3:35 pm , July 28, 2019
খান রুবেল ॥ দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি ও শ্রমিকের মজুরী বাড়লেও বাড়েনি চামড়ার মূল্য। প্রতিটি চামড়ায় নূন্যতম দুইশ টাকা ঘাটতি দিতে হচ্ছে পাইকারদের। মূল্য না পাওয়ায় গত প্রায় ছয় মাস ধরে তারা বন্ধ রেখেছে পশুর চামড়া কেনা বেচা। তার মধ্যে ট্যানারী মালিকদের কাছে পাইকারদের বকেয়া রয়েছে কোটি কোটি টাকা।
এদিকে চাহিদা না থাকায় জবাই হওয়া পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নগরীর কসাইরা। তারা লাখ লাখ টাকা মূল্যের চামড়া ফেলে দিচ্ছে নদী অথবা ডাস্টবিনে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদ উল আযহায় কোরবানীর পশুর চমড়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হতে পারে সংশ্লিষ্টদের। এমনটিই জানিয়েছেন নগরীর পদ্মাবতী এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা। নগরীর সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা বাজারের হাফিজ মিট হাউস এর কসাই মো. মানিক জানান, একটা সময় ছিলো যখন চামড়া কেনা নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। তখন বড় সাইজের একটি চামড়া দুই থেকে আড়াই হাজার টাকাও বিক্রি করেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে চামড়া ব্যবসায়ী ধ্বস নেমেছে। এখন পশুর চামড়া পাইকারদের ঘরে পৌছে দিলেও তা রাখছেন না। ব্যবসায় মন্দা ভাব দেখিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। ফলে বাধ্য হয়ে চামড়া গুলো হয় বাজারের পাশর্^বর্তী খাল-নদী অথবা ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হচ্ছে। একই বাজারের মাংস ব্যবসায়ী ছত্তার মিট হাউস এর মালিক ছত্তার সিকদার বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই বরিশালে চামড়া’র চাহিদা কমে গেছে। ২০১৮ সালের শেষের দিকেও আমরা কম মূল্যে হলেও চামড়া বিক্রি করতে পেরেছি। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আগে কখনই হয়নি। তিনি বলেন, গত রোজার ঈদের পূর্বে ৫ মাস চামড়ার পাইকাররা চামড়া নিলেও তার মূল্য পরিশোধ করেনি। তার মধ্যে গেলো ঈদের পর থেকেই চামড়া নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে পাইকাররা। ফলে প্রত্যহ জবাই হওয়া গরু, ছাগল এবং মহিষের চামড়া কোন কাজে আসছে না। বরং ২০/৩০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে তা ডাস্টবিনে ফেলতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শাহীন জানিয়েছেন বর্তমান সময়ে চামড়া ব্যবসায় ধ্বস নেমে আসার কথা। এ ব্যবসা লাভ জনক হওয়ার গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে বলে দাবী করেছেন এই ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, এক সময় শুধুমাত্র বরিশাল নগরীতেই ২২ থেকে ২৩ জন চামড়া ব্যবসায়ী ছিলো। কিন্তু গত চার বছরের ব্যবধানে সেই সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে মাত্র ৬ থেকে ৭ জনে। যার মধ্যে মাত্র তিন জন রয়েছেন যারা সরাসরি ঢাকায় ট্যানারী মালিকদের সাথে যোগাযোগ ও ব্যবসা করে থাকেন। কিন্তু ওই তিনজনও গত প্রায় ৬ মাস ধরে চামড়া কেনা বন্ধ রেখেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ছোট থেকে বড় সাইজের প্রতিটি চামড়ার সর্বোচ্চ মূল্য ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। আর বাছুর গরুর চামড়ার মূল্য ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। পরবর্তীতে লবন কেনা সহ প্রতিটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত খরচ ও ঢাকায় পাঠাতে ব্যয় হচ্ছে ২৩০ টাকা করে। অথচ ট্যানারী থেকে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত।
তিনি আরো বলেন, দ্রব্য মূল্য বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে। বেড়েছে শ্রমিকের মজুরী। একজন শ্রমিক ২৪ ঘন্টা কাজ করলে তাকে দিতে হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তার পরে খাবারের খরচতো রয়েছেই। এসব খরচ মিলে চামড়া ব্যবসায় লাভের থেকে ঘাটতি পড়ে যায় দ্বিগুনের বেশি। তাই পাইকাররা চামড়া ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শহিদুর রহমান শাহীন বলেন, গত চার বছর পূর্বে শুধুমাত্র নগরীতেই এক একজন ব্যবসায়ী ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার চামড়া সংগ্রহ করেছে। কিন্তু গত কোরবানী সহ ওই বছর চামড়া সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার। কমে যাওয়ার হার প্রায় ৭০ ভাগ। তবে এ বছর কোরবানীতে পাইকাররা চামড়া সংগ্রহ হবে না বলেই ধরে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা মূলধন ব্যয় করে চামড়া কিনে এবং তা প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকা ট্যানারী মিলে পৌছে দিচ্ছে। কিন্তু গত ৪ বছর ধরে ট্যানারী মালিকরা আমাদের টাকা পরিশোধ করছে না। শুধুমাত্র আমি (শহিদুর রহমান শাহীন) একাই ৫৮ লাখ টাকা পাব তাদের কাছে। এমন আরো ব্যবসায়ী রয়েছেন যাদের সব মিলিয়ে ৩ কোটি টাকার মত বকেয়া পড়ে রয়েছে ট্যানারী মালিকদের কাছে। ব্যবসায়ীরা বকেয়া টাকা পেলেও এবার কোরবানীতে চমড়া সংগ্রহনের ঝুকি নিতে পারতো। কিন্তু তা না করে ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। বকেয়া আদায় করতে না পেরে ব্যক্তি এবং ব্যাংক ঋন করে পাওয়ানারদের দেনা পরিশোধ করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শহীদুর রহমান শাহীন বলেন, চামড়া ব্যবসায় ধ্বস নামার প্রধান কারন আন্তর্জাতিকভাবে এর ব্যবহার কমে গেছে। চামড়ার ব্যবসা মুলত চায়না এবং ব্যাংকক কেন্দ্রীক। বাংলাদেশের বেশিরভাগ চমড়া চায়না যাচ্ছে। কিন্তু চায়নার উপর দেয়া আমেরিকান সরকারের অর্থনৈতিক অবরোধের কারনে বাংলাদেশে চামড়া শিল্পে ধ্বস নেমেছে। তার মধ্যে বেড়ে গেছে রেক্সিনের ব্যবহার। জুতা, ব্যগ সহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরীতে রেক্সিনের ব্যবহার বন্ধ করা ও আর্ন্তাতিকভাবে চামড়ার ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে চামড়া ব্যবসা পুনরায় ঘুরে দাড়াতে পারে বলে মনে করছেন ওই পাইকারী চামড়া ব্যবসায়ী।