3:09 pm , July 30, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সহ বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। ছয় জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১২৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় ৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) সহ বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করছেন। যার মধ্যে শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে- বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের নাসির খানের ছেলে আসলাম খান (২৪) ও কাউখালী উপজেলার গোসনতারা গ্রামের আমদ আলী’র ছেলে সোহেল (১৮)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্ব স্ব এলাকায় তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা ফ্রি’ করে দিয়েছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে চিকিৎসা সেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে মেডিসিন ওয়ার্ড গুলোতে চিকিৎসক ও নার্সদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, গত ১৬ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত ৭২ জনকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩১ রোগী। বাকিরা চিকিৎসা গ্রহন শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
ডা. বাকির হোসেন বলেন, যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে আসলামকে ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৩ এর অধীনে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সোয়া ৩টায় তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া ২৯ জুলাই দুপুর ১টা ২০ মিনিটে একই ইউনিটে ভর্তি করা হয় সোহেলকে। তিনি রাত ৩টা ৪০ মিনিটে মারা যান। এরা দু’জনই রোগের শেষ ক্রান্তিকালে হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়। তাই ডেঙ্গু জ¦র হার্ট, লিভার ও কিডনীকে ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলেছে। পরিচালক বলেন, এরা দু’জনই ঢাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছিলো। চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। ভেবেছিলো ঢাকা থেকে দেয়া ওষুধের সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু তা না হয়ে অবস্থা খারাপের দিকে গেলে সোমবার তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তাৎক্ষনিকভাবে তাদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তাদের আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, শেবাচিম হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থার কোন ত্রুটি হচ্ছে না। একমাত্র জায়গা স্বল্পতার কারনে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগীদের সকল প্রকার চিকিৎসার পাশাপাশি পরীক্ষা নিরীক্ষাও একদম বিনামূল্যে করা হচ্ছে। ওষুধের ব্যবস্থাও হাসপাতালেই রয়েছে। তবে নরমাল স্যালাইনের কিছুটা সংকট রয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রনালয়কে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্যালাইনের সংকট দুর হবে বলেও আশাবাদী শেবাচিম হাসপাতালের এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ডেঙ্গু কোন ছোয়াচে রোগ নয়। এটা চিকিৎসাতেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। তাই গায়ে জ¦র, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা এবং বমি-বমি ভাব দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পরিচালক ডা. বাকির হোসেন।
অপরদিকে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালায় সূত্রে জানাগেছে, বরিশাল জেলা বাদে বিভাগের অপর ৫ জেলায় এখন পর্যন্ত ৫৫ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহন করছেন। যার মধ্যে পটুয়াখালী জেলায় ২০ জন, ভোলা জেলায় ১১ জন, পিরোজপুর জেলায় ৫ জন, বরগুনা জেলায় ১৮ জন ও ঝালকাঠি জেলায় ১ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হওয়া নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৫ জন।