3:03 pm , July 21, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শিক্ষা নীতির তোয়াক্কা না করেই নগরীতে চলছে শিক্ষকদের প্রকাশ্য কোচিং বানিজ্য। এ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিষেধাজ্ঞাও। মুখে অস্বীকার করলেও গোপনে বাসায় চলছে কোচিংবাজ শিক্ষকদের রমরমা বানিজ্য। এমনই এক প্রমান মিলেছে নগরীর পুলিশ লাইন রোডে। সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের গনিত শিক্ষক ফারজানা আক্তার ঝুমা নিজ ঘরেই কোচিং বানিজ্য করাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। এদিকে নিষেধাজ্ঞার পরেও নিজ ঘরে কোচিং বানিজ্য’র বিষয়টি হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর সাইদুর রহমান মজুমদার। তার মতে অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং অসাধু শিক্ষকের অতি লোভ শিক্ষা নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব অসাধু শিক্ষকদের প্রতিরোধ করে শিক্ষা নীতির বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। গতকাল রোববার নগরীর পুলিশ লাইন রোডস্থ শহীদুল ইসলাম সন্স কমপ্লেক্স এর তৃতীয় তলায় দেখা যায়, সেখানকার বাসিন্দা সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ফারজানা আক্তার ঝুমা কোচিং বানিজ্য করছে। নিজ ঘরের মধ্যেই তিনি কোচিং সেন্টার খুলে সেখানে মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থীকে অংক শেখাচ্ছেন। সাংবাদিক দেখামাত্রই শুরু হয় তার দৌড়ঝাপ।
আলাপকালে শিক্ষক ফারজানা আক্তার ঝুমা বলেন, আমি মডেল স্কুলের কোন শিক্ষার্থীদের পড়াই না। অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাচ্ছি। তাও তাদের অভিভাবকদের অনুরোধে। তবে মুহুর্তের মধ্যেই ধরা পড়ে যায় শিক্ষক ফারজানা আক্তার ঝুমার মিথ্যাচার। কোচিং সেন্টারের মধ্যে দেখা যায় এক ছাত্রী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ড্রেস পড়ে কোচিং করছে। অপর এক অভিভাবক বলে ফেলেন তার সন্তান মডেল স্কুলে পড়ে। এর পর শুরু হয় মিডিয়া ম্যানেজ প্রক্রিয়া।
ফারজানা আক্তার ঝুমা প্রথমে মুঠোফোনে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ধরিয়ে দেন সোহেল ফরাজী নামের ব্যক্তিকে। সোহেল ফরাজী নিজেকে ঝুমার স্বামী এবং ভোলা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী পরিচয় দেন। তিনি এ নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, মাত্র ক’দিন হয় তার স্ত্রী কোচিং শুরু করেছেন। তাও অভিভাবকদের অনুরোধে। তবে এর পর থেকে আর কোচিং করাবেন না বলে চেপে যাওয়ার অনুরোধ জানান সোহেল ফরাজী।
এর কিছুক্ষন পরেই সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল আসে একজন পুলিশ কর্মকর্তার। তিনিও বিষয়টি চেপে যাওয়ার কথা বলেন। এর পর ফারজানা আক্তার ঝুমা মুঠোফোনে ধরিয়ে দেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নেতাকে। তিনি ওই শিক্ষককে নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য বলেন। শত চেষ্টার পরেও ম্যানেজ করতে না পেরে সাংবাদিকদের অর্থের প্রলোভন দেখান।
শুধুমাত্র মাত্র ফারজানা আক্তার ঝুমাই নন, তার মত এমন একাধিক অসাধু শিক্ষক রয়েছেন যারা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোচিং বানিজ্যের নামে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। সরকার নতুন শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ণ করলেও সে দিকেও গুরুত্ব নেই ঝুমার মত অসাধু শিক্ষকদের। অথচ এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে এগিয়ে আসছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা জেলা প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর সাইদুল রহমান মজুমদার বলেন, অন্য কলেজে কি হচ্ছে সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। তবে আমি যোগদানের পর থেকেই মডেল স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকদের কোচিং নিষিদ্ধ করেছি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সকল শিক্ষকদের কোচিং বা প্রাইভেট না পড়ানোর জন্য নোটিশ প্রদান করেছি। শিক্ষকরা সবাই বলছে তারা কেউ কোচিং করাচ্ছে না। অথচ অস্বীকার করেও শিক্ষক ফারজানা আক্তার কোচিং বানিজ্য করাচ্ছেন এটা দুঃখ জনক।
তিনি বলেন, শিক্ষা নীতির আলোকে কোচিং এর বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এর পরেও শিক্ষকরা সেটা মানছে না। তবে কোচিং বানিজ্য বন্ধে আমার একার উদ্যোগে কাজ হবে না। এজন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তাই কোচিং বানিজ্য বন্ধে জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। পাশাপাশি শিক্ষক ফারজানা আক্তার ঝুমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও বলেন তিনি।