বড়মাছুয়া-রায়েন্দা খেয়া পারাপারে যাত্রী প্রতি ৫ টাকার ভাড়া ৫৫ টাকা আদায় বড়মাছুয়া-রায়েন্দা খেয়া পারাপারে যাত্রী প্রতি ৫ টাকার ভাড়া ৫৫ টাকা আদায় - ajkerparibartan.com
বড়মাছুয়া-রায়েন্দা খেয়া পারাপারে যাত্রী প্রতি ৫ টাকার ভাড়া ৫৫ টাকা আদায়

3:28 pm , July 21, 2019

শাকিল আহমেদ, মঠবাড়িয়া ॥ উপকূলীয় মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া ও শরণখোলার রায়েন্দার সীমানায় বলেশ্বর নদীর আন্তঃবিভাগীয় খেয়াঘাটে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে নির্ধারিত টোলের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইজাদারের বিরুদ্ধে। ক্ষমতার দাপটে সংশ্লিষ্ট ইজারাদার অবৈধভাবে ঘাটটি সাব লীজ দিয়ে ১০/১২ গুণ অতিরিক্ত টোল আদায় করছে। অতিরিক্ত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে সাব লীজ গ্রহণকারী ও তাদের লোকজন যাত্রীদের ভয়ভীতি, নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি ও অশালীন ব্যবহার করছে। এমনকি যাত্রীদের হাতে থাকা ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের পণ্য বা মালামাল পারাপারের জন্য ৫০/৭০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অবৈধভাবে খেয়াঘাট ইজারাদার সাব-লীজ দিয়ে সরকার নির্ধারিত টোলের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার ঘটনায় ওই খেয়ায় চলাচলকারী দুই জেলার যাত্রী সাধারণের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভূক্তভোগীরা এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করে কোন সাড়া তো মিলছেই না বরং এদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়েই চলছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ফলে স্থানীয় খেয়া পারাপারকারী যাত্রীরা সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় হতে বাংলা ১৪২৬ সালের জন্য বড়মাছুয়া আন্তঃবিভাগীয় খেয়া ঘাটটি ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯শ ৪৮ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে উপজেলার বড়মাছুয়া ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কাইয়ুম হাওলাদার ইজারা বন্দোবস্থ পায়। ওই ঘাট ইজারা নিয়েই ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ও স্থানীয় এক প্রভাশালী নেতার নির্দেশে বিধি বহির্ভূতভাবে ইজারাদার কাইয়ুম আইনের প্রতি বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে স্থানীয় একটি চক্রের কাছে অবৈধভাবে ঘাটটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সাব লীজ দেন। সম্প্রতি বড়মাছুয়া খেয়া ঘাটে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, খেয়া ঘাট পূণঃ ইজারা বা সাব লীজ দেয়ার নিয়ম না থাকলেও পিরোজপুর-বাগেরহাটের দুই জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ বড়মাছুয়া খেয়াঘাটটি স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ফায়ারম্যান সামসুল হক মৃধা, শরণখোলার তৌহিদুল ইসলাম (ডিলার), আবদুল কাদের ও বড়মাছুয়ার মৎস্য আড়ৎদার ফারুক তালুকদার ঘাট ইজারাদার ইউপি সদস্য কাইয়ুমের কাছ থেকে ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সাব লিজ নেয়। সরেজমিনে ঘাটে যাত্রী সাধারণ, বিভিন্ন যানবাহন ও মালামাল পারাপারের সরকার অনুমোদিত টোল রেট চার্ট সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে সহজে দর্শনীয় জায়গায় নোটিশ বোর্ড আকারে টানানোর বিধান থাকলেও দু’পারের কোথাও রেট চার্ট টাঙ্গানো হয়নি। এছাড়াও যাত্রী পারাপারের জন্য ইজারাদারের নিজস্ব ঘাট থাকার বিধান থাকলেও যাত্রীদের চলাচলের ঘাট না থাকায় বিআইডব্লিউটি এর সরকারী টার্মিনাল ব্যবহার করতে বাধ্য করছে যাত্রীদের। আর এ কারণে যাত্রীদের অতিরিক্ত ৫ টাকা টার্মিনালের জন্য গুনতে হচ্ছে।
লঞ্চ টার্মিনালে খেয়ার জন্য অপেক্ষামান উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মোজাম্মেল হক (৭০) বলেন, তিনি প্রায়ই এই খেয়া পার হয়ে শরণখোলা আত্মীয়ের বাড়িতে আসা যাওয়া করেন। তাকে টার্মিনাল ভাড়া ৫ টাকা ও খেয়া ভাড়া ৫০ করে মোট ৫৫ টাকা দিতে হয়। এর কম দিতে চাইলে ওরা অশালীন ব্যবহার করে।
শরণখোলার বাসিন্দা ও মঠবাড়িয়া পৌর শহরের ঐতিহ্যবাহী কে, এম, লতীফ ইনস্টিটিউশনের ইংরেজী বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক আয়শা খানম রোজি জানান, আমি মাছুয়া-রায়েন্দা খেয়া পার হয়ে নিয়মিত বাড়িতে আসা যাওয়া করি। এছাড়া বড় মাছুয়া স্টীমার ঘাটের যাত্রীসহ দুই বিভাগের জন সাধারণের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই খেয়াঘাটটি দ্বিগুনেরও বেশী টাকায় সাব-লীজ নিয়ে জনগনের ওপর স্টীম রোলার চালাচ্ছে। সন্ধ্যা নেমে এলে এর অত্যাচারের মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে যায়। এছাড়াও যাত্রীদের হাতে থাকা ২/৩ কেজি ওজনের একটি বৈয়াম বা ব্যাগের জন্যও যাত্রীদের কাছ থেকে আরও অতিরিক্ত ৩০/৪০টাকা আদায় করছে। তিনি খেয়াঘাটের জুলুম বন্ধে সরকারী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যপারে সাব-লীজ গ্রহণকারী ফায়ারম্যান শামসুল হক সাব-লীজ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তিনি ইজারাদারের সাথে শেয়ার আছে বলে দাবী করেন।
এ ব্যপারে ঘাট ইজারাদার কাইয়ুম হাওলাদার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শীঘ্রই দুই পাড়ে যাত্রী ও পণ্য পারাপারের রেট চার্ট টানানো হবে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন আহম্দে বলেন-ওই ঘাটের ইজারাদারদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত টোলের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার নির্ধারিত টোল রেট চার্ট টানানো হবে। যাতে পরাপারকারী যাত্রীদের অতিরিক্ত টোল দিতে না হয়।
খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ও আন্তঃবিভাগীয় ফেরি ইজারা কমিটির আহবায়ক সুবাস চন্দ্র সাহা জানান, সরকার অনুমোদিত টোল রেট চার্ট না টানিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় দন্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

https://youtube.com/mubinmuyein

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT