3:05 pm , July 30, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আজ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আশা-আকাঙ্খার অষ্টাদশ বাজেট ঘোষনা করা হবে। এটা বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র দেয়া প্রথম বাজেট। তাই নতুন মেয়রের বাজেটকে ঘিরে নগরবাসীর মধ্যে জেগেছে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার হিসাব নিকাশ। সেই দিকটি মাথায় রেখেই প্রথম বারের মত উন্মুক্ত বাজেট ঘোষনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নিতে পারবেন। বাজেট সম্পর্কিত সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবেন মেয়রকে।এদিকে নতুন বাজেটের আকার কত হবে সেটা জানা যায়নি। তবে বিগত বছরের থেকে এবারের বাজেটের আকার কমতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য আকার কমলেও এটি আয় এবং উন্নয়ন নির্ভর বাস্তবমুখী বাজেট হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
নগর ভবন সূত্রে জানাগেছে, ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয় ২০০২ সালে। তখন সিটি’র প্রথম নির্বাচিত মেয়র ছিলেন বিএনপি’র বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। তার পরে দ্বিতীয় পরিষদের মেয়র নির্বাচিত হন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবে সভাপতি মরহুম শওকত হোসেন হিরন। তার আমলেই সিটি কর্পোরেশনের “স্বপ্নবিলাসী” বাজেট শুরু হয়। তৃতীয় পরিষদে যার আকার হয় ৪৪৩ কোটি টাকায়। তবে চতুর্থ বাজেটে “স্বপ্ন বিলাসী” বাজেট ভাবনা থেকে সরে আশার উদ্যোগ নিয়েছেন বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে “স্বপ্ন বিলাসী” বাজেট প্রথা পরিবর্তন করে “বাস্তমুখী” বাজেটে রূপ দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। সেভাবেই এবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বাজেট ঘোষনা হবে বলে জানিয়েছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত হাসান বাবলু।
মেয়র এর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, নতুন এই বাজেটে নতুন করে কোন প্রকার কর আরোপ করা হবে না। তবে কর সম্পর্কিত সাবেক মেয়র এর করা রেজুলেশনই বাস্তবায়ন করা হবে। বাজেটের বিশাল একটি অংশই থাকবে উন্নয়ন খাতে। যা দিয়ে সড়ক ও ড্রেজেন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধণের পাশাপাশি নগরীর ঐতিহ্যবাহী খাল খনন, পুনরুদ্ধার, পানি সংকট নিরসন ও বস্তিবাসীর উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ থাকবে।
তবে বাজেটে কোন প্রকল্পেই বাড়তি আয় বা ব্যয় দেখানো হবে না। বরং জনগণের কাছে জবাবদিহীতার স্থান থেকে অর্থের অপচয় রোধে যতটুকু ব্যয় হবে বাজেটে ঠিক ততটুকুই দেখানো হবে। এতে করে অন্যান্য প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন খুব দ্রুত সম্ভব হবে।
জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান মেয়রের নির্বাচনকালীন বিশেষ কোন ইশতেহার ছিলো না। নগরবাসী’র যেটা দাবী এবং তিনি নগরবাসীর জন্য যে উন্নয়ন করবেন, সেটাই তার ইশতেহার হবে বলে আশ^স্থ করেছিলেন। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই মেয়র বাস্তমুখী বাজেট ঘোষনা করবেন।
নগর ভবন সূত্রে জানাগেছে, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়ে বিজয়ের হাসি হেসেছিলেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এর পর দায়িত্ব গ্রহন করেন একই বছরের ২৪ অক্টোবর। দায়িত্ব গ্রহনের দিক থেকে না হলেও নির্বাচিত হওয়ার দিক থেকে এক বছর অতিক্রম করেছেন তিনি।
সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের গত ৯ মাসেই নগর উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা এবং কর্মকান্ডের মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব গ্রহনের পর পরই নগর ভবনকে দুর্নীতি মুক্ত ঘোষনা করেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। এজন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মীদের ওএসডি এবং রদবদল সহ শাস্তির আওতায় এনেছেন। এটিকে মেয়র’র বড় একটি অর্জন বলে মনে করছেন নগরবাসী।
এদিকে নগরবাসির সেবা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন তিনি। যেখানে বিগত মেয়রের আমলে আন্দোলন ছাড়া বেতন জুটতো না সেখানে নতুন মাসের শুরুতেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে বেতন পৌছে যাচ্ছে। ঈদের পূর্বে উৎসব বোনাস এবং প্রথমবারের মত বেতনের সমান উৎসব ভাতা পাচ্ছেন দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিকরা।
অপরদিকে নগরীতে প্রথমবারের মত ৫ বছরের চুক্তিতে আধুনিক যন্ত্র ও মেশিন দারা সড়ক সংস্কার কাজ করে অভিভুত করেছেন নগরবাসীকে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দিয়েছেন থ্রি-ডি জেব্রা ক্রোসিং। যা দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে বরিশালেই প্রথম। গত নয় মাসে এটিও ছিলো তার সফলতার একটি দিক।
অপরদিকে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ’র দক্ষ নির্দেশনা এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্ম পরিচালনার কারনে নগর ভবন কেন্দ্রীক বেড়েছে রাজস্ব আয়। বিগত অর্থ বছরে কর আদায় শাখায় গৃহকর আদায়ের লক্ষ্য ছিলো ২৪ কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫৯ টাকা। আদায় হয় ১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮২ হাজার ৯৯৪ টাকা। আদায়ের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। যা ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২৩ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ হাজার ২৪২ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছিল ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার ৭৯৩ টাকা। সে হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে।
অপরদিকে ট্রেড লাইসেন্স খাতে বিগত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৫২ টাকা। যা ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের থেকে প্রায় এক কোটি বেশি। তাছাড়া চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরের আরো এক কোটি টাকা আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সে হিসেবে চলতি ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৫২ লাখ টাকা আদায়ে সক্ষম হয়েছেন ট্রেড লাইসেন্স শাখা। বেড়েছে ট্রেড লাইসেন্স এর সংখ্যাও। বর্তমানে ৯৩৫২টি ট্রেড লাইসেন্স এর বিপরিতে নবায়ন হয়েছে ৬৭৭৬টি। নতুন লাইসেন্স হয়েছে ২৫৭৬টি। তাছাড়া আবেদন জমা রয়েছে আরো অসংখ্য।
এদিকে নগরীর অভ্যন্তরীন খাল খনন, পুনরুদ্ধার ও সৌন্দর্য্য বর্ধনে ১৪শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন করিয়েছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। যার অধীনে ১০৬ কিলোমিটার খাল খনন ও পুনরুদ্ধার করা হবে। ৪০৪ কিলোমিটার সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক আরো একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রনালয়। দুটি প্রকল্পই এখন একনেক’র অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দুটি প্রকল্পই নতুন বাজেটে অন্তর্ভূক্ত হবে বলে নগর ভবন সূত্রে জানাগেছে।