3:23 pm , July 25, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সহ সারা দেশে যাত্রী ও পন্যবাহী নৌযান চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর পল্টনে মালিকদের বৈঠক শেষে এই ঘোষনা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী দুপুর আড়াইটা থেকে বরিশাল থেকে অভ্যন্তরিন নৌ রুটের লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীবাহী নৌ পরিবহন সংস্থা জাপ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান রিন্টু। এছাড়াও চুক্তি ভঙ্গ করে যেসব শ্রমিকরা যাত্রী এবং মালিকদের জিম্মি করে আন্দোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। যাত্রীবাহী, পন্য ও তেলবাহী নৌযান মালিক সমিতি পৃথকভাবে এই মামলা দায়ের করবেন বলে জানয়েছেন মালিক সমিতির ওই নেতা।
তিনি জানান, কথায় কথায় শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারনে নৌযান চলাচল ব্যহত হয়। পাশাপাশি যাত্রী এবং মালিকরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয় নৌযান মালিকদের। সর্বশেষ তারা ওয়াদা ভঙ্গ করে গত ২৩ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কর্মবিরতি পালন করে।
এজন্য যাত্রী ও পন্যবাহী পরিবহন মালিকরা নৌযান চলাচল বন্ধের ঘোষনা দেন। সে কারনে শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেও বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মত বন্ধ ছিলো সকল প্রকার নৌযান চলাচল।
এদিকে শ্রমিকদের জিম্মিদশা থেকে রক্ষা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় রাজধানীর পল্টনে যাত্রীবাহী নৌ পরিবহন সংস্থা (যাপ) এর কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ-বীর বিক্রম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে পন্যবাহী কার্গো ও ট্যাংকার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় বলা হয় ২০১৬ সালে নৌযান শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হয়। সে সময় তারা ২০২১ সালের মধ্যে নতুন করে কোন দাবি তোলা এবং আন্দোলনে না যাওয়ার বিষয়ে লিখিত অঙ্গীকার করেছিলো। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ না হতেই পুনরায় তারা আন্দোলনে নামে। এটা মালিকদের সাথে এক প্রকার প্রতারনা। তাই আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পবিত্র হজ্ব এর যাত্রী এবং অন্যান্য যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোন শ্রমিক না এলেও আমরা আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুপুর ২টা থেকে যাত্রী ও মালবাহি নৌযান চলাচলের ঘোষনা দিয়েছি। অভ্যন্তরিন রুটের পাশাপাশি দুরপাল্লার রুটেও নিয়ম অনুযায়ী লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে বরিশাল নদী বন্দরে দেখাগেছে, মালিক সমিতির ঘোষনার ৩০ মিনিটের মাথায় যাত্রীবাহী এবং পন্যবাহী নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রার অপেক্ষায় নদী বন্দরে বার্দিং করা ৪টি লঞ্চে যাত্রী উঠতে শুরু করেছে। তবে যাত্রীদের চাপ কম রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. কবির হোসেন বলেন, মালিকদের সিদ্ধান্তের কারনে বুধবার রাতে বরিশাল থেকে ২টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এর একটি কীর্তনখোলা-১০ ও অপরটি ফারহান-৮। এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটিমাত্র লঞ্চ বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালে এসে পৌছেছে। এটি হলো এমভি টিপু-৭।
তিনি বলেন, ভোর ৬টা থেকে অভ্যন্তরিন রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। কিন্তু মালিকদের ঘোষনার কারনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোন লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। এর ফলে ভোলা, মেহেন্দিগঞ্জ রুটের যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোর্ড অথবা ট্রলার যোগে নদী পারাপার করতে দেখা গেছে। তবে লঞ্চ চলাচলের ঘোষনার পর দুপুর আড়াইটা থেকে বরিশাল নদী বন্দর থেকে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১১ দফা দাবীতে মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে বরিশাল-ঢাকা সহ সারা দেশে নৌযান শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করে। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতি চলছিলো। এর ১৬ ঘন্টা পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদেয় শ্রমিকরা। সে অনুযায়ী বরিশাল থেকে অভ্যন্তরিন রুট গুলোতে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। কিন্তুলঞ্চ মালিকরা তাদের সিদ্ধান্তে বরিশাল-ঢাকা সহ দুরপাল্লার রুটে যাত্রী ও পন্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলো।