কুয়াকাটা সৈকত সুরক্ষা বাধেঁ অনিয়ম ও দুর্নীতি কুয়াকাটা সৈকত সুরক্ষা বাধেঁ অনিয়ম ও দুর্নীতি - ajkerparibartan.com
কুয়াকাটা সৈকত সুরক্ষা বাধেঁ অনিয়ম ও দুর্নীতি

3:24 pm , July 23, 2019

.এম মিজানুর রহমান বুলেট, কুয়াকাটা প্রতিবেদক ॥ কুয়াকাটা সৈকত ভাঙ্গনরোধে পাউবো’র অর্থায়নে জিও ব্যাগ দিয়ে সুরক্ষা বাধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জিও টিউব ও ব্যাগে ২শ’ নম্বর সিপি বালু ভরে সৈকত রক্ষা বাধ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেখানে দেয়া হচ্ছে সৈকতের লোকাল বালু। এমন অনিয়ম জনসম্মুখে হলেও পাউবো কর্মকর্তারা ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তরিগড়ি করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি দিনে ও রাতের আধারে সমুদ্রের বালু দিয়ে সুরক্ষা বাধের কাজ চালিয়ে আসলেও পাউবো কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে সৈকত প্রেমীরা হতাশ হয়েছেন। সৈকত সুরক্ষার পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও যেমন খুশি তেমন কাজ করছে। এলোমেলো ভাবে জিও টিউব বসানোর কারনে সৈকতের সৌন্দর্য হারিয়ে গিয়ে ভূতুরে সৈকতের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। জিও ব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বি.জে. জিও টেক্্রটাইল লিমিটেড কোম্পানী এ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এমন অনিয়ম করলেও দেখার কেউ নেই। পাউবো কলাপাড়া নির্বাহী কার্যালয় সুত্রে জানিয়েছে,সমুদ্রে সৈকত ভাঙ্গনরোধে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫৬০ মিটার দৈর্ঘ্য মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের জন্য ১৫ এপ্রিল কার্য্যাদেশ দেওয়া হয় বি.জে. জিও টেক্্রটাইল লিমিটেডকে। যা চলতি সালের ৩০ জুন শেষ হবার কথা ছিল। সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকার পিকনিক স্পট থেকে শুরু করে কুয়াকাটা দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার জিও ব্যাগে এ মেরিন ড্রাইভ রাস্তা তৈরীর কাজ চলছে। এ রাস্তায় ৫৬টি জিও টিউব ও ৮হাজার পিচ জিও বস্তা দিয়ে নির্মান করা হবে। প্রতিটি জিও টিউবের দৈর্ঘ্য হবে ৩০ মিটার এবং প্রস্থ হবে ৪ মিটার। প্রতিটি জিও বস্তার সাইজ হবে পিপি সাইজ। প্রতিটি জিও টিউবের রিভার সাইডে দুটি করে জিও বস্তা ২.৭৪ মিটার প্রস্থ এবং কান্টি সাইডে দুটি করে জিও বস্তা ২.৭৪ মিটার উচু ব্যাগ দিয়ে এ মেরিন ড্রাইভ রাস্তা বা সৈকত সুরক্ষা বাধ নির্মান করতে হবে এমন নির্দেশনা কোটেশনে রয়েছে। সরেজমিনে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করা থেকে এ পর্যন্ত ৫৬ টি জিও টিউবের অর্ধেক জিও টিউবও তৈরী করতে পারেনি। যেসব টিউব তৈরী করা হয়েছে বালু বের হয়ে যাওয়ার কারনে অধিকাংশ টিউবই নাজুক হয়ে গেছে। ৮ হাজার জিও ব্যাগের মধ্যে অর্ধেকের বেশি জিও বস্তা তৈরী করলেও লোকাল বালু ভরার কারনে বস্তা থেকে বালু বের হয়ে গেছে এমনটাই দেখা গেছে। কুয়াকাটা পৌরসভার কাউন্সিলর তোফায়েল আহম্মেদ তপু বলেন, এ পর্যন্ত যে কাজ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাতে ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। অথচ নির্ধারিত সময় পেরিয়ে অতিরিক্ত আরো প্রায় ১মাস শেষ হতে চলেছে। পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর চৌকিদার অভিযোগ করেন, দিনে ও রাতের আধারে সৈকতের বালু দিয়ে জিও টিউব এবং জিও ব্যাগ ভরা হচ্ছে। তারা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে পাউবো কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এ বালু ভরা হচ্ছে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন তাকে জানিয়েছেন। ট্যুরিজম ব্যবসায়ী ও সংগীত শিল্পী জনি আলমগীর বলেন, সৌন্দর্য বিহীন এমন সুরক্ষা বাধে তিনি অশাহত হয়েছেন। পর্যটক ও স্থানীয়রা এমন সুরক্ষাবাধ আশা করেনি। কুয়াকাটা পৌর সভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মোঃ শাহ আলম হাওলাদার অভিযোগ করেন, বেরিবাধের সাথে গর্ত করে মোটা বালুর পরিবর্তে জিও টিউবে লোকাল বালু ভরা হচ্ছে স্থানীয়দের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুই দফায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি আরো অভিযোগ করেন এমন অনিয়মের বিষয় পাউবো কলাপাড়া প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জানালে সঠিক ভাবে কাজ হচ্ছে বলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তারা। এসব বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বি.জে. জিও টেক্সটাইল লিমিটেড কোম্পানীর প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, তার প্রতিষ্ঠান দুবলার চরের পাশাপাশি দেশের একাধিক ভাঙ্গণকবলিত এলাকায় কাজ করছেন। এ কাজ করার দক্ষ কোন প্রতিষ্ঠান নেই। তাদের প্রতিষ্ঠান এই কাজে দক্ষতা রয়েছে তাই পাউবো তাদের এক প্রকার এ কাজ করতে বাধ্য করেছেন। মোটা বালুর পরিবর্তে সমুদ্রের বালু দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন বালুর ট্রাক আসতে দেরী হলে এমন হচ্ছে হয়তো। এ বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের উপ-সহকারি প্রকৌশলী সৈয়দ তারিকুল রহমান লোকাল বালু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন, জিও টিউবে পাইপ দিয়ে বালু ভরার সময় গর্ত থেকে ৩০ভাগ লোকাল বালু গেলেও তা পানির সাথে নেমে যাচ্ছে। তারিকুল আরও বলেন, ওই প্রকল্প এলাকায় কাজের সকল উপকরণ মজুদ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বর্ষার আগে এ কাজ সম্পন্ন হবে সে বিষয়ে প্রতিনিয়ত তদারকিসহ তাগিদ দেয়া হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো.ওলিউজ্জামান বলেন, লোকাল বালু দিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যদি লোকাল বালু দিয়ে কাজ করে থাকে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT