিক সিটি কপোরেশন হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করবে। এজন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।